CPIM Boxanagar Joining : দেশজুড়ে ৯ই জুলাই ঘোষিত সাধারণ ধর্মঘটের সমর্থনে ত্রিপুরার সোনামুড়া শহরে আয়োজিত হয় এক বৃহৎ মিছিল ও মহকুমা ভিত্তিক প্রকাশ্য জনসভা। সিপিআইএম-এর ডাকে আয়োজিত এই কর্মসূচিকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল লক্ষণীয় উৎসাহ ও অংশগ্রহণ।
দুপুর ৩টায় শহরের বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয় সিপিআইএম-এর বিশাল মিছিল। লাল পতাকা হাতে নিয়ে শহরের রাস্তায় রাস্তায় স্লোগানে মুখর করে তোলে হাজার হাজার মানুষ। বিভিন্ন শ্রেণির শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক, ছাত্র-যুব, নারী—সবাই মিছিলে সামিল হন। রাস্তায় ভিজে যাওয়ার মতো বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত হয় একটি জাগ্রত প্রকাশ্য জনসভা।
এই জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিপিআইএম দলের রাজ্য সম্পাদক ও বিধানসভার বিরোধী দলনেতা জীতেন্দ্র চৌধুরী। তাঁর ভাষণে উঠে আসে দেশজুড়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতির বিরুদ্ধে গভীর অসন্তোষ। তিনি বলেন
“এই ধর্মঘট একটি সাধারণ ধর্মঘট নয়, এটি দেশের শ্রমজীবী, গরিব, এবং নির্যাতিত জনগণের পক্ষে একটি ঐতিহাসিক বার্তা। বিজেপি সরকার কর্পোরেট ও বৃহৎ পুঁজি পতিদের স্বার্থে সমস্ত রাষ্ট্রীয় নীতি পরিচালিত করছে। কৃষক, ক্ষেতমজুর, শ্রমিক, যুবসমাজ সকলেই নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। রুটি-রুজির অধিকার রক্ষার লড়াইকে এখন আরও জোরদার করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, “দেশে যেভাবে ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা অত্যন্ত বিপজ্জনক। এই স্বৈরাচারী, জনবিরোধী সরকারের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিজেপি ছেড়ে সিপিআইএমে যোগ ৭৮ জনের
এই সভার একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত ছিল দলবদলের ঘোষণা। বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কুলুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্য সাহেনা খাতুন এবং যুবনেতা মিজান হোসেনের নেতৃত্বে মোট ১৯টি পরিবার, অর্থাৎ ৭৮ জন ভোটার আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপি ত্যাগ করে সিপিআইএম-এ যোগ দেন।
সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরী তাদের হাতে লাল পতাকা তুলে দিয়ে দলে স্বাগত জানান এবং বলেন, “এই দলত্যাগ শুধু একটি দল বদলের ঘটনা নয়, এটি জনগণের মনের পরিবর্তনের প্রতিফলন।
ত্রিপুরা রাজনীতির বাস্তবতা ও ভবিষ্যতের আহ্বান
ত্রিপুরার রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়েও জীতেন্দ্র চৌধুরী সরব হন। তিনি বলেন, “ত্রিপুরায় বর্তমানে সন্ত্রাস, দুর্নীতি, তোলাবাজি, নারী নির্যাতন এবং ভোট লুটের ঘটনা ক্রমবর্ধমান। আইনের শাসন ও গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে বৃহত্তর সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে হবে।
তিনি উপস্থিত জনতাকে আহ্বান জানান, “এই আন্দোলন কেবল ৯ জুলাইয়ের ধর্মঘটে সীমাবদ্ধ নয়। ভবিষ্যতে জনস্বার্থের ইস্যুগুলিকে সামনে রেখে পথে নামতে হবে। বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান, কৃষকের ন্যায্য দাম, শ্রমিকের মজুরি, নারীর নিরাপত্তা—এই সব বিষয়কে কেন্দ্র করে বৃহত্তর জনআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
শত শত মানুষের অংশগ্রহণ
সিপিআইএম সোনামুড়া মহকুমা কমিটির সম্পাদক শ্যামল চক্রবর্তীও সমাবেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা ও বৃষ্টিপাত সত্ত্বেও, সমাবেশে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দীর্ঘদিন পর জীতেন্দ্র চৌধুরীর সোনামুড়া সফর ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ছিল এক বিশেষ উদ্দীপনা। অনেকেই বলেন, “এই আগমন আবার নতুন করে আশার আলো দেখাল।