Amra Bangali News : রাজ্যের রাজনৈতিক আবহে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বাঙালি সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে সম্প্রতি আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয় সিপিএম এবং তাদের প্রাক্তন নেতৃত্ব মানিক সরকার ও অনিল সরকারের বিরুদ্ধে। খবরে প্রতিবাদকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আমরা বাঙালি দলের গৌরাঙ্গ রুদ্র পাল বলেন, এদের শাসনকালে রাজ্যে বারবার বাঙালিরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে এবং ১৯৮০-র জুন মাসে যে গণহত্যা ঘটে, তার দায়ও এই নেতৃত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না।
মিছিলে বক্তারা অভিযোগ করেন, সিপিএম দীর্ঘদিন রাজ্যে ক্ষমতায় থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং তাদের ক্যাডাররা প্রভাব খাটিয়ে সমাজে আধিপত্য বিস্তার করেছে। ক্ষমতা হারানোর পরও তারা উপজাতি রাজনীতিকে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আবারও ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে। বক্তাদের মতে, ২০১৮ সালে ক্ষমতা হারানোর পরও সিপিএম নেতারা নতুন করে ২০২৮ সালের নির্বাচনে জেতার স্বপ্ন দেখছে।
উনার কথায় বিশেষভাবে উঠে আসে একটি বার্তা – বাঙালিরা এখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে। বক্তারা দাবি করেন, বর্তমানে বাঙালিদের পাশে কংগ্রেস, সিপিএম কিংবা বিজেপি কেউ নেই। ফলে নিজেদের টিকে থাকার স্বার্থে বাঙালিরা স্বতন্ত্রভাবে আন্দোলনের পথে হাঁটছে। অনুপ্রবেশ ইস্যুতে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাঙালিদের মিছিলে অংশগ্রহণ সেই ঐক্যের প্রতিফলন বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিন বক্তারা সিপিএম-কে “রক্তখেকো”, “খুনি দল” আখ্যা দেন। অভিযোগ তোলা হয়, শুধু ত্রিপুরাই নয়, পশ্চিমবঙ্গেও বিরোধীদের হাজার হাজার হত্যা সংগঠিত করেছে এই দল। বক্তারা আরও বলেন, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে চীন ও রাশিয়ায় কমিউনিস্ট শাসনকালে লাখ লাখ মানুষ হত্যার নজির সিপিএম-এর আদর্শকেই প্রতিফলিত করে।
তাদের মতে, সিপিএম সমাজ, ধর্ম ও পরিবারবোধকে অস্বীকার করে; তাদের চিন্তাধারা মানবিকতার পরিপন্থী। বক্তাদের দাবি, “এই অমানবিক ও পশুতুল্য আদর্শকে বাংলার মাটি থেকে চিরতরে কবর দিতে হবে।”
বিক্ষোভকারীরা আরও অভিযোগ করেন, সিপিএম ভারতীয় মনীষীদের সম্মান করে না, বরং বিদেশি নেতা লেনিন ও স্ট্যালিনের পূজা করে। এর ফলে তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
বক্তারা সিপিএম-এর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকে সরাসরি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “যদি বাড়াবাড়ি চলতে থাকে, আরও অনেক তথ্য প্রকাশ করা হবে এবং মানুষ তাদের রাস্তায় চলতে দেবে না।”
আন্দোলনকারীরা মনে করিয়ে দেন, কংগ্রেস, সিপিএম এবং বর্তমান সরকারের শাসনের অভিজ্ঞতা থেকে বাঙালিরা বুঝেছে – তাদের পাশে কেউ নেই। স্বাধীনতার সময়, দেশভাগের সময় যে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, আজও বাঙালিরা সেই মূল্য দিচ্ছে। তাই বাঁচার জন্য বাঙালিরা এখন নতুনভাবে এক হওয়ার ডাক দিয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা দাবি করেন, তাদের লক্ষ্য ক্ষমতা দখল নয়, বরং বাঙালিদের টিকে থাকার লড়াই। “আমরা বাঙালি” এই ব্যানারের তলায় সবাইকে এক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
ত্রিপুরার রাজনীতিতে বরাবরই বাঙালি ও উপজাতি রাজনীতির সমীকরণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। সাম্প্রতিক এই বক্তব্য এবং বিক্ষোভ সেই সমীকরণকে আবারও আলোচনায় এনেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনের আগে এই ধরনের আন্দোলন রাজ্যের রাজনীতিকে আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে।