Ambubachi celebration at LaxmiNarayan temple

আষাঢ় মাসের ৭ তারিখ, প্রত্যেক নারীর জন্যে একটি বিশেষ দিন। প্রতিবছর বাংলা মাসের এই দিন থেকে দীর্ঘ চার দিন চলে অম্বুবাচী। যা বাঙ্গালীদের এক দারুন উৎসব। দেবী সতীর যে দেহাংশ টি আসাম রাজ্যের গৌহাটি শহরে পড়েছিল তার উপর গড়ে উঠেছে সতী পিঠ কামরূপ কামাখ্যা। দেবী সতীর যোনি অংশ টি নাকি পড়েছিল সেখানে। আর প্রতি বছর এই অম্বুবাচী উৎসব কে মূলত দেবী কামাখ্যার উৎসব হিসেবেই পালন করা হয়ে থাকে। এই অম্বুবাচী তে দেবী রজচক্র শুরু হয় এবং সেই অনুযায়ী দীর্ঘ ৪ দিন বন্ধ থাকে মায়ের মন্দির।
সেই অনুযায়ী শুধু মাত্র কামাখ্যা তেই নয়, গোটা দেশ জুড়ে সমস্ত দেবীর মন্দিরই বন্ধ থাকে এই ৪টি দিন। এই উৎসব চলাকালীন সমস্ত বিবাহিত নারী দের কিছু নিয়মানুবর্তিতার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। শুধু বিবাহিত বললে ভুল হবে, বাস্তবে সবার জন্যেই কিছু নিয়ম নির্দিষ্ট থাকে। যেমন নিরামিষ আহার না করা, গায়ে কিংবা মাথায় সাবান জাতীয় বস্তু ব্যবহার না করা ইত্যাদি।
এছাড়া এই উৎসবের একটি বিশেষ অংশ হচ্ছে সিঁদুর খেলা। প্রত্যেক সধবা স্ত্রী একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেন। সিঁথিতে , হাতের শাঁখা পলায় সিঁদুর ছুইয়ে দেন। এতে নাকি সবার স্বামী দীর্ঘায়ু হন। আর ঈশ্বরের কাছে ও সকলে সবার মঙ্গল কামনা করেন। কিন্তু আজকাল সিঁদুর খেলার নামে এ যেন এক প্রকার ফেশান হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারই প্রতিফলন ঘটতে দেখা গেল আজ রাজধানী আগরতলার এক জাগ্রত মন্দিরে।
প্রতিবারের মতোই অম্বুবাচীর এই শুভ সময়ে রাজধানীর লক্ষ্মী নারায়ন মন্দিরে ধুমধাম করে এই গোটা দিন চারেক দারুন পূজা পার্বণের মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। মহিলারা সিঁদুর খেলতে আসছেন। পুজো দিচ্ছেন। কিন্তু সিঁদুর খেলার নাম করে প্রতি বছরই তারা মন্দির প্রাঙ্গন কে টাটকা লাল রঙ্গে রঞ্জিত করে যাচ্ছেন। দুঃখের বিষয় সেই লাল রঙ কোনো আবিরের নয়, সেই রঙ হচ্ছে পবিত্র সিঁদুরের। সিঁদুর যা নারীর সিঁথিতে সাজানোর বস্তু, যা কিঞ্চিৎ মাত্র পায়ে পরলেও মহিলারা তা মাথায় ঠেকিয়ে হাজার বার প্রনাম করেন। অথচ এই মন্দির প্রাঙ্গনে সিঁদুর এর ছড়াছড়ি।
মন্দির এর দেওয়াল থেকে শুরু করে মেঝে পর্যন্ত কোথাও বাকি নেই যেখানে এক ছিটে সিঁদুর পরে নেই। এইসব দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছেন বহু গুণী , বিজ্ঞ পণ্ডিতেরাও। ধর্ম নিয়ে শাস্ত্র নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে অনর্গল বুলি আওরে বেরানো নেটিজেনরা আজ এসব দেখেও না দেখার মতো করে চলে যাচ্ছেন। অবশ্য নিশ্চুপ আছেন মন্দিরের পুরোহিত ও।
কিছু বলার ভাষা হারিয়েই ফেলেছেন হয়তো বা অনেকেই। স্বামীর মঙ্গল কামনা করে একদিকে একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দিচ্ছেন , অথচ পরক্ষনেই সেই সিঁদুর পায়ে মাড়িয়ে চলে যাচ্ছেন। এ কোন সংস্কৃতি ? এ কোন নিয়ম ?
শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মহল অবশ্য চুপ নেই। এই নিয়েই পবিত্র অম্বুবাচীর দিনেও ব্যপক সমালোচনার মুখে রাজধানীর এই জাগ্রত মন্দির। এধরনের ক্রিয়া কলাপে তীব্র নিষেধাজ্ঞা জারি করা অত্যন্ত প্রয়োজন বলেই দাবী করছেন একাংশ।

Leave A Reply