Biplab Kumar Deb Isckon Rath Yatra : ইসকনের উল্টো রথযাত্রা ঘিরে ধর্মীয় মিলনমেলার মঞ্চে গিয়েও রাজনৈতিক বিদ্বেষ ছড়াতে পিছপা হলেন না বিজেপি সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব। আবারও চিরাচরিত ভঙ্গিতে আক্রমণ শানালেন বামপন্থীদের দিকে।
“কমিউনিস্টদের পেলেই ঠুকতে হবে” — এই ভাষাতেই নিজের বক্তব্য রাখলেন প্রাক্তন ত্রিপুরা মুখ্যমন্ত্রী, যা বহু মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।
ভারতের রাজনৈতিক পরিসরে বহু বছর ধরে বামপন্থী আন্দোলন শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে কথা বলে এসেছে। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায়, বিজেপির এই ধরনের আক্রমণ শুধু রাজনৈতিক বিদ্বেষ নয়, বরং একটি প্রগতিশীল ভাবধারার ওপর ধারাবাহিক আঘাত।
ধর্মীয় উৎসবেও থেমে নেই বিদ্বেষের রাজনীতি।
রথযাত্রার মতো শুভ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রাজনীতির বিষ ঢালার এই প্রবণতা নতুন নয়, তবে এবার সেটা আরও নগ্নভাবে প্রকাশ পেল। যেখানে সাধারণ মানুষ মিলেমিশে উৎসব পালন করছেন, সেখানে এক সাংসদের মুখে ‘ঠুকতে হবে’ ধরনের হিংসাত্মক মন্তব্য অত্যন্ত অশোভন ও বিপজ্জনক।
এই ধরনের বক্তব্য বিজেপির ফ্যাসিবাদী মানসিকতার প্রতিফলন — যেখানে ভিন্নমতের জন্য নেই কোনও স্থান। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এমন হুমকি-ধমকি কেবলমাত্র রাজনৈতিক শিষ্টাচারের পরিপন্থী নয়, বরং তা সংবিধানকে অপমান করার শামিল।
তবে জেনে রাখা ভালো বিপ্লব কুমার দেব এমন এক নেতা যিনি বারবার প্রমাণ করেন গণতন্ত্রের মূল্যবোধ তাঁর কাছে তুচ্ছ।
বিপ্লব দেব এর আগে বহুবার বিতর্কিত মন্তব্য করে সংবাদ শিরোনামে এসেছেন — কখনও শিক্ষার মান নিয়ে, কখনও আবার দেশজুড়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে হাস্যকর মন্তব্য করে। তাঁর সাম্প্রতিক “কমিউনিস্ট পেলেই ঠুকতে হবে” মন্তব্য কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি ধারাবাহিক হিংসাত্মক রাজনৈতিক ভাষার বহিঃপ্রকাশ।
ত্রিপুরা রাজ্যে বাম শাসনের দীর্ঘ ইতিহাস ছিল গণতান্ত্রিক ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার ভিত্তিতে। বিপ্লব দেব সেই উত্তরাধিকার মুছে ফেলার চেষ্টা করেছেন — প্রশাসনে স্বচ্ছতা নয়, বরং বিভাজনের রাজনীতি চালু করেছেন।
একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর দায়িত্ব শান্তি ও সংহতির বার্তা দেওয়া। অথচ তিনি এর ঠিক উল্টো করছেন। এ ধরনের বক্তব্যের ফলে দলীয় কর্মীদের মধ্যে সহিংস মনোভাব গড়ে ওঠে — যা গণতান্ত্রিক পরিবেশের পক্ষে হুমকি।
একজন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে “ঠুকতে হবে” ধাঁচের ভাষা ব্যবহার করা সাংবিধানিক শপথের প্রতি অসম্মান। ভারতের সংবিধান ‘বাকস্বাধীনতা’র সঙ্গে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ এবং ‘সহনশীলতা’-র গুরুত্বও সমানভাবে বর্ণনা করে। এই ধরণের বক্তব্য সেই মৌলিক চেতনার বিরুদ্ধে যায়।
রাজনীতিকে ব্যক্তিগত প্রতিশোধে পরিণত করছেন
তাঁর রাজনৈতিক ভাষ্য থেকে প্রমাণিত, বিপ্লব দেবের কাছে বিরোধী মানেই শত্রু — আলোচনা ও মতপার্থক্য নয়, বরং দমন ও আক্রমণই তাঁর কৌশল। এটি রাজনৈতিক পরিপক্বতার নয়, বরং সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচায়ক।
বিপ্লব দেবের মতো নেতাদের কথা শুধু নিন্দনীয় নয় — তা সমাজকে হিংসা ও বিভাজনের পথে ঠেলে দেয়। এমন নেতাদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক শক্তিগুলোর একজোট হয়ে শান্তিপূর্ণ ও আদর্শনিষ্ঠ আন্দোলন গড়ে তোলা জরুরি।