Photo & Videography banned in Matabari
ত্রিপুরা রাজ্যের ঐতিহ্য বাহী শক্তি পিঠে আজ থেকে রিলস জাতীয় ভিডিও তৈরি বন্ধ। নির্দেশ অমান্য করলে হবে জরিমানা।
ত্রিপুরার পূর্বতন রাজধানী তথা বর্তমান মন্দির নগরী বলে প্রসিদ্ধ উদয়পুরের মাতাবাড়িতে ৫১ টি শক্তি পিঠের এক পিঠ মাতা ত্রিপুরা সুন্দরীর মন্দির গোটা দেশ জুড়ে বিখ্যাত। শক্তি পিঠ বলে কথা। এর ঐতিহ্য ইতিহাস সবকিছুরই একটা আলাদা মাহাত্য রয়েছে সেটা অনস্বীকার্য। রোজ মাতাবাড়িতে হাজার হাজার ভক্তদের আনাগোনা। কিন্তু তার মাঝেও এমন কিছু ভক্ত রয়েছেন যাদের কাছেই বর্তমানে এই পবিত্র স্থল টি মনোরঞ্জন এর জায়গায় পরিণত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শ কয়েক লাইক আর ফলোয়ার এর জন্যে মায়ের মন্দিরের মতো একটি পবিত্র স্থানে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গিতে নৃত্য করে তা আবার বড়াই করে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছেন তারা।
এতে মাতাবাড়ির মতো একটি পবিত্র স্থানের পবিত্রতা কিংবা গরিমা নষ্ট হচ্ছে কি না সেইটুকু অব্দি বোঝার ক্ষমতা নেই তাদের। এধরণের ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যমে একাধিকবার তীব্র গতিতে ভাইরাল হয়েছে। কিছু উঠতি বয়সের মেয়েদের সাথে সাথে ইদানিং এক গৃহবধূর মন্দির চত্বরে হিন্দি গানে কোমর দোলানর চিত্র প্রকাশ্যে আসতেই রীতিমতো ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন হাজার হাজার ভক্তরা। সমাজের শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না এই ঘটনা। অনেকেই একে মায়ের মন্দির ও মায়ের অপমান করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। সামাজিক মাধ্যমে এই নিয়ে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে অনেক লেখালেখি ও হয়েছে। বিষয়টি মাতাবাড়ি বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক অভিষেক দেব রায়ের গোচরে আসেনি প্রথম অবস্থায়। কিন্তু ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকায় অবশেষে স্থানীয় সংবাদ কর্মী দের পক্ষ থেকে বিষয়টি জানানো হয় বিধায়ক কে। বিধায়ক গোটা ঘটনা জানতে পেরে মহকুমা শাসক এর সাথে কথা বলে এই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলেন। অতঃপর মহকুমা শাসক ও মন্দির কমিটির উদ্যোগে মন্দির চত্বরে এধরণের অশালীন আচরনের বিরোধিতা করে একটি কঠিন নির্দেশিকা জারি করা হয় শনিবার।
মাতাবাড়িতে এখন থেকে এধরণের কোনো রূপ ভিডিও তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মন্দির কমিটি। যদি নির্দেশিকা অমান্য করে কাউকে ভিডিও তৈরি করতে দেখা যায় কিংবা সামাজিক মাধ্যমে এধরণের কোনো ভিডিও চোখে পড়ে তবে এর জন্যে জরিমানা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, একই ধরণের ঘটনার কারণে ২০২৩ সালে ভারতের অন্যতম পর্যটন ও তীর্থ স্থল বদরিনাথ কেদারনাথ মন্দিরে মোবাইল নিয়ে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। কপোত কপোতীর একে অপরকে আংটি দিয়ে প্রেম নিবেদন করার মতো একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়াতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তখন ও বলা হয়েছিল, ধর্মীয় স্থান পূজার্চনা এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তের ভক্তি নিবেদনের স্থল। ব্যাক্তিগত শখ পূরণের স্থল নয়। ঠিক একই অর্থে শনিবার ত্রিপুরা রাজ্যের পরম পূজনীয় এবং অতি শ্রদ্ধা ও ভক্তির মিলনস্থল মাতাবাড়িতে ভিডিও তৈরির উপর নিষেধ জারি হয়েছে।
এই খবর ছড়িয়ে পরতেই শুভানুধ্যায়ী দের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ বিরাজ করছে। সমাজের যে অংশ ভ্রষ্ট বুদ্ধি নিয়ে এধরণের কর্মকাণ্ড আগামী দিনে যেন না ঘটাতে পারে সে জন্যেই এই উদ্যোগ। মায়ের এবং মাতাবাড়ির গরিমা অক্ষুন্ন রাখতে এই সিদ্ধান্ত এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলেই মান্যতা পাবে।