Tripura Kharchi Puja 2025 : ত্রিপুরার অন্যতম বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব খার্চি পুজো ও মেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা হল বৃহস্পতিবার। পুরাতন আগরতলায় চতুর্দশ দেবতার মন্দির প্রাঙ্গণে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মানিক সাহা পুজো দিয়ে এবং প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে এই ৭ দিনব্যাপী উৎসবের উদ্বোধন করেন।

এবারের খার্চি পুজো বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে এর থিমের জন্য। ‘অপারেশান সিঁদুর’ থিমে সাজানো হয়েছে গোটা মেলা প্রাঙ্গণ, যা ইতিমধ্যেই দর্শনার্থীদের কৌতূহল ও উৎসাহের কেন্দ্রে রয়েছে।
পুজো উদ্বোধন অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, এলাকার বিধায়ক রতন চক্রবর্তী, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলা শাসক ডঃ বিশাল কুমার, পুলিশ সুপার কিরণ কুমার কে সহ প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা।
অনুষ্ঠানের সূচনায় আয়োজিত হয় এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আগরতলার স্থানীয় শিল্পীদের পরিবেশনায় মঞ্চ মাতিয়ে ওঠে। উপস্থিত অতিথিরা ত্রিপুরার সংস্কৃতির বহিঃপ্রকাশে মুগ্ধ হন।
উৎসবের সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা যাতে বজায় থাকে, তার জন্য প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ সতর্কতা। মন্দির চত্বর ও মেলা প্রাঙ্গণে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী, বসানো হয়েছে নজরদারি ক্যামেরা।
ত্রিপুরার জনমানসে গভীরভাবে প্রোথিত এই খার্চি পুজো প্রতিবারই ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক এক মিলনক্ষেত্র হয়ে ওঠে। এবারের থিম ও আয়োজন রাজ্যবাসীর কাছে এক ভিন্ন অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে বলেই মনে করছেন আয়োজকরা।
ত্রিপুরার অন্যতম প্রাচীন ও জনপ্রিয় ধর্মীয় উৎসব হল খারচি পুজো। প্রতিবছর আশার মাসে (জুলাই মাসের দিকে), ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা সংলগ্ন পুরাতন আগরতলায় চতুর্দশ দেবতার মন্দিরে এই পুজো আয়োজিত হয়। এটি মূলত চতুর্দশ দেবতাকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠিত একটি হিন্দু ধর্মীয় আচার, যেখানে দেবতাদের “পাপমুক্ত” করার জন্য বিশেষ রীতিতে পুজো ও অনুষ্ঠান পালন করা হয়।
খারচি” শব্দটি এসেছে “খার” থেকে, যার অর্থ পাপ বা অপবিত্রতা। এই পুজোর মূল উদ্দেশ্য হল দেবতাদের গঙ্গাজলে স্নান করিয়ে পবিত্র করা এবং অপবিত্রতা দূর করা। এটি মূলত রাজবংশীয় সংস্কৃতির একটি অংশ, যার সঙ্গে কোকবরক জনজাতির ঐতিহ্যও গভীরভাবে জড়িত।
খারচি পুজোর সময় মন্দির প্রাঙ্গণে এক বিশাল মেলা বসে, যেখানে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও হস্তশিল্পীরা তাঁদের পসরা সাজিয়ে বসেন। পাশাপাশি আয়োজন হয় নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লোকগান, নৃত্য, নাটক ইত্যাদির মাধ্যমে ত্রিপুরার সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়।
এই পুজোয় শুধুমাত্র হিন্দু নয়, নানা ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এটি ত্রিপুরার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও মিলনমেলার প্রতীক হয়ে উঠেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে থিম ভিত্তিক আয়োজন, আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় খারচি পুজো আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।