Bamutia CPIM News :বিজেপি শাসিত রাজ্যে আবারও প্রকাশ্যে এল সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও প্রতিবাদের চিত্র। সারা ভারত কৃষক সভার সদস্যপদ সংগ্রহ অভিযানে বিজেপি ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীরা বাধা দিতে আসতেই মাঠে নামে স্থানীয় মানুষ। একদিকে কৃষক সংগঠনের কর্মীদের উপর হামলার হুমকি, অন্যদিকে শাসক দলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন এলাকাবাসী। শেষ পর্যন্ত জনতার তীব্র প্রতিরোধে পালাতে বাধ্য হয় দুর্বৃত্তরা।
ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংগর ভাগলপুর এলাকায়। রাজ্য কমিটির নির্দেশে সারা রাজ্যজুড়ে একই দিনে সংগঠনের সদস্যপদ সংগ্রহ অভিযান চলছিল। বামুটিয়ার সভ্যপদ কর্মসূচিতেও প্রচার চলছিল শান্তিপূর্ণভাবে। সেই সময় কয়েকজন দুষ্কৃতী, যাদের স্থানীয় মানুষ বিজেপি ঘনিষ্ঠ বলেই চিহ্নিত করেছেন, তারা এসে কর্মসূচি ভণ্ডুল করার চেষ্টা করে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, “এরা বহুদিন ধরেই সমাজবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এবার যখন কৃষক সভার কর্মীরা গ্রামে আসেন, তখন তারা ভয় দেখাতে আসে। কিন্তু মানুষ আর ভয় পায় না।”
অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান জরন সরকার— যিনি নেশা বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসীরা। এছাড়া সুবাস ও অঙ্কুর নামে আরও দু’জনের নাম উঠে এসেছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুষ্কৃতীরা শুরুতে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করে এবং প্রচার সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু গ্রামের সাধারণ মানুষ একত্র হয়ে তাদের প্রতিহত করেন।
সারা ভারত কৃষক সভার স্থানীয় সম্পাদক স্বপন নাগ বলেন, “এটা কেবল আমাদের সংগঠনের বিষয় নয়। এটা মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারকে রক্ষা করার লড়াই। বিজেপি ভয় দেখিয়ে মানুষকে দমন করতে চায়, কিন্তু তারা বুঝতে পারছে— মানুষ আর আগের মতো চুপ করে নেই।”
তিনি আরও বলেন “এলাকাবাসীরা আমাদের কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জলপানের ব্যবস্থাও করেছেন। এই সংহতি আমাদের লড়াইকে আরও শক্তি দেয়।”
রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিরোধী শিবির অভিযোগ করে আসছে যে, শাসক দলের আশ্রয়ে সমাজবিরোধী ও দুষ্কৃতীরা ক্রমশ প্রভাব বিস্তার করছে। বামেদের মতে, বিজেপি এখন প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে মানুষের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করছে।
এই ঘটনাও সেই রাজনীতিরই এক প্রকট উদাহরণ— যেখানে সাধারণ মানুষ নিজেরাই প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠছেন।
বিজেপির গ্রামীণ এলাকায় ‘ভয় দেখানো রাজনীতি’ এখন উল্টো ফল দিচ্ছে। স্থানীয় পর্যায়ে মানুষ এখন বুঝে গিয়েছে, ভয় নয়, ঐক্যই শক্তি। নরসিংগর ভাগলপুরের ঘটনাটি তারই প্রমাণ।
গ্রামীণ বাংলায় কৃষক, শ্রমিক, ছোট ব্যবসায়ী— সকলেই এখন মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব ও কৃষি সংকটে জর্জরিত। বিজেপি সরকার বড় বড় প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তা মানুষের জীবনে উন্নতি আনতে পারেনি।
ফলে এইসব ছোট ছোট আন্দোলন এখন গ্রামীণ অসন্তোষের প্রতীক হয়ে উঠছে।
মানুষ বিজেপি কে “ ভোট দিয়েছিল উন্নয়নের আশায়। কিন্তু এখন সব জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া, চাষের খরচ বাড়ছে, সরকারি সহায়তা নেই। উপরন্তু যারা প্রতিবাদ করে, তাদের ভয় দেখানো হয়।
বিজেপি বিরোধীরা মনে করছেন, বামুটিয়ার এই ঘটনা রাজ্যের রাজনীতিতে এক নতুন বার্তা দিয়েছে। মানুষের প্রতিবাদকে আর দমিয়ে রাখা যাচ্ছে না।
বামফ্রন্টের এক নেতা বলেন, “মানুষ বুঝেছে, বিজেপি উন্নয়ন নয়— ভয়ের রাজনীতি করছে। এখন গ্রামবাংলা থেকে শহর পর্যন্ত মানুষ প্রতিবাদে নামছে। এটাই গণআন্দোলনের সূচনা।”
নরসিংগর ভাগলপুরের ঘটনা বিজেপির ভয় ও দমননীতির বিরুদ্ধে মানুষের জাগরণের প্রতীক।
যেখানে মানুষ নিজের অধিকার রক্ষায়, ভয়কে অতিক্রম করে রাস্তায় নামছে— সেখানে শাসক দলের দুষ্কৃতীদের কোনও স্থান নেই।
এই দৃঢ় জনপ্রতিরোধই প্রমাণ করছে, বাংলার মানুষ আবারও বলছে— “গণতন্ত্র বাঁচাও, ভয় নয়, অধিকার চাই।”



