Umananda bhairav temple: বিশ্বের একমাত্র নদের উপর গড়ে উঠা সেই দ্বিপ, দেবাদিদেব মহাদেব যেখানে সাধনা করতেন

Khabare Pratibad
5 Min Read

Umananda bhairav temple

চারিদিকে যতদূর চোখ যায় শুধুই জল আর জল। মাঝখানে ঠায় দাঁড়িয়ে এক সুউচ্চ পাহাড়। এককথায় একটি সুদৃশ্যমাণ দ্বিপ। আর সেই দ্বিপে বিরাজমান এক বহু পুরনো মন্দির। যার নাম উমানন্দ ভৈরব মন্দির।

মন্দিরের অবস্থানঃ

গৌহাটি শহরের উত্তর প্রান্তে বড়ুয়া সউক স্থিত ব্রহ্মপুত্র নদের উপর এই দ্বিপের অবস্থান যাকে আবার উমানন্দ দ্বিপ ও বলে। কারো কারো কাছে আবার এই দ্বিপ ময়ূর দ্বিপ নামেও পরিচিত। সেই দ্বিপেই বিরাজ করছেন উমানন্দ ভৈরব তথা দেবাদিদেব মহাদেবের এক অবতার।
গৌহাটির পর্যটন তালিকায় প্রসিদ্ধ শক্তি পিঠ কামরূপ কামাখ্যর পরেই নাম রয়েছে এই ভৈরব মন্দিরের। উল্লেখ্য, ৫১ টি শক্তি পিঠের প্রত্যেকটির সাথেই একটি করে ভৈরব মন্দির অবস্থান করে। যেমন ত্রিপুরার উদয়পুরে মাতা ত্রিপুরা সুন্দরীর মন্দিরের কাছেই এক পুরনো ভৈরব মন্দির রয়েছে। ঠিক তেমন ভাবেই সমস্ত শক্তি পিঠের সাথেই এমন একটি করে ভৈরব মন্দির থাকে। আর কামাখ্যা মায়ের সাথে সেই ভৈরব হলেন উমানন্দ ভৈরব বাবা।

মন্দিরের নির্মাণঃ

এই মন্দিরের ইতিহাস বহু পুরনো। মর্তে যখন দেব দেবী গন এসেছিলেন তখন কার ঘটনা বলেও মান্যতা দেন অনেকেই। দেবাদিদেব মহাদেব ও মাতা পার্বতীর সাথেও এই মন্দিরের বহু কাহিনী জড়িয়ে আছে বলে জানা যায়।
তবে তার আগে জানতে হবে কবে কিভাবে এই মন্দির এখানে নির্মিত হয়। তার আগে জানা দরকার এই দ্বিপে যে পাহাড় রয়েছে তার কি নাম। এই পাহাড় কে ভস্মাচল পর্বত ও বলা হয়। রাজা গদাধর সিংহের আদেশে ১৬৯৪ সালে নাকি প্রথম এই মন্দির নির্মাণ করা হয়। পরে ১৮৬৭ সালে এই প্রবল ভূমিকম্পে গদাধর নির্মিত মন্দির টি ভেঙ্গে যায়। পরে মন্দির টিকে পুনঃ নির্মাণ করা হয়।
কালিকা পুরান অনুসারে, এই পাহাড়ে বসে ধ্যান করতেন মহাদেব। এমনকি এখানেই দেবী পার্বতী কে জ্ঞান প্রদান ও করতেন তিনি। একদা একই পাহাড়ে ধ্যান মগ্ন থাকাকালীন কাম দেব এসে উপস্থিত হন এবং মহাদেবের ধ্যানে বাঁধা সৃষ্টি করেন। আর তখন মহাদেবের ক্রোধের আগুনে পুরে ছাই তথা ভস্ম হয়ে যান কামদেব। তবে থেকেই এই পাহাড়ের নাম হয়েছে ভস্মাচল পাহাড়।

