Border Gol Chakkar Jitendra
সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করেছে রাজ্য সরকার, বুল ডোজার চালিয়ে আবার গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাড়ি ঘর
দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর যাবত যে ভিটে মাটি তে বসতি গড়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করছিলেন , তা এক নিমেষেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে গেল বুল ডোজারের ধাক্কায়। বর্ডার গোল চক্কর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে ক্ষতি গ্রস্থ রা অবশেষে বিকল্প বাসস্থানের দাবীতে পথে নেমে টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করতে বাধ্য হন গত পরশু। সুপ্রিম কোর্টের বুল ডোজার নীতি নিয়ে দেওয়া রায় কে কি এভাবেই বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে দিল রাজ্য সরকার ? সেই প্রশ্নই উঠছে আবারো বিরোধী দের পক্ষ থেকে।
বর্ডার গোল চক্কর এলাকায় পুরো নিগম কর্তৃক বুল ডোজার চালিয়ে ক্রমপর্যায়ে বেশ কিছু বাড়ি ঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার বিষয় নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী সহ দলের বিধায়ক মণ্ডলী ও অন্যান্যরা। আজ সকালে উক্ত এলাকায় ক্ষতি গ্রস্থ পরিবার গুলোর সাথে দেখা করতে যান তারা। সেখানে গিয়েই বিস্তারিত খতিয়ে দেখে রাজ্য সরকারের এহেন পদক্ষেপ কে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বিরোধী দলনেতা। বিরোধী হওয়া মানেই যে সব কিছুর বিরোধিতা কড়া এমনটা নয়। উন্নয়নের বিপক্ষে নন রাজ্য বামফ্রন্ট। কিন্তু , উন্নয়নের পরিপ্রেক্ষিতে গৃহীত উদ্যোগ আদৌ নিয়ম কানুন মেনে হচ্ছে কি না সেটা খতিয়ে দেখা জরুরী । আর যদি সুপ্রিম কোর্টের রায় কে তুয়াক্কা না করেই বুল ডোজার নীতি প্রয়োগ করে আবারো বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেওয়া হয় নির্মম ভাবে তবে তা নিশ্চিত ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য ঘটনা।
উল্লেখ্য , কিছুদিন পূর্বে বুল ডোজার নীতি কে চ্যেলেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা কড়া হয়। যার সুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট এই নীতি প্রত্যাহারের রায় দেয় এবং অতি শীঘ্রই গোটা দেশের প্রতিটি রাজ্যে এই নির্দেশিকা লাগু হবে বলে জানানো হয়। সেই রায় এর ১ সপ্তাহ ও অতিক্রান্ত হয়নি। তার আগেই আবারো বুল ডোজার চালিয়ে বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার ঘটনায় রীতিমতো স্তব্ধ ত্রিপুরা রাজ্যের রাজনৈতিক বিস্লেসক সহকারে বুদ্ধিজীবীরা ও ।
সুপ্রিম কোর্ট তার রায়ে জানায়, বাসস্থানের অধিকার যে কোনো ব্যক্তির মৌলিক অধিকার। দেশের বেশ কিছু রাজ্যে প্রশাসনের মর্জি মাফিক বুল ডোজার চালিয়ে বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেওয়ার প্রচলন দেখা গেছে। যা কিনা কোনো ভাবেই আইনত বিধান নয়। প্রশাসন এক্ষেত্রে বিচারকের ভূমিকা পালন করতে পারে না। সুতরাং যখন তখন বাড়ি ঘর ভেঙ্গে দেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা মানতে হবে প্রশাসন কে ও।
যেমন –
১। কোনো অভিযোগের ভিত্তিতে বাড়ি ভাঙ্গা যাবে না।
২।আগে লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে
৩। নোটিশে বাড়ি ভাঙ্গার কারণ উল্লেখ থাকতে হবে
৪। আদালতের নির্দেশ সহ বিস্তারিত নোটিশ পোর্টালে আপলোড করতে হবে
৫। বাড়ি ভাঙ্গার নির্দেশের বিরুদ্ধে আবেদন করার সময় দিতে হবে
৬। নোটিশ পাঠানোর পর ১৫ দিন সময় দিতে হবে
৭। তার পরেও আরও ১ সপ্তাহ সময় দেওয়া হবে
৮। আবেদন হলে তা শোনার চূড়ান্ত নির্দেশ পাশ হবে
৯। নির্মাণ বেআইনি না হলে কর্তৃপক্ষ কে জবাব্ দিতে হবে
১০। সময় সীমা শেষ হলে বিষয়টি জেলা শাসক কে জানানো হবে
১১। শেষ নির্দেশের পর বাড়ির মালিক কে আর ১৫ দিনের সময় দিতে হবে নির্মাণ সরানোর জন্য
১২। এর পরেই নির্মাণ ভাঙতে পারবে প্রশাসন
১৩। রাস্তা, ফুটপাত কিংবা নদীর ধারে কাঠামো হলে উপরোক্ত নির্দেশ লাগু হবে না।
এবার প্রশ্ন হচ্ছে আগরতলায় দক্ষিণ রামনগর গোল চক্কর এলাকায় যে বাড়ি ঘর গুলো ডোজার দিয়ে ভাঙ্গা হয়েছে সেখানে বসবাস রত পরিবার গুলো স্থায়ী ভাবে এবং বৈধ ভাবে বহু বছর যাবত বসবাস করছেন। রাস্তা সংস্কারের জন্যেই তাদের বাড়ি ঘর ভাঙ্গা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তাদের সবাই কে কি সুপ্রিম কোর্টের নিরদেশানুজায়ি আগাম নোটিশ দেওয়া হয়েছিল ? কিংবা তারা কি সেই নোটিশ প্রাপ্তির পর পাল্টা আবেদনের সুযোগ পেয়েছিলেন ? নোটিশ প্রাপ্তির পর কি সময় দেওয়া হয়েছিল তাদের নির্মাণ সরানোর জন্য ?
গতকাল অনেকেই দাবী করেছেন য তাদের নোটিশ না দিয়েই উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন পুরো নিগম। এক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বিপাকে পড়তে পারেন আধিকারিকেরা। যদিও স্থানীয়রা আইনি পদক্ষেপ নেবার কথা বলেননি। তাদের একটাই দাবী , বিকল্প বাসস্থানের ব্যবস্থা কড়া। যদি রাজ্য সরকার সেটাও না করে তবে তাদের কাছে সম্পূর্ণ ভাবে আইনের পথ অবলম্বন করার রাস্তা খোলা রয়েছে। আর এমনটা হলে উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশের মতোই এ রাজ্যের বিজেপি সরকার কেও বিপাকে পড়তে হতে পারে বুল ডোজার নীতি অবলম্বনের জন্য।