রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে অপমান করলেন কি প্রদ্যুত ?

Khabare Pratibad
4 Min Read

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে অপমান করলেন কি প্রদ্যুত ?

৪১ লক্ষ রাজ্য বাসীর অভিভাবক তথা মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী কে পায়ের উপর পা তুলে রাজকীয় কায়দায় সন্মান জ্ঞাপনের সাক্ষী হল ত্রিপুরার জাতি জনজাতি সর্ব স্তরের মানুষ। একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় টিকে থাকা বিজেপি সরকার আর সেই দলেরই মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মানিক সাহা কে নিতান্তই যেন নিরুপায় এবং কৃতজ্ঞ মনে হচ্ছিলো রাজ্যের স্বঘোষিত রাজা তথা বুবাগ্রার সামনে।
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর সাথে উনার বাস ভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে মিলিত হতে গিয়ে একখানা ছবি তুলে সেটি আবার নিজের সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন মথার সুপ্রিমো প্রদ্যুত বিক্রম মানিক্য । আর সেই ছবি কে ঘিরেই দর্শক দের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্ন।
প্রথমত , একজন মুখ্যমন্ত্রী কোনো একটি রাজ্যের প্রথম অভিভাবক। সে উনি যেই দলেরই হন না কেন। রাজ্যের পরিচালন ক্ষমতা উনার হাতে ন্যস্ত এবং সাংবিধানিক নিয়ম মেনে ভোটার দের মত প্রদানের মধ্যে দিয়েই উনি নির্বাচিত। সেই অর্থে উনার স্থান এবং সম্মান শীর্ষ স্তরে।
এমন একজন ব্যক্তির সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎকারে প্রদ্যুত বাবু যেতেই পারেন। কিন্তু উনার সামনে পায়ের উপর পা তুলে রাজার মতো বসে আবার সেটা ছবি তুলে পোস্ট করে কোন রাজকীয় ভাব প্রকাশ করতে চাইলেন তিনি ? তাও আবার স্বঘোষিত রাজা। যাকে ককবরক ভাষায় জনজাতি অংশের মানুষ জন বুবাগ্রা বলে সম্বোধন করেন। প্রত্যেকেই আমরা অবগত যে রাজন্য শাসন এই রাজ্যে বহু কাল আগেই সমাপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা প্রত্যেকে সাংবিধানিক নিয়মে সমান। সেক্ষেত্রে কেউ রাজা ও নন, প্রজা ও নন। সেই জায়গায় প্রদ্যুত বাবু নিজেকে রাজ পরিবারের সদস্য ও বর্তমান রাজা বলে জাহির করতে কোথাও যেন কারপন্য করেন না।
ছবিতে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা , যিনি একজন শিক্ষিত সজ্জন ব্যক্তি বলে সবার কাছেই পরিচিত উনার হাভ ভাব আর ভঙ্গিমা দেখলেই বোঝা যায় উনি সামনে বসা ব্যক্তি যিনি নাকি একটা সময় এই মুখ্যমন্ত্রী এবং উনার দলের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, বাঙ্গালী বিদ্বেষ ছড়িয়ে জনজাতি দের নিজের আয়ত্বে এনে ভোটের লড়াইয়ে বাজীমাৎ করেছিলেন সেই প্রদ্যুত বাবু কে কতটা সন্মান ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন। অন্যদিকে প্রদ্যুত মানিক্যের সেই রাজা রাজা ভাব যেন কিছুতেই উনার সঙ্গ ছাড়ছে না। নুন্যতম যে শিষ্টাচার থাকার প্রয়োজন সেটাও যেন দেখা গেল না প্রদুত বাবুর মধ্যে।
এবার এই চিত্র নিয়ে কিছুটা বিতর্ক শুরু হতেই নেটিজেন্দের মধ্যে থেকে অনেকের দাবী, প্রদ্যুত মানিক্যের কাছে কিছুটা নত হয়েই থাকতে চাইছে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য বিজেপি। উনার সাথে তালে গোলে অমিল হলেই হাত ফসকে বেড়িয়ে যেতে পারে পাহাড়ের ভোট। এদিকে ২০২৩ এই তিপ্রা মথা পাহাড়ে যে পরিমাণ দাপট দেখিয়েছে , তাতে করে আগামী ২০২৮ এর বিধানসভা ভোটে বিজেপির একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা তো বহুদুর মথা ছাড়া ক্ষমতায় আসাই দুস্কর ব্যপার হয়ে দাড়াতে পারে। এই ভয় থেকেই হয়তো কিছুতে রয়ে সয়ে বুবাগ্রার সাথে কিছুটা উনার কায়দা তেই সৌজন্য সাক্ষাৎ কার সারলেন মুখ্যমন্ত্রী।
সারমর্ম, বিজেপি ত্রিপুরায় টিকে থাকার ক্ষেত্রে এখন পুরোপুরি ভাবে প্রদ্যুত মানিক্যের তিপ্রা মথার কে লাঠি বানিয়ে তাতেই ভর করতে পারে। নাহলে পাহাড় এর ভোটের পাশাপাশি রাজ্যের ক্ষমতা থেকেও হাত ধুইয়ে বসতে হবে। তাই হয়তো মুখ্যমন্ত্রীর মত একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের সামনে পায়ের উপর পা তুলে বসা স্বঘোষিত সুশিক্ষিত রাজা তথা রাজ পুত্তুরের কাছে একটা সাধারণ বিষয় মাত্র।
কিন্তু রাজ্যের মানুষ কি আদৌ বুঝতে পারছেন ? এটা শুধু মাত্র একটা ছবি নয়। এটা ত্রিপুরার রাজনৈতিক ভবিষ্যতে দুই ব্যক্তির বাস্তবিক অবস্থানের একটি ঝলক মাত্র। সময়ে সামলে না উঠতে পারলে এই ফল ভুগতে হবে গোটা রাজ্যের মানুষ কে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *