Unity Promo Fest Tripura : প্রোমো ফেস্ট, ত্রিপুরা রাজ্যে নয়া সরকারের নয়া প্রয়াস। উদ্দেশ্য রাজ্যের ট্যুরিজম কে উন্নত করা এবং পর্যটন কেন্দ্র গুলিতে আরও বেশি বেশি পরিমাণে পর্যটক দের আনা। যাতে করে রাজ্যের পরিবহন থেকে শুরু করে ছোট বড় সব ধরণের ব্যবসায়ী দের উপার্জন বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এই প্রোমো ফেস্ট এর সাথে পর্যটন ক্ষেত্র গুলির উন্নীতকরনের আদৌ কোনো মিল আছে কিনা, তা বুঝেই উঠতে পারছেন না একটা অংশের ইন্টেলেকচুয়াল মানুষ।
২০২৩ সালে দ্বিতীয় দফায় রাজ্যে বিজেপি সরকার গঠিত হবার পর নয়া মন্ত্রীসভায় বিভিন্ন দপ্তরের মন্ত্রী দের অদল বদল হয়। তখন পর্যটন, পরিবহন ও খাদ্য দপ্তরের দায়িত্ব এসে পরে মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর কাঁধে। বিশেষ করে পর্যটন দপ্তর কে আরও উন্নত করতে উনি বিশেষ প্রয়াস চালাতে শুরু করেন। সে বছর থেকেই শুরু হয় “প্রোমো ফেস্ট” নামক একটি বিশেষ কর্মসূচী। যেখানে প্রতি বছর দেশের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী দের নিয়ে রাজ্যের উল্লেখ যোগ্য পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এতে করে তাদের মাধ্যমে রাজ্যের নাম বহিঃরাজ্যে ও পৌঁছে যাবে এটাই ছিল উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবায়িত হল কতটা এই উদ্দেশ্য তা অবশ্য আজো সঠিক ভাবে বলা যায়নি।
বিগত বছর এই প্রোমো ফেস্ট এর অঙ্গ হিসেবে রাজ্যের প্রসিদ্ধ পর্যটন কেন্দ্র যেমন ঊনকোটি, নারকেল কুঞ্জ , জম্পুই হিল , নীরমহলে বিশেষ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। এর পর রাজধানীর আস্তাবল ময়দানে দেশের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী “শ্রেয়া ঘোষাল” এর একটি কনসার্ট ও হয়। যেখানে হাজার হাজার শ্রোতারা তাদের প্রিয় শিল্পী কে এক নজর দেখতে ও তার গান শুনতে উপস্থিত হয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে উনি একজন কিংবদন্তী শিল্পী। ত্রিপুরা রাজ্যে তার আগমন বিশেষ ভাবে তাৎপর্য পূর্ণ। কিন্তু এতে পর্যটন বিভাগের কতটা উন্নতি সাধিত হল ? সেই হিসেব আজো পাওয়া যায়নি। ঐ কনসার্ট বাবদ কোটি কোটি টাকা খরচ করেছিল ত্রিপুরা পর্যটন দপ্তর। কিন্তু কত কোটি ? সেই তথ্য অব্দি প্রকাশ পায়নি। আরটিআই করাতে চাইলে দপ্তর সহযোগিতা করেনি।
এবছর আবারো ঘটা করে প্রোমো ফেস্ট আয়োজিত হচ্ছে। ৯ই নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে প্রোগ্রাম। প্রথম অনুষ্ঠান টি হয় নারকেল কুঞ্জে। আগামী ১৬ই নভেম্বর বিলোনিয়া তে আবারো আসছেন পলক মুচ্ছাল । আর আগামী ১২ই ডিসেম্বর আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দান ( আস্তাবল ময়দান) এ আসছেন “জুবিন নউটিয়াল” । আবারো মাঠ ভরা শ্রোতাদের মাঝে হাড়িয়ে যাবে কি এই প্রশ্ন ? এই প্রোমো ফেস্ট এর কারণে আদৌ কি লাভ হচ্ছে পর্যটন দপ্তরের ?
শোনা যাচ্ছে এবারের প্রোমো ফেস্ট বাবদ প্রায় ১২ কোটির ও বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে। এই পরিমাণ টাকা যদি রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্র গুলো কে উন্নত করতে কিংবা বেকার দের রোজগার প্রদান বাবদ নতুন নতুন সংস্থা নির্মাণের ক্ষেত্রে কাজে লাগানো হতো তবে কি স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের আর্থ সামাজিক চেহারার উন্নতি ঘটতো না ?
অনেকেরই প্রশ্ন, জনগণের ট্যাক্স এর টাকায় এধরণের মনোরঞ্জন কি আদৌ মানুষের প্রাথমিক চাহিদা ? কয়েক ঘণ্টার আনন্দ উপভোগ অবশ্যই কোনো বড় ধরণের অন্যায় নয় । কিন্তু এই অর্থ কি আদৌ সঠিক ভাবে সঠিক জায়গায় ব্যয় হচ্ছে ? তাছাড়া , যে শিল্পী দের দ্বারা রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রের প্রচার প্রসারের দাবী রাখছেন দপ্তরের মন্ত্রী তাদের কোনো সামাজিক মাধ্যমে ত্রিপুরা রাজ্যের কোনো পর্যটন ক্ষেত্রের প্রচার হতে দেখা যায়নি। এমনকি খোদ ত্রিপুরা ট্যুরিজম এর ব্র্যান্ড আম্বাসেটর সৌরভ গাঙ্গুলি কে সচরাচর ত্রিপুরায় আসতে কিংবা ত্রিপুরার পর্যটন নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়না।
তাহলে ত্রিপুরার জনগণের ট্যাক্স এর অর্থ ব্যয় করে বহিঃরাজ্যের শিল্পী দের কে এ রাজ্যে আনা এবং রাজ্যের অর্থ বহিঃরাজ্যে বিলিয়ে দেওয়ার ফলে এই রাজ্যের পর্যটন ক্ষেত্রের উন্নতি কিভাবে হচ্ছে ? স্থানীয় শিল্পীরা এ রাজ্যের মঞ্চে অপমানিত হন। মঞ্চ থেকে অর্ধেক গান গেয়ে নেমে যেতে হয় শিল্পীদের। ওদিকে বহিঃরাজ্যের শিল্পীদের বড়াই করে ডেকে এনে মনোরঞ্জন দেওয়া হয় রাজ্য বাসী কে। মানুষ কি আদৌ এই কয়েক মুহূর্তের আনন্দ চায় ? এসব করে যুব সমাজ কে কয়েক মুহূর্তের জন্যে আসল মোদ্দা থেকে সরিয়ে দেওয়া সহজ হলেও দিনশেষে চাকরি হীনতা, বেকারত্ব, রোজগার এর দুশ্চিন্তাই কি সব চাইতে বড় চিন্তার বিষয় নয় ? এই প্রশ্ন গুলোই আঁখেরে থেকে যাচ্ছে।
আর তাই প্রশ্ন উঠছে, ত্রিপুরা রাজ্যের মতো একটি ছোট্ট রাজ্য যেখানে আজো শিক্ষিত বেকারেরা চাকরীর আশায় ঘুম কামাই করে তাদের কথা না ভেবে এই প্রোমো ফেস্ট এর আয়োজনে কোটি কোটি টাকা বিলিয়ে দেওয়া কতটা “ সুশাসনের “ প্রমাণ বহন করে !



