GANGTOK HEAVEN OF NORTH EAST
ভ্রমণপ্রেমীরা সর্বদাই নতুন নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করে। যেখানে তারা একটি ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন খাবারের স্বাদ নিতে পারে এবং বিভিন্ন মানুষের সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। সেই স্পৃহা নিয়ে রোজ হাজার হাজার মানুষ বেড়িয়ে পড়ে ভ্রমন করতে। শহর ছাড়িয়ে গ্রামে, রাজ্য ছাড়িয়ে অন্য রাজ্যে, দেশ থেকে বিদেশে – বহু জায়গায় পর্যটক স্থলের স্বাদ অনুভব করতে চলে যান।
ভ্রমন পিপাসুদের মধ্যেও দুটি ধরণ রয়েছে। কেউ পাহাড় প্রেমী হন কেউ বা সাগর প্রেমী। পাহাড় প্রেমীদের জন্যে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের শ্রেষ্ঠ পর্যটন স্থল হচ্ছে সিকিম। সাধারণত উত্তর পূর্বের সবকটিই পার্বত্য রাজ্য। কিন্তু সিকিম এর গ্যাংটকের আকর্ষণ আর বাকি যে কোনো পর্যটন স্থল কে নিঃশর্তে হার মানায়।
আগরতলা থেকে সিকিম যাত্রা
ত্রিপুরার আগরতলায় থেকে কিভাবে যাবেন গ্যাংটক ? নিম্নে বিস্তারিত রইলো।
ত্রিপুরার প্রধান রেলওয়ে স্টেশনটি হল আগরতলা রেলওয়ে স্টেশন। এখান থেকেই শুরু হবে সিকিমের যাত্রা। ট্রেন সকাল সাড়ে ৭টায় রউনা হয়। সিকিমে কোন ট্রেন সুবিধা না থাকার কারনে এই আগরতলা থেকে ট্রেন যোগে চলে যেতে হবে প্রথমে নিউ জলপাইগুড়ি তে। তারপর Gangtok পৌঁছতে NH 10-এর রাস্তা ধরে দীর্ঘ ৪ ঘণ্টার যাত্রা অতিক্রম করতে হবে।
এছাড়া নিউ লজপাইগুরি স্থিত বাগডোগরা বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইট এর সুবিধাও রয়েছে। পর্যটক রা চাইলে বাগডোগরা পর্যন্ত বিমানে যেতে পারেন।
তারপরে গ্যাংটকে পৌঁছতে 4-1/2 ঘন্টার সোজা পথ নিতে হবে। তাই এই পুরো যাত্রায় প্রায় 21 থেকে 23 ঘন্টা সময় লাগে। এটি যে কারোর জন্য একটা দীর্ঘ ভ্রমণ। এই যাত্রার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল সড়কপথে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টার ভ্রমণ।
ভ্রমণ, খাবার এবং থাকার খরচ
গ্যাংটকে 2 রাত 3 দিনের ভ্রমনের আনুমানিক খর্চা কত হতে পারে?
এই পুরো ট্রিপে আপনার মাত্র ৫-৬ হাজার টাকা লাগবে। এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক নয় কি ?
কিন্তু, এটাই সত্যি। গ্যাংটক শহরে নুন্যতম খরচের মধ্যে একটি হোটেল হল হোটেল ডুগ। যেখানে দিনপ্রতি খাবার এবং লজের খরচ 800 টাকা মাত্র। তাই 2 রাত 3 দিনের জন্য মোট খর্চা মাত্র 1600 টাকা । হোটেলের প্যাকেজের মধ্যে ভ্রমণ খরচও অন্তর্ভুক্ত থাকে। গ্যাংটকের ট্যুরিস্ট স্পটগুলো দেখার জন্য সময় পাওয়া যাবে দুদিন । যেখানে আরো 1600 টাকার মতো খর্চা। এই সমস্ত কিছুর জন্য মোট খর্চা হবে মাত্র 3200 টাকা ।
ট্রেনের টিকিট ভাড়া এবং অন্যান্য ট্যাক্সি ভাড়া সমেত আরও 1500 টাকা । তাই এই ট্রিপে মোট খরচ হবে মাত্র 5-6000 টাকা।
দর্শনীয় স্থান
প্যাকেজ অনুযায়ী প্রথম দিন ঘুরে দেখানো হবে গ্যাংটকের ১০ টি প্রসিদ্ধ পর্যটন স্থল যাকে 10 পয়েন্টও বলা হয়। এই 10টি পয়েন্ট হল গ্যাংটকের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান যার নিজস্ব আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। এই ১০ টি পয়েন্ট হল নিমরুপ-
পয়েন্ট 1:- হস্তশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেড
পয়েন্ট 2:- হস্তশিল্প যাদুঘর
পয়েন্ট 3:- হনুমান টক
পয়েন্ট 4:- গণেশ টক
পয়েন্ট 5:- কাঞ্চনজঙ্ঘা ভিউ পয়েন্ট
পয়েন্ট 6:- উদ্ভিদ সংরক্ষক
পয়েন্ট 7:- তাশি ভিউ পয়েন্ট
পয়েন্ট 8:- বাকথাং জলপ্রপাত
পয়েন্ট 9:- দো দ্রুল চোরটেন
পয়েন্ট 10:- বন জখরি জলপ্রপাত
এই 10টি দর্শনীয় দৃশ্য গ্যাংটক ভ্রমন প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত । প্রথম দিন ভ্রমনে বেড়িয়ে এই ১০ টি জায়গা দেখানো হয়। এতেই গোটা দিন অতিবাহিত হয়ে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে আসে।
যেমনটা বললাম, যে প্রতিটি পয়েন্টের কিছু নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে সেই অনুযায়ী চলুন জেনে নেওয়া যাক কিছু স্থানের বিশেষত্ব-
হস্তশিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন লিমিটেড
এই পয়েন্টটি সিকিমের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বর্ণনা করে। আমাদের ত্রিপুরা যেমন নিজস্ব পোশাক, শিল্প ও খাদ্য দ্বারা তার সংস্কৃতি বর্ণনা করে ঠিক তেমনি সিকিম রাজ্যের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি রয়েছে। অনেক হস্তনির্মিত ভাস্কর্য এবং তাদের ঐতিহ্যবাহী অস্ত্র এখানে এই কর্পোরেশন লিমিটেড দ্বারা সংরক্ষিত করা আছে যা তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বর্ণনা করে।
হস্তশিল্প যাদুঘর
এখানে প্রাচীনকালের সমস্ত অস্ত্র, কাপড় ইত্যাদি সংরক্ষিত আছে। তবে আমাদের রাজ্যের উজ্জয়ন্ত প্রাসাদের মতোই এখানেও ভিডিওগ্রাফি এবং ফটোগ্রাফি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ । তবে এই যাদুঘরে সংরক্ষিত সিকিমের ইতিহাস সত্যিই দর্শকদের মোহিত করে।
তাশি ভিউ পয়েন্ট
এটি 10টি পয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিউ পয়েন্ট । এই ভিউ পয়েন্টটি মূলত এর একটি বিশেষত্বের জন্য পরিচিত। লোকে বলে, এই ভিউ পয়েন্ট থেকে পুরো গ্যাংটক শহরটাকেই দেখা যায়।
অন্যান্য পয়েন্টগুলিও খুবই মন্ত্রমুগ্ধ । দর্শনার্থীরা গ্যাংটক পরিদর্শন করতে এবং এই সমস্ত সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসছেন প্রতিদিনই। বিশেষ করে, যারা সমুদ্রের পাশের রাজ্য বা শহরে বাস করে, তাদের এই ধরনের পাহাড়ি পর্যটন স্পটগুলির জন্য আলাদা মাত্রার ক্রেজ রয়েছে।
তাছাড়া প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস গ্যাংটক ভ্রমনের জন্যে সর্বাধিক অনুকুল সময় বলে মনে করা হয়। কারণ এই মরশুমে স্নো ফল বা হিম বর্ষণ দেখা যায়। তাছাড়া ও এই সময়টা ছুটির সময় হয়ে থাকে। তাই দেশ বিদেশ থেকে হাজার হাজার পর্যটক এই সময়ে ছুটে আসেন গ্যাংটকে। আর এই আর্টিকেল পড়ার পর অবশ্যই আপনার ও ইচ্ছে হবে গ্যাংটক ঘুরে আসার। তাহলে দেরি না করে অবশ্যই একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন গ্যাংটক।
আর এমনই গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন সংক্রান্ত তথ্য জানতে এই ওয়েবসাইট এ চোখ রাখুন।