Alpana Village of Tripura

ত্রিপুরার পর্যটন শিল্প কে বিকশিত করতে রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের যৌথ প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে ২০১৮ এর পর পরই। রাজ্যে একদিকে সরকার পরিবর্তিত হয়েছে, আর তার সাথেই পর্যটন স্থল গুলিকে নানা আঙ্গিকে নানা রূপ দিয়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বর্তমান সরকার ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ব্যপক কাজ করেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। শুধু তাই নয়, সৃষ্টি করা হয়েছে কিছু নতুন পর্যটন উপযোগী জায়গা ও।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার মূল শহর থেকে খানিকটা দূরে সীমান্তবর্তী এলাকা লঙ্কা মুড়ায় গড়ে উঠেছে এক নতুন পর্যটন স্থল যার নাম আলপনা গ্রাম। আগে থেকেই এখানে ঘন বসতি ছিল। শুধু তাতে কিছুটা রঙ্গের ছোঁয়া লাগিয়েই স্থানটির নামাঙ্কিত করা হয়েছে “আলপনা গ্রাম”।

২০২০ সালের ১৮ই নভেম্বর ভারত সরকারের ইস্টার্ন জোন কালচারাল সেন্টারের অর্থায়নে এবং সংস্কার ভারতী ত্রিপুরার উদ্যোগে ত্রিপুরার এই আলপনা গ্রামে লোক সংস্কৃতির কর্মশালা শুরু হয়। যেখানে অঙ্কন শিল্পীরা গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে মাটির দেওয়াল জুড়ে নানা রকমের আলপনা অঙ্কন করেন। প্রায় দশ দিন ব্যপি এই কর্মশালা চলে।
সাধারণত আমাদের পূর্ব পুরুষের আমল থেকেই বাংলা বছরের পৌষ মাসের শেষের দিকে অর্থাৎ পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠে পুলি তