Viramma Kali Temple
উত্তর-পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্য ত্রিপুরায় প্রচুর পর্যটন স্থল এবং মন্দির, মসজিদ, গির্জা ইত্যাদির মতো আধ্যাত্মিক স্থান রয়েছে। প্রতিটি পর্যটন স্থলে তার নিজস্ব কিছু ইতিহাস, নিজস্ব কিছু গল্প রয়েছে যা আজো অনেকের কাছেই অজানা। কিছু গল্প এখনও ভাঁজ এর ভেতরেই রয়ে গেছে, সঠিক ভাবে উন্মোচন করা হয় নি। এমনই একটি রহস্যে ঘেরা পর্যটন স্থল ভীরাম্মা কালি মন্দির। রাজধানী আগরতলা থেকে কিছুটা দূরে এর অবস্থান। যেখানে মন্দিরের প্রাচীর জুড়ে আবদ্ধ রহস্য গুলোকে উন্মুক্ত করতে রোজ বহু পর্যটকের আনাগোনা দেখা যায়। এই মন্দিরটি নবনির্মিত মন্দির । যার নাম দেওয়া হয়েছে ভীরাম্মা কালী মন্দির। মন্দিরটি দক্ষিণ ভারতীয় সংস্কৃতির আদলে নির্মিত যা এই মন্দিরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আর এটিই আমাদের মতো পর্যটকদের এই মন্দিরের দিকে আকর্ষণ করে। মন্দিরটি মেলাঘরের রাঙ্গামুড়ায় অবস্থিত। অবস্থান রাজধানী আগরতলা থেকে ঠিক 52 কিলোমিটার দূরে।
মন্দিরের গঠন:
2015 সালে একজন বিখ্যাত প্রকৌশলী ত্রিপুরায় ভীরাম্মা দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। তাই তিনি এই মন্দিরটি নির্মাণ করেন। তার নাম টি. ভীরামুনি। তিনি দক্ষিণ ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ুর বাসিন্দা। তৎকালে একটি গুজব ছিল যে ভীরাম্মা কালী দেবীর মূর্তিটি, ত্রিপুরার রাজন্য আমলে তৈরি জল প্রাসাদ নীরমহল এর মেরামতির সময় সেখানেই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এই মন্দিরের পুরোহিত তা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। তিনি সত্যতা প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে দেবীর মূর্তিটি তামিলনাড়ু থেকে ভীরাম্মা কালী মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা টি ভিরামুনি এখানে নিয়ে এসেছেন। মন্দির টি সম্পূর্ণ ভাবে দক্ষিন ভারতীয় শিল্প ও সংস্কৃতির আদলে নির্মাণ করা হয়েছে। মন্দিরের দেওয়ালে দক্ষিন ভারতীয় সংস্কৃতি অনুযায়ী নানা দেব দেবীর মূর্তি খোদাই করা হয়েছে। এছাড়া ও তামিলনাডু তে পূজিত দেব দেবীদের একত্র করে এই মন্দিরে শতাধিক দেব দেবীর মূর্তি স্থাপিত করা হয়েছে। যা এই মন্দির টিকে সম্পূর্ণ ভাবে রাজ্যের অন্য যে কোনো মন্দির থেকে আলাদা করে।
ভীরাম্মা মন্দিরের ইতিহাস:
মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে একটু নাড়াচাড়া করলে জানা যায়, মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে টি ভিরামুনি এই মন্দির স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন মেলাঘরে। একদিন টি. ভীরামুনি ত্রিপুরার প্রাচীনতম জলপ্রাসাদ নীরমহল পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন, যা রাজন্য আমলে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। প্রাসাদের ভিতরে কিছু নির্মাণ কাজ করার জন্য তামিলনাডু থেকে এখানে এসেছিলেন তিনি। ত্রিপুরায় থাকার সময়, দেবী ভিরাম্মা তার স্বপ্নে আসেন এবং তাকে দেবী ভিরাম্মার একটি মন্দির স্থাপনের নির্দেশ দেন। তিনি আরও বলেছেন যে, 5000 বছর আগে ত্রিপুরায় দেবী ভীরাম্মার উপস্থিতি ছিল এবং পূজা ও করা হতো। তারপর থেকে, টি, ভীরামুনি এখানে এই এত সুন্দর মন্দিরটি গঠনের কাজ শুরু করেন। মানুষের দৃঢ় বিশ্বাস যে দেবী ভীরাম্মা একজন জাগ্রত দেবী। তিনি তার ভক্তদের নিরাশ করেন না। তাই এই মন্দিরে ভীরাম্মা মায়ের উদ্দেশ্যে একটি ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করে মনের ইচ্ছে জানালে মা অবশই মনোবাঞ্ছা পূরণ করেন বলে বিশ্বাস করা হয়।
ভীরাম্মা মায়ের মন্দিরের রহস্য:
মন্দিরের চারপাশে দেবদেবীর অনেক ভাস্কর্য রয়েছে । প্রতিটি ভাস্কর্যের আলাদা নাম, ভিন্ন বিশ্বাস রয়েছে। তবে সবচেয়ে মর্মান্তিক ভাস্কর্যটি হল দেবী পিরিয়াছি কালীর। এই মূর্তির বোতামে একটি নোটিশ বোর্ড রয়েছে যাতে লেখা আছে “এই দেবীর ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ”। এই পিরিয়াছি কালীর রূপ ভয়ানক। এই মূর্তির ছবি তুললে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে বলেও ধারণা। সে কথা মাথায় রেখেই এখানে এই সতর্কতা লিখিত রূপে দেওয়া হয়েছে । এই মন্দিরের পুরোহিত আরও বলেছেন যে, অনেক পর্যটক এই ভাস্কর্যটির ছবি তোলার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু এর মধ্যেই তাদের ক্যামেরা বা মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়।সে কারণে পর্যটকেরা এই দেবীর ছবি তোলেন না।
তবে, স্থানীয় লোকজন অনেকবার এমন ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে বলে জানান তারা।
এই সবগুলি তথ্য এই পবিত্র স্থানটির রহস্য সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেয় ।
2015 সাল থেকে ভীরাম্মা কালী দেবীর পূজা করা হচ্ছে এখানে। যদিও এটি জনসমক্ষে এসেছে অনেক দিন বাদে। তবে দিনে দিনে এখানে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে এখানে খুব জাঁকজমক করে পূজার্চনার এবং যজ্ঞের আয়োজন করা হয়ে থাকে।
এছাড়া ও সাড়া বছর এখানে দর্শনার্থীরা এই অনবদ্য মন্দির দর্শন করতে ছুটে আসেন। মূল সড়ক পথ থেকে খানিকটা ভেতরে হওয়াতে যদিও যাতায়াতে কিছুটা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, কিন্তু অবশেষে মন্দির চত্বরে প্রবেশ করলে মনে হয় যেন সকল পরিশ্রম স্বার্থক।