Kailsahar housewife under thread
গার্হস্থ্য হিংসার ঘটনাবলী নিত্য দিনের বিষয়। এই সভ্য শিক্ষিত সমাজে রোজ বহু গৃহবধূ কিংবা স্বামী গার্হস্থ্য হিংসার শিকার। বহু মানুষ অচিরেই ঝরিয়ে দিচ্ছে প্রাণ। কেউ কেউ বা লড়াই করে বেঁচে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার কারো কারো পক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে।
এবার এমনই এক গার্হস্থ্য হিংসার শিকার গৃহবধূ তার সাথে ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনার বিবরন দিয়ে অভিযুক্ত স্বামীর চুরান্ত শাস্তির দাবী জানিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন। অভিযোগ নিজের স্ত্রীর পেটে থাকা সন্তানকে তিন তিনবার খুন করার পর তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে এবার জনজাতি সম্প্রদায়ের এক যুবতিকে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ইন্দ্রনগরে বসবাস করছে স্বামী। অভিযুক্ত যুবকের নাম আনসার আলী, পিতার নাম রমজান আলী। তার বাড়ি কৈলাশহর বাঘা ছড়া এলাকায় বলে জানা গেছে। এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ নিয়ে কৈলাসহর থানায় মামলা করেছেন তার স্ত্রী সোমা বেগম। সোমা বেগমের অভিযোগ তাকে খুনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে এবং জিরানিয়া বাপের বাড়িতে তার আশ্রয়স্থলে দফায় দফায় হামলা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য সোমা বেগমের বাপের বাড়ি জিরানিয়া চম্পকনগর এলাকায়, বর্তমানে সেখানেই থাকছেন তিনি। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর ভালবাসার সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের বিয়ে হয়েছিলো। বিয়ে করার পর তাকে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে এক বছর পর্যন্ত রাখা হয়। এক বছর পরে তার স্বামী আনসার আলী জিবি হাসপাতালে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির বাহানায় আগরতলায় চলে আসে। সে তখন কৈলাসহর শ্বশুর বাড়িতেই ছিলো। সেখানে শ্বশুর বাড়ির লোকরা তাকে নানা ভাবে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতো বলে জানায় সোমা। পরবর্তীকালে সে একদিন জানতে পারে তার স্বামী আনসার আলী আগরতলায় এসে ইন্দ্রনগরে একটি জনজাতি সম্প্রদায়ের যুবতিকে বিয়ে করে স্ত্রী পরিচয় দিয়ে তাঁকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকছে। বিষয়টি জানার পর সে আগরতলা চলে আসে। আগরতলা ইন্দ্রনগরে ভাড়া বাড়িতে আনসার আলী এবং অবৈধ স্ত্রীকে হাতেনাতে ধরে ফেলে সোমা বেগম। সে এই ঘটনা নিয়ে পুলিশে মামলা করার হুমকি দিলে আনসার আলী তখন তাকে কোনোক্রমে বুঝিয়ে কুমারী টিলায় আলাদা ভাড়াবাড়ি থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। সেই ভাড়া বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে আনসার আলী তার বড় ভাই আশফাক আলীসহ পরিবারের লোকেরা বিভিন্ন সময় এই বাড়িতে এসে এবং তাকে কৈলাসহর শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গিয়ে নানাভাবে অত্যাচার করে বলে অভিযোগ। ২০২২ এবং ২৩ সালের মধ্যে সোমা পরপর দুবার অন্তঃসত্ত্বা হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে তার সন্তান কে হত্যা করে অভিযুক্ত স্বামী আনসার আলি এমনটাই অভিযোগ সোমা বেগমের। এদিকে চলতি বছরের মার্চে শ্বশুরবাড়ির এলাকার এক নির্জন স্থানে আনসার আলী এবং তার বড় ভাই আশফাক আলী সোমা বেগমকে একটি রাবার বাগানে নিয়ে প্রচণ্ড মারধর করে এবং তার পেটের সন্তানকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার পেটে লাথি মারা হয়। সোমা বেগম সেখানে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকেরা দৌড়ে এসে তাকে রক্ষা করে। সেখানে তাৎক্ষণিক বিচার করে স্থানীয় লোকজন তাকে পুনরায় শ্বশুরবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে যাওয়ার পর পুনরায় তার স্বামী আনসার আলী, ভাসুর আশফাক আলী, শাশুড়ি নেহারুন বিবি সহ বাড়ির অন্যান্য লোকেরা মিলে তাকে প্রচন্ডভাবে মারধর করে এবং তার পেটে এবং গোপনাঙ্গে লাথি দিয়ে তার পেটের সন্তানটি নষ্ট করে বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে তার মা তাকে উদ্ধার করে আনতে গেলে তার মায়ের মাথা ফাটিয়ে দেয় ভাসুর আশফাক আলী। কোনক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে সোমা বেগমকে তার মা আগরতলা নিয়ে আসে। ১৭ মার্চ সোমা বেগমকে জিবি হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার জানিয়ে দেয় তার পেটের সন্তান মারা গেছে। ছয় মাসের পূর্ণাঙ্গ মৃত সন্তান তার পেট থেকে বের করা হয়। সোমা বেগমের অভিযোগ তার স্বামী আনসার আলী ভাসুর আশফাক আলী পরিকল্পিতভাবে তার পেটের সন্তানকে খুন করেছে। পেটের সন্তান খুনের অভিযোগ সহ সোমা বেগমকে হত্যার চেষ্টার অভিযোগ ও প্রতারণা করে দ্বিতীয়বার বিয়ে করার অভিযোগ নিয়ে সোমা বেগম কৈলাশহর মহিলা থানায় গত ২০ মে লিখিতভাবে অভিযোগ জমা করে। থানায় পুলিশ এই ঘটনায় মামলা নিলেও এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত আনসার আলীকে গ্রেফতার করার কোনো চেষ্টা করছে না। পুলিশের ব্যর্থতায় আনসার আলী এখনো আগরতলার ইন্দ্রনগর আইটিআই রোডে জনজাতি সম্প্রদায়ের এক যুবতিকে নিয়ে বসবার করছে বলে খবর। অসহায় সোমা বেগম এই ঘটনায় কৈলাশহর শাসকদলের মন্ডল নেতাদের দ্বারস্থ হয়েছেন। স্থানীয় মন্ডল নেতৃত্ব সোমা বেগমকে নৈতিক সাহায্য করছেন। কিন্তু অভিযুক্ত আশফাক আলী স্থানীয় কংগ্রেস নেতার দাপট খাটিয়ে পুলিশকে ম্যানেজ করে রেখেছে বলে অভিযোগ। উল্লেখ্য কৈলাশহর এলাকায় বর্তমানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন কংগ্রেস বিধায়ক বীরজিত সিনহা। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস দলের নাম ভিড়িয়ে ও আশফাক আলি নিজের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর তাই পুলিশ এখনো তাদেরকে গ্রেপ্তার করছে না। তাছাড়া আরো অভিযোগ আনসার আলী এবং তার বড় ভাই আশফাক আলীর পরিবার কৈলাশহরে একটি কুখ্যাত পরিবার হিসেবে পরিচিত রয়েছে। আশফাক আলী স্থানীয় মাদক কারবারি এবং তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশে মামলা দেওয়ার পর আশফাক আলীর নেতৃত্বে তার স্বামী আনসার আলী সহ কয়েকজন দফায় দফায় জিরানিয়া চম্পকনগরে সোমা বেগমের বাপের বাড়িতে গিয়ে মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। তাদের এই হুমকির মুখে গোটা পরিবার এখন নিরাপত্তা হীনতায় ভুগছেন। সুষ্ঠু বিচারের দাবিতে শেষ পর্যন্ত রবিবার নির্যাতিতা সোমা বেগম রাজ্য সরকারের তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।