Zamidaar House-Bishalgarh

উত্তর পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা, একটি বিস্ময়ে ভরা রাজ্য। ত্রিপুরার ইতিহাস সঠিকভাবে প্রকাশ করার জন্য এখনও অনেক সময় বাকি। বহু জায়গা আজো চেপে আছে মাটির তলায়। বহু ইতিহাস এখনো খুঁড়ে তোলা বাকি। তার মধ্যেও যেগুলি উদ্ধার করা গেছে তাতে সর্বশেষ এবং সবচেয়ে বিস্ময়কর স্থানগুলির মধ্যে একটি হল 100 বছরের পুরনো এক জমিদার বাড়ি।

Zamidaar House-Bishalgarh

রাজধানী আগরতলা থেকে 25 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত 100 বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়ি । সিপাহীজলা জেলার অন্তর্গত দুর্গানগর এর কৃষ্ণ কিশোর নগরে এর অবস্থান। এই প্রাচীনতম জমিদার বাড়িটি বর্তমানে বহু পর্যটকদের বেশ নজর কাড়ছে। অনেক পর্যটককেই দেখা যায় অবসর সময়ে এই জায়গাটিতে ভ্রমন করতে যেতে ।

শত বছরের পুরনো এই জমিদার বাড়িটিতে এখন জমিদারের বংশধরদের বসবাস। আজ থেকে প্রায় ৬০ বছর আগে জমিদার মারা যান। এরপর থেকে তার সম্পত্তি অক্ষত রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা। জমিদার রা ছিলেন দুই ভাই, শ্যামানন্দ ও শ্যামাচরণ। ১০০ বছর পূর্বে এই জমিদার বাড়িতে প্রতিদিন মা দশভুজার পূজা হতো। সেই পুজো এখন আর হয়না। তবে বর্তমানে এই বাড়িতে একটি দুর্গা মন্দির রয়েছে যার নাম মহামায়া মন্দির। প্রতিদিন না হলেও এই জমিদার বাড়িতে আশ্বিন মাসে দুর্গাপূজার সময় বছরে একবার মা দুর্গার পূজা করা হয়।

এখানে মূলত জমিদারের দুটি বাড়ি দেখা যায়। দুটি বাড়িতেই বিশাল বড় দুই পুকুর রয়েছে। রাতের আঁধারে কোনো হরর ফিল্মের সেট মনে হবে নিশ্চিত। এ ছাড়া ভূমিদস্যুদের ভয়ে তৎকালে জমিদারে বাড়িঘরগুলো বিশাল প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। বাড়ির সীমানা গম্বুজ দিয়ে তৈরি করা ছিল। এই গম্বুজগুলো আজও আছে। কথিত আছে, সেকালে এই গম্বুজের ভেতরে প্রদীপ জ্বালানো হতো। ছোট ছোট প্রদীপ জালানোর জন্যে কোটরের মতো নির্মিত আছে এই গম্বুজ গুলিতে, কাছে গেলে তা স্পষ্ট দেখা যায়।

Zamidaar House-Bishalgarh

এই বাড়িগুলির চারপাশে ঘুরতে ঘুরতে একটি অংশে 1345 ট্রিং বলে একটা লেখা খোদাই করা দেখতে পাওয়া যায়। অনুমান করা যায় যে এই জমিদার বাড়ি টি উল্লিখিত সময়ের কাছাকাছি নির্মিত হতে পারে।

কিন্তু এই ত্রিং শব্দের আভিধানিক অর্থ ঠিক কী?

অনুসন্ধান করে দেখা যায় যে ত্রিং শব্দটি ত্রিপুরাব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। ত্রিপুরাব্দ মানে ত্রিপুরার ক্যালেন্ডার। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, খ্রিস্টাব্দ প্রবর্তনের 590 বছর পরে, শকাব্দ প্রবর্তনের 512 বছর পরে এবং বঙ্গাব্দ প্রবর্তনের তিন বছর আগে, ত্রিপুরা ক্যালেন্ডার বা ত্রিপুরাব্দ, অর্থাৎ ত্রিং প্রবর্তিত হয়েছিল। আর তাই এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণের সময় তৎকালীন সন বোঝাতে ত্রিং শব্দটি খোদাই করা হয়েছিল। এছাড়াও সেই সময়ে জমিদারদের বাড়ির চারপাশে গম্বুজ তৈরি করা হয়েছিল। আজকের দিন দাঁড়িয়ে যেখানে রাজ্যের বহু ঐতিহাসিক স্থান মাটির তলায় চেপে গেছে কিংবা ধ্বসে পড়ে গেছে সেখানে এমন একটি দুর্দান্ত এবং সুন্দর ঐতিহাসিক বাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা বিরল। সুতরাং, এটি ত্রিপুরা এবং ত্রিপুরার জনগণের কাছে অনেক গুরুত্ব বহন করে। প্রায়শই এখানকার বাসিন্দা তথা জমিদারের পরিবারের লোকজনদের সাথে দেখা করতে ও জমিদার বাড়ির ইতিহাস জানতে বহু মানুষ ভিড় জমান।

Leave A Reply