উমানন্দ নামের তাৎপর্যঃ

এই মন্দিরের প্রধান দেবতা হলেন উমানন্দ ভৈরব। উমানন্দ শব্দ টি দুটি শব্দ তথা “উমা” এবং “আনন্দ” থেকে উঠে এসেছে। উমা হচ্ছেন দেবী পার্বতী। বলা হয় এই সুদৃশ্য দ্বিপে মহাদেব পার্বতী তথা উমা কে নিয়ে আসতেন কারণ উমা এই দ্বিপে এসে প্রসন্ন হয়ে যেতেন। আনন্দ পেতেন এই দ্বিপে তিনি। আর তাই এই নাম হয়েছে উমানন্দ। প্রতি অমাবস্যা তিথিতে এখানে মহা সমারোহে পূজার্চনা হয়। বিশেষ করে শিব চতুর্দশী তে উমানন্দ ভৈরব মন্দিরে তিল ফেলার ও জায়গা থাকে না। ভক্তরা ভক্তি ভরে পুজো দিতে আসেন এই মন্দিরে। যদি কখনো অমাবস্যা তিথি সোম বাড়ে পরে থাকে তবে তাঁকে আরও শুভ বলেও বিবেচনা করা হয়।

উমানন্দ ভৈরবের ইতিহাসঃ

Umananda bhairav temple

গুপ্ত যুগে প্রথম এখানে মন্দির নির্মিত হয়েছে বলে কিছু তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। বেশ কিছু শিলা এবং ভগ্ন পাথর ও পাওয়া গেছে। গণেশের শিলা কাঁটা মূর্তি সহ , মহিলাদের চিত্রাঙ্কিত মূর্তি ও পাওয়া গেছে। তাছাড়া অহম রাজবংশীয় শাসক রাজা গদাধরের নির্দেশেই প্রথম এই মন্দির নির্মিত হয় ১৬৯৪ সালে । ১৮৯৭ সালের একটি প্রবল ভূমিকম্পে পুরনো মন্দির টি ধ্বংস হয়ে গেলে তৎকালে এক প্রভাবশালী ধনী বানিজ্যিক ব্যক্তি মন্দিরের পুনঃ নির্মাণ করেন।

মন্দিরের গঠনঃ

ব্রহ্মপুত্র নদের এপাশ থেকে লঞ্জে করে পর্যটকদের নিয়ে যাওয়া হয় উমানন্দ দ্বীপে। সেখানে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ টি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে হয় উমানন্দ মূল মন্দিরে প্রবেশ করার জন্যে। কামাখ্যা দেবীর মন্দিরের মতোই উমানন্দ ভৈরব মন্দিরে ও রয়েছে গর্ভ গৃহ। তার আগে মন্দির এর মূল ফটকে ভেতরে প্রবেশ করেই ডান দিকে চোখে পরে গণেশের মন্দির । তার পর এগিয়ে গেলে আরও দু তিনটি মন্দির চোখে পরে। যেখানে পুরোহিত মশাই বসে নিত্য পুজো করেন। ভগবান শিব ছাড়াও এখানে আরও প্রায় ১০টি দেব দেবীর মূর্তি রয়েছে বলে জানা যায়।
ভৈরব এর মূল মন্দির টি সুউচ্চ গম্বোজ আকৃতির। মন্দিরটি উত্তরাধিকার সুত্রে ও কিছু শিলা কাঁটা মূর্তি পেয়েছে যা স্থানীয় কারিগরদেরই কারুকার্য ছিল বলে জানা যায়।

গৌহাটি স্থিত অপূর্ব পর্যটন স্থল গুলির মধ্যে একটি এই উমানন্দ ভৈরব মন্দির। যেখানকার সৌন্দয প্রত্যেক পর্যটক কে নিজের দিকে আকর্ষিত করে।

Share This Article
Leave a Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *