Pradyut Manikya Controversy : এবার প্রদ্যুত মানিক্যের বক্তব্যের তীব্র নিন্দা করলেন রাজপরিবারেরই বংশ ধর। প্রদ্যুত মানিক্যের নিজেকে আগরতলার মালিক বলে দাবী করা নিয়ে এবার সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ্যে বিরোধিতা করলেন রাজপরিবারেরই এক সদস্য। প্রদ্যুতের এই মন্তব্যে উনি মর্মাহত ।
প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দাঁড়িয়ে নিজেকে রাজা বলা এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বাধীন শহরের মালিক বলে নিজেকে দাবী করা কতটা যুক্তি যুক্ত সেই প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন খোদ তাদেরই পরিবারের একজন শিক্ষিত ও সচেতন সদস্য।
জ্যোতি প্রসাদ দেববর্মা। ত্রিপুরার এমবিবি ইউনিভার্সিটির এক্সাম কন্ট্রোলার জ্যোতি প্রসাদ দেববর্মা ত্রিপুরার মানিক্য বংশের বংশ ধর। প্রদ্যুত মানিক্য ও সেই একই বংশজ। কিন্তু দুজনের মতবাদে কতটা ফারাক সেটাই আজ তুলে ধরবো।
একদিকে প্রদ্যুত মানিক্য, যিনি নিজেকে এখনো বুবাগ্রা অর্থাৎ মহারাজা বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন এবং নিজেকে আগরতলার মালিক বলে দাবী করে থাকেন সেখানে মানিক্য বংশেরই আরেক সদস্য জ্যোতি প্রসাদ নিজেকে একজন ভারতীয় নাগরিক বলে দাবী করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এবং উনি প্রত্যাশা রাখেন যে প্রত্যেক নাগরিক বাঙালি, অবাঙ্গালী কিংবা জনজাতি এক স্বাধীন রাষ্ট্রের নাগরিক। কারণ এই দেশ এখন কোনো ধরণের রাজতন্ত্রের বশীভূত নয়। রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে বহু যুগ আগেই প্রজাতন্ত্রের উত্থান হয়েছে। যা সর্ব স্বীকৃত এবং এতে কোনো ধরণের বিতর্ক থাকে না।
প্রদ্যুত মানিক্যের করা বিতর্কিত মন্তব্য কে তীব্র ভাবে ধিক জানিয়ে নিজের সামাজিক মাধ্যমে জ্যোতি প্রসাদ বাবু একটি দীর্ঘ বক্তব্য রেখছেন । যেখানে প্রথমেই উনি নিজের বংশ পরিচয় লিখেছেন।
মহারাজা রাধা কিশোর মানিক্যের পিতা মহারাজা বীর চন্দ্র মানিক্য দেববর্মার বংশ ধর বিমল চন্দ্র দেববর্মা, প্রবীর চন্দ্র দেববর্মা , দেবশ্রী কুমার দেববর্মার প্রথম পুত্র জ্যোতি প্রসাদ দেববর্মা – নিজ সামাজিক মাধ্যমে এমনটাই নিজের বংশ পরিচয় প্রকাশ করেছেন উনি।
তিনি প্রদ্যুত বিক্রম মানিক্যের করা উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন, যে প্রত্যেক নাগরিক এর মতোই উনিও একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিক এবং তার পরিচয় কেবলমাত্র এটাই যে সে একজন ভারতীয়। এর বেশি কিছু নয়। সভ্যতার বিকাশের পথে নিয়মেই রাজতন্ত্র থেকে প্রজার গণতন্ত্রের উত্তরন হয়েছে। এটাই সমাজের বিকাশ বা বিবর্তনের নিয়ম ।
এখানে কোনো ধরণের গলাবাজি কিংবা বিভেদ কামি বক্তব্য রাখা সম্পূর্ণ ভাবে অনুচিত। মান্নিক্য বংশের সদস্য হয়েও উনি নিজে এধরণের মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করছেন।
রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্র প্রবর্তন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং সেটিকে সন্মান জানানো একজন শিক্ষিত ব্যক্তির অবশ্য কর্তব্য। নিজের পাশাপাশি অন্যান্যদের উন্নয়ন এইটাই একজন প্রকৃত মানুষের মনোভাব হওয়া উচিৎ নাকি বিচ্ছন্নতাবাদ।
উনি আরও উল্লেখ করেন যে জনজাতিদের সত্যটা জানা উচিৎ।
স্পষ্ট ভাবেই, আমরা এই নিয়ে বহুবার এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে আলোচনা করেছি। যে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার লক্ষ্য নিয়েই বর্তমানে তিপ্রা মথা এবং একটা অংশের জনজাতিরা জাতিগত বিভেদ কে ইস্যু করে বিতর্ক সৃষ্টি করছে। আর তাতে প্রদ্যুত কিশোর মানিক্যের এধরণের উস্কানিমূলক বার্তা প্রেরন, আগুনে ঘির ঢালার কাজ করছে।
সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে উনারই বংশজ জ্যোতি প্রসাদ দেববর্মার মতো লোকেরা এই প্রোপাগান্ডার বিরুদ্ধে সমস্ত জনজাতি দের সচেতন করার জন্যে ও বার্তা প্রেরন করছেন।
সর্বশেষে একটা কথাই, একটি স্বাধীন সার্বভৌম , গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কেউ কোনো অঞ্চলের মালিক নয়। সবাই এই রাষ্ট্রের নাগরিক। সমান অধিকার সবার এবং সবাই ভারতীয়। জাত পাত,ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক – এই মানসিকতা ধারন না কোর্টে পারলে আগামী দিনে এই ছোট্ট পার্বত্য ত্রিপুরা সেই ৮০ সনের মতোই আবারো অশান্ত হয়ে উঠতে পারে, এমনটাই আশঙ্কা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা কোথাও এধরণের কিছু আশঙ্কা করছেন। এবার দেখার বিষয় এটাই, যে রাজ্যের সর্ব স্তরের জনজাতিরা কবে নাগাদ এই সত্যতা স্বীকার করেন এবং বাঙালি অবাঙ্গালী ভুলে গিয়ে মিলে মিশে ত্রিপুরায় শান্তি পূর্ণ ভাবে বসবাস করতে প্রতিজ্ঞা বদ্ধ হন।