Kailash Roy Case : একজন সুস্থ, সাধারণ মানুষ জেলে গেলেন—কিন্তু ফিরে এলেন নিথর দেহ হয়ে। আগরতলার গোয়ালা বস্তির বাসিন্দা কৈলাশ রায়ের মৃত্যু ঘিরে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ, ছেলের অপরাধে তাঁকে ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল। জেলে পাঠানোর কয়েক দিনের মধ্যেই মৃত্যু ঘটে তাঁর। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জনমনে প্রশ্ন, ক্ষোভ এবং শাসনব্যবস্থার প্রতি গভীর অনাস্থা—সব একসাথে উথলে উঠেছে।
জানা গেছে, কৈলাশ রায়ের ছেলের নামে একটি মামলা আসে । পুলিশ যখন তাকে খুঁজতে যায়, তখন ছেলেকে না পেয়ে বাবাকে তুলে নিয়ে আসে। পুলিশের আশ্বাস ছিল, ছেলে আত্মসমর্পণ করলেই বাবাকে মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবে ঘটল উল্টো। ছেলে ধরা দিলেও, পুলিশ উভয়ের বিরুদ্ধেই চার্জশিট পেশ করে, জেল হেফাজতে পাঠানো হয়।
এরপরই ঘটনার মোড়। রবিবার সকালে বিশালগড় সংশোধনাগার থেকে খবর আসে—কৈলাশ রায় আর নেই। তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে, কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, তাঁর শরীরে বাহ্যিক আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না—যা মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এই মৃত্যু নিয়ে মৃতের পরিবার সরব হয়েছে। তাঁদের দাবি, এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়—এটি একটি “পরিকল্পিত হত্যা”। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন এবং সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণের কারণেই এই পরিণতি।
ঘটনার প্রতিবাদে সোমবার সকালে উত্তাল হয়ে ওঠে গোয়ালা বস্তি। শত শত মানুষ জড়ো হন এনসিসি থানার সামনে। প্রতিবাদ, স্লোগান, পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা—চারপাশে একটাই দাবি, “এই মৃত্যুর বিচার চাই”।
বিরোধী দল নেতা জীতেন চৌধুরী ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দাবি করেন, সম্প্রতি বিহারী সম্প্রদায়ের জমি দখলের উদ্দেশ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। সেই নোটিশ ছিঁড়ে ফেলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের এই ‘প্রতিশোধমূলক’ পদক্ষেপ।
তিনি আরও বলেন, “এই মৃত্যু শুধু একটি পরিবার নয়, গোটা রাজ্যের বিচারব্যবস্থার উপরে আস্থা হারানোর এক জ্বলন্ত উদাহরণ।”
এদিকে, পুলিশ ও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষ এখনো পর্যন্ত কোনো স্পষ্ট বিবৃতি দেয়নি। তবে সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে এবং ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ও সংশোধনাগারের সিসিটিভি ফুটেজ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কৈলাশ রায়ের মৃত্যু কি শুধুই একটি ‘দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা’? নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে প্রশাসনিক গাফিলতি ও অবিচারের অন্ধকার চিত্র? উত্তর এখনও অজানা। তবে একটি পরিবার আজ ভেঙে পড়েছে, একটি জনপদ ক্ষুব্ধ, আর গোটা সমাজের সামনে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন — “এমনটা আর কতদিন?”