খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Thursday, 27 November 2025 - 01:29 AM
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫ - ০১:২৯ পূর্বাহ্ণ

Sudip Roy Barman : ত্রিপুরায় প্রশাসনিক অব্যবস্থা ও শিক্ষার সংকটে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ

Sudip Roy Barman
1 minute read

Sudip Roy Barman : ত্রিপুরায় সরকারি চাকরির অচলাবস্থা, শিক্ষাক্ষেত্রের বেহাল দশা এবং প্রশাসনের দুর্নীতি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করলেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ। আগরতলায় কংগ্রেসের গণঅবস্থানে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে তিনি রাজ্য ও কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তাঁর অভিযোগ, “চাকরির নামে প্রতারণা, প্রশ্নপত্র ফাঁস, দুর্নীতি, কমিশনের রাজনীতি—এই সব মিলিয়ে রাজ্যের তরুণ প্রজন্ম আজ দিশেহারা হয়ে পড়েছে।”

বিধায়ক বলেন, “মিসড কলের চাকরি, বছরে ৫০ হাজার চাকরির প্রতিশ্রুতি—সবই আজ ভাঁওতা। সরকারি দপ্তরে হাজার হাজার পদ খালি থাকলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থবির। তিন-চার বছর কেটে যায় একটি পরীক্ষার ফল প্রকাশে, ততদিনে নতুন পদ সৃষ্টি হলেও নিয়োগের কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না।”
তিনি অভিযোগ করেন, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি চরমে। প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। “হেলথ ডিপার্টমেন্টে যুব কংগ্রেস দু’বার প্রমাণসহ অভিযোগ জানিয়েছে যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানে, কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা বা ইচ্ছা নেই,” বলেন তিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, “রাজ্যে তিন-তিনটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে যাচ্ছে সরকার। শিক্ষার মান রক্ষা নয়, মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কমিশন আদায়।”

তিনি বিশেষভাবে শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজের উদাহরণ টেনে বলেন, “প্রথম বর্ষেই অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে। কারণ ফ্যাকাল্টি নেই, অবকাঠামো নেই। অথচ অনুমোদন মিলেছে টাকা ও প্রভাবের জোরে। এটা রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য ভয়াবহ সংকেত।”

কংগ্রেস বিধায়ক রাজ্যের শিক্ষা কাঠামোর ভাঙন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্য, “আজ রাজ্যে ৩৪০টি স্কুলে মাত্র একজন শিক্ষক আছেন। স্কুল বন্ধ হচ্ছে একের পর এক। ছাত্রছাত্রীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত।

তিনি প্রশ্ন তোলেন, “একটি রাজ্যের উন্নয়ন নির্ভর করে তার শিক্ষার উপর। কিন্তু ত্রিপুরায় সেই শিক্ষার ভিত্তিই আজ নড়ে গেছে। সরকার কেবল সংখ্যা বাড়ানোর খেলায় মত্ত, গুণগত উন্নয়ন নিয়ে কোনো চিন্তা নেই।

আগরতলাকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তোলার দাবি নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিধায়ক। তিনি বলেন, “প্রচারে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে সামান্য বৃষ্টিতেই আগরতলা ডুবে যায়। যে জায়গাগুলো আগে জলমগ্ন হতো, আজও সেই চিত্র অপরিবর্তিত।”
তিনি যোগ করেন, “প্রকল্পের আসল উদ্দেশ্য উন্নয়ন নয়, কমিশন। সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য এখন কে কত টাকা পাবে, সেটা নিশ্চিত করা। সাধারণ মানুষ তার সুফল পাচ্ছে না।”

রাজ্যের বেকারত্ব সমস্যা নিয়েও তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন কংগ্রেস নেতা। তাঁর অভিযোগ, “সরকারি চাকরিতে নিয়োগ বন্ধ, বেসরকারি বিনিয়োগ নেই। তরুণরা বাধ্য হয়ে অন্য রাজ্যে কাজের খোঁজে পাড়ি দিচ্ছে। রাজ্যের যুবসমাজের স্বপ্ন আজ ভেঙে পড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশের অর্থনীতি আজ তলানিতে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ঋণের বোঝা আর আয়হীন মানুষের জীবন—সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ চরম কষ্টে। অথচ সরকার মূর্খতাপূর্ণ ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি করছে।”

সুদীপ রায় বর্মণ সতর্ক করে বলেন, “রাজ্যে মাদক ব্যবসা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। প্রশাসন চোখ বুজে আছে। যুব সমাজ নেশায় ডুবে যাচ্ছে, সমাজের নৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ছে। এটা শুধু অপরাধ নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।”

বক্তৃতায় জাতীয় রাজনীতিতেও তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “বিজেপি সরকার দেশের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করছে। স্বাধীনতা সংগ্রামে কংগ্রেসের ভূমিকা মুছে দিয়ে, আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার ভূমিকা বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। সত্য বিকৃত করে কখনও জাতি গঠন হয় না।”

তিনি বলেন, “১৯৪২ সালে ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের সময় কংগ্রেস নেতারা প্রাদেশিক সরকার থেকে পদত্যাগ করে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগ মিলিতভাবে প্রাদেশিক সরকার চালাতো। আজ সেই ইতিহাস উল্টে দেওয়া হচ্ছে।”

রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিধায়ক সতর্ক করেন, “যদি আবার সিপিআই(এম) ক্ষমতায় আসে, রাজ্যে ফের শুরু হবে খুন, ভয়ভীতি আর দমননীতি। আর বিজেপি ভয় আর বিভাজনের রাজনীতি করছে।”
তবে তিনি জানান, “কংগ্রেস শত্রুতার রাজনীতি করে না। আমাদের দরজা সব দলের কর্মী ও সমর্থকদের জন্য খোলা। আমরা ঐক্যের রাজনীতি করি, বিভাজনের নয়।”

শেষে সুদীপ রায় বর্মণ জনগণের উদ্দেশে আহ্বান জানান—“চুপ থাকা মানে অন্যায়ের সঙ্গী হওয়া। সময় এসেছে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অব্যবস্থা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াক। কংগ্রেস সবসময় মানুষের পাশে আছে, সত্যের পক্ষে লড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “আজ রাজ্যের মেধা, পরিশ্রম আর সততা অবমূল্যায়িত হচ্ছে। সরকারি চাকরিতে স্বচ্ছতা নেই, শিক্ষায় শৃঙ্খলা নেই, সমাজে নিরাপত্তা নেই। এই অবস্থায় গণআন্দোলনের মাধ্যমেই ন্যায়বিচার পুনরুদ্ধার করতে হবে।”

বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে প্রশাসনিক অদক্ষতা, দুর্নীতি এবং রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার ধ্বংস। একইসঙ্গে জাতীয় স্তরে ইতিহাস বিকৃতির রাজনীতি নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

For All Latest Updates

ভিডিও