বৃষ্টি স্নাত সকালে বামেদের মিছিলে প্রতিবাদী ঝড়
৩রা অক্টোবর, দেবিপক্ষের প্রথম সকালে রাজধানীর বৃষ্টি স্নাত পথে পায়ে পা মিলিয়ে প্রবল বারি ধারা কে উপেক্ষা করেই শাসক বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন শত শত বাম কর্মী। মিছিলে প্রথম সারির নেতৃত্বদের মধ্যে ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, পার্টির রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী। ছিলেন বামপন্থী আন্দোলনের নারী নেতৃবৃন্দ সহ শতাধিক যুবক যুবতীরা।
প্রথমে রাজধানী স্থিত রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে ওরিয়েন্ট চৌমুহনী, জ্যাকসন গেট, কামান চৌমুহনী এবং পোস্ট অফিস চৌমুহনি হয়ে প্যারাডাইস চৌমুহনীতে জমায়েতে মিলিত হয়। এরপর সেখানেই সর্ব সাধারণের উদ্দেশ্যে বার্তা রাখেন নেতৃত্বরা। এদিনের মিছিল ও জনসভার মূল এজেন্ডা ছিল নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা বিধান, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, গ্রাম ও শহরে পর্যাপ্ত কাজ ও খাদ্যের ব্যবস্থা করা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রানের ব্যবস্থা ও সরকারী চাকুরীতে শূন্য পদ পূরণ সহ সর্বক্ষেত্রে বিজেপি-আইপিএফটি- তিপরা মথা জোট সরকারের চরম ব্যর্থতার পূর্ণ বিবরন তুলে ধরা।
একদিকে যেখানে শাসক বিজেপি শিবির নিজেদের ডিফেন্ডিং মোড অন রাখতে কদিন বাদে বাদেই প্রেস মিট ডেকে বিরোধীদের দিকে তোপ দাগার চেষ্টা করছেন, সেখানেই উল্টো দিকে বিরোধীরাও ময়দানে নেমে যোগ্য জবাব দেওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অবশ্য, বিরোধী ও এক সময় শাসক ছিল , এটাও কিন্তু কঠোর সত্যি।
বুধবারেই বিজেপি মুখপাত্র সাংবাদিক সন্মেলন ডেকে বিরোধী দের করা সমস্ত অভিযোগ কে খণ্ডন করে বলেছিলেন রাজ্যের বেকারত্ব কিংবা আইনের শাসন সংক্রান্ত প্রশ্ন গুলো কেবলমাত্র বিরোধী দের বিভ্রান্তি ছড়ানোর প্রচেষ্টা। এদিকে রাত পোহাতেই বিক্ষোভের মেজাজে বামেরা আবারো একই ভাবে অভিযোগের পাহাড় তলে চেপে দিল বিজেপি শিবির কে।
এদিন এক পশলা বৃষ্টির মাঝেও দেখা গেল অসংখ্য জনতার ভিড়। হাতে ছাতা নিয়েই মিছিলে হাঁটলেন তারা। অবশেষে সেই ছাতা মাথায় দিয়েই শুনলেন নেতৃত্বদের বক্তব্য। এদিনের সভায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার নিজের সংক্ষিপ্ত ভাষণ রাখেন। শুরুতেই তিনি দল মত নির্বিশেষে সবার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন তুলেন , যে ৪ থেকে ৫ টি ইস্যু কে ঘিরে এদিনের এই সমাবেশ তাতে রাজ্যের মানুষের সরব দৃষ্টি আছে কিনা। দেখা যাচ্ছে ভোটের আবহে বিজেপি কার্যকর্তা দের দিয়ে বিরোধী সমর্থিত দের ভোট দানে বাঁধা, ভোট কেন্দ্রে যাওয়া থেকে তাদের বিরত রাখা, হামলা হুজ্জুতি করানো সবই হচ্ছে। কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে তারাই বলছেন, “আমরা কেন বিজেপি করছি ?” । তাদের এই প্রশ্ন উঠার কারণ তারা বিজেপি দলের হয়ে এতো কিছু করার পরেও তাদের জন্যে এই সরকার কিছুই করে নি। এটা তাদেরই মুখের বাণী।
মার্ক্সবাদী সমর্থক ছাড়াও যারা শ্রোতারা রয়েছেন তারাও এই বিষয় গুলি অনুধাবন করেছেন নিশ্চিত। যাদের দিয়ে রাজ্যে সন্ত্রাস কায়েম রাখা হচ্ছে তাদের হয়েই কথা বলছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। অপরাধীদের বিরুদ্ধে নেই পদক্ষেপ। মুখ্যমন্ত্রী কে ও শোনা যায়নি বলতে একটি কথা। নিজের পিঠের চামড়া বাচাবার চেষ্টায় আছেন মুখ্যমন্ত্রী ও দলের অন্য নেতা নেত্রীরাও। রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ অন্তরদহনে জ্বলছেন। মানুষ আজ অনুতপ্ত, অনুভব করছেন কি সর্বনাশ করেছেন নিজেদের। বিজেপি দলের বিছিয়ে দেওয়া সুযোগ সুবিধার জ্বালে আটকা পরে মানুষ নিজের প্রাপ্য টুকু ও আজ পাচ্ছেন না।
এভাবেই শাসক দল কে নিশানায় নেন আজ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার।
অন্যদিকে পার্টির রাজ্য সম্পাদক জিতেন্দ্র চৌধুরী ও নিজের বক্তব্যে রাজ্য বিজেপির শাসন কালে রাজ্য জুড়ে কি পরিমাণ অন্যায় অনিয়ম ও অবিচার চলছে তার ঠিকুজী কুষ্ঠী তুলে ধরলেন। নারীরা সুরক্ষিত নয় এ রাজ্যে। কারণ এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যা নয় তাই করে চলেছে। ভোট সন্ত্রাস যেন তাদের আমলে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিজের ত্রাস বিস্তার করছে। ভোটের জন্যে নমিনেশান দিতে দেওয়া হচ্ছে না। ভোট হলেও সেখানে জোর জুলুম করে ভোট চুরি হচ্ছে। অপরাধীদের হাত ধরে ত্রিপুরা রাজ্যের এই সরকার টিকে আছে। আইন শৃঙ্খলা , মানুষের নিরাপত্তা সব কিছুই তলানিতে। অর্থনীতি কে একেবারে হেলায় ফেলে নিজেদের ফায়দা লুটে নেওয়ার তাগিদে আছে স্বার্থান্বেষী সরকার। গণতন্ত্র নেই, বেকারত্ব বেড়ে চলেছে দিন কে দিন। এছাড়াও আরও অনেক ইস্যু তেই নিজেদের ক্ষোভ জাহির করলেন নেতৃত্বরা।