Kasba Kali Temple & its history
ত্রিপুরা ভারতের অন্যতম রাজন্য শাসিত প্রদেশ গুলোর মধ্যে একটি ছিল। যার আয়তন দেশ বিভাজনের আগে ছিল বিশাল। বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা থেকে ব্রাহ্মন বাড়িয়া জুড়ে ছিল এর বিস্তার। এই গোটা অংশই তখন রাজ রাজাদের দ্বারা শাসিত ছিল।
ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছিল বিশাল। পরপর বহু রাজা ত্রিপুরার বুকে নিজ আধিপত্য স্থাপন করে গেছেন। তৎকালে তারা নিজেদের বিলাস ভোগের জন্যে যেমন একদিকে বৃহৎ অট্টালিকা, রাজপ্রাসাদ, জল মহল ইত্যাদি তৈরি করে গেছেন তেমনি অপরদিকে ঈশ্বরের আরাধনার জন্যেও তাদের স্থাপত্বের অবদান কম নয়। আজো সেই রাজন্য আমলের মন্দির গুলিতে দেব দেবীর পূজো হয়। তাদের মধ্যেই একটি জাগ্রত মন্দির কশবেশ্বরী কালি মায়ের মন্দির।
বর্তমানে সিপাহিজলা জেলাধীন বিশালগড় মহকুমার কমলাসাগরের সীমান্ত বর্তী এলাকায় এই মন্দিরটি অবস্থিত। সুউচ্চ পাহাড়ে নির্মিত এই মন্দির যদিও পূর্বে এখানে ছিল না। বলা হয় এটি বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত ছিল উপার বাংলায়। কিন্তু পরবর্তী সময় রাজা মহারাজা রা এই মন্দির টি কে দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করতে এখানে স্থাপন করেন।
মন্দিরের গঠন ও ইতিহাস
মহারাজা ধন্য মানিক্য এই মন্দির স্থাপন করেছিলেন আনুমানিক ১৫ শতকের শেষের দিকে। মন্দিরটির সামনে একটি সুবিশাল হ্রদ ও নির্মাণ করেছিলেন মহারাজা ধন্য মানিক্য। বাস্তবে এই মন্দিরে যেই দেবীর মূর্তি রয়েছে তিনি দশভুজা দেবী দুর্গার রূপ। বেলেপাথর দিয়ে মূর্তিটি তৈরি করা হয়। আর তার সাথে দেবীর পদতলে রয়েছেন মহাদেবের ভাস্কর্য। যা দেবীকে উভয় কালি ও দুর্গার রূপ প্রদান করে। তবে কালি রূপেই পূজিত হন দেবী।
কথিত আছে ১৫ শতকের সময় মহারাজা কল্যাণ মানিক্য প্রথম এই মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তী সময় ধন্য মানিক্যের হাত ধরে ১৫ শতকের শেষের দিকে মন্দির নির্মাণের কাজ শেষ হয়। পূর্বে কল্যাণ মানিক্য এই মন্দিরে দুর্গা রূপে মাকে আরাধনা করলেও সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই মন্দির কশবেশ্বরি কালি মন্দির নামে খ্যাতি লাভ করে।
ত্রিপুরা রাজ্য কে বহিরাগত শত্রুদের হাত থেকে সুরক্ষিত করতে মহারাজা কল্যাণ মানিক্য তৎকালে বিশাল প্রাচীর অর্থাৎ দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন তখন। সে সময় এই স্থানের নাম কসবা ছিল না। এই স্থানের নাম ছিল কৈলার গড় । বাংলার তৎকালীন শাসক সৌরজা কে যুদ্ধে পরাজিত করার পর মহারাজা কল্যাণ মানিক্য রাজ্যকে আরও সুরক্ষিত করতে যে দুর্গ নির্মাণ করেন তার পাশেই গড়ে উঠে এই কসবা শহর।
আরও বলা হয়, বাংলার নবাব হোসেন শাহ কসবা আক্রমণ করলে ধন্য মানিক্যের সৈন্যের কাছে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যায়।
মন্দিরের পুরোহিত বলেন ,মহারাজা কল্যাণ মানিক্য স্বপ্নাদেশ পেয়ে এখানে মায়ের মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
পূজো ও মেলা
সাধারণত সারাবছরই মন্দিরে মায়ের পূজার্চনা চলে। প্রাত্যহিক পূজো তো হয়েই থাকে। তার পাশাপাশি বছরের বিশেষ দিন গুলিতে ভক্তদের ভিড় বাড়লে পূজার্চনার সময়সীমা ও বৃদ্ধি পায়। তবে বছরের কিছু বিশেষ সময়ে এখানে বিরাট মেলার ও আয়োজন হয়ে থাকে। বৈশাখ , ভাদ্র ও মাঘ মাসে এখানে বিশাল আকারের মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। তবে ভাদ্র মাসের অমাবস্যা তিথিতে সবচাইতে বড় মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। কেননা এই সময়ে দীপাবলি উৎসবের কারণে মন্দিরে বিশাল উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে।
কমলাসাগর দীঘি
মহারাজা ধন্য মানিক্য কসবা কালি মন্দিরের একেবারে সামনে এক সুবিশাল দীঘি খনন করিয়েছিলেন । যার নাম তিনি নিজের স্ত্রী কমলা দেবীর নামানুযায়ী রেখেছিলেন কমলাসাগর। দর্শনার্থীরা এই দীঘিতে এসে স্নান করেন। মনোবাসনা পূর্তির জন্যে নিজের ইচ্ছে জানান মায়ের কাছে। বিশ্বাস করা হয় এই দীঘিতে স্নান করে মন থেকে কিছু চাইলে মা কশবেশ্বরি কাউকে নিরাশ করেন না।
তাছাড়া সীমান্ত বর্তী এলাকা হওয়ায় দীঘির অপর প্রান্তেই দেখা যায় কাঁটা তারের বেরা। যার অপর পাশেই রয়েছে বাংলাদেশ। এই বর্ডার এলাকায় সীমান্ত হাট ও গড়ে উঠেছে। যদিও করোনা কালীন পরিস্থিতিতে তা বন্ধ হয়ে গেলে পুনরায় আর চালু করা হয়নি।
কশবেশ্বরি কালি মায়ের মন্দির ত্রিপুরার অন্যতম একটি জাগ্রত তীর্থস্থল এবং রোজ এখানে শত শত ভক্তপ্রান বাঙ্গালী ও পর্যটকেরা আসেন। মায়ের কাছে পূজো দেন। ত্রিপুরার রাজন্য ঐতিহ্যের কিছুটা হলেও স্মৃতি বিজরিত আছে এই স্থানে। যা প্রতিটা ত্রিপুরা বাসীর কাছেই এক শান্তির জায়গা।