Tripura to Delhi relly Tipra Motha : ত্রিপুরার স্বশাসিত জনজাতি গোষ্ঠী তিপ্রাসারা ফের একবার তাঁদের জাতিগত অধিকার ও নিরাপত্তার দাবিতে সরব হয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে অব্যাহত অনুপ্রবেশের কারণে দীর্ঘদিন ধরে নিজেদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছে, তা প্রতিহত করতেই এবার সরাসরি দিল্লির পথে পদযাত্রায় নামলেন তিপ্রা মথার সদস্যরা।
শনিবার, আগরতলার উত্তর গেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছে এই পদযাত্রার। এতে অংশ নিয়েছেন তিপ্রা মথার কর্মী ও নেতারা। দলটির তরফে জানানো হয়েছে, এই যাত্রা শুধুমাত্র একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি নয়, বরং এটি তিপ্রাসাদের অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামেরই এক বিস্তৃত রূপ।
তিপ্রা মথার নেতা ডেবিট মোরাসিং স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ শুধু ত্রিপুরার সমস্যা নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। কিন্তু রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বহু বছর ধরে আমরা এই সমস্যার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছি, আন্দোলন করছি, ডেপুটেশন দিচ্ছি—কিন্তু কোনও স্থায়ী সমাধান আসেনি।
ডেবিট মোরাসিং আরও অভিযোগ করেন, এই অনুপ্রবেশের কারণে তিপ্রাসারা তাঁদের জমি, কাজ ও সাংবিধানিক অধিকার হারাচ্ছেন। ত্রিপুরায় জনসংখ্যার ভারসাম্য পরিবর্তিত হয়েছে, যার ফলে স্থানীয় আদিবাসীরা নিজ রাজ্যেই সংখ্যালঘুতে পরিণত হচ্ছেন। “আমাদের নিজস্ব পরিচয় আজ হুমকির মুখে। আমাদের বাধ্য হয়ে নিজেদের ভূমিতেই বারবার নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হচ্ছে,”—বলেছেন তিনি।
এই পদক্ষেপে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছেন তিপ্রা মথার প্রতিষ্ঠাতা প্রদ্যুত বিক্রম মানিক্য। তিনি বলেন, “ডেবিট নিজ সিদ্ধান্তে এই উদ্যোগ নিয়েছেন, এবং আমি একজন তিপ্রাসা হিসেবে তাঁর এই পদক্ষেপকে সম্মান জানাই। আজকের দিনে কেউ যদি জাতিগত সমস্যা তুলে ধরেন, তাহলে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে তাঁকে সমর্থন করা উচিত।
তিপ্রাসাদের দাবি মূলত তিনটি বড় বিষয়কে ঘিরে—
বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে রোধ করা
আদিবাসীদের সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণ ও সুরক্ষা
স্বশাসিত এলাকার উন্নয়ন ও তিপ্রাসাদের জন্য পৃথক প্রশাসনিক কাঠামোর দাবি (Greater Tipraland)
তিপ্রা মথার এই পদযাত্রা শুধু একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি একটি সাংস্কৃতিক ও জাতিগত আত্মপরিচয়ের আন্দোলন। তারা মনে করছেন, শুধুমাত্র ত্রিপুরা নয়—এই সংকটের সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপই পারে স্থায়ী সমাধান দিতে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই পদযাত্রা আগামিদিনে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতিতে একটি বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ, তিপ্রাসা জনজাতির দাবিগুলি এখন কেবল ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তা এখন একটি বৃহত্তর জাতিগত ও আন্তর্জাতিক আলোচনার অংশ হয়ে উঠছে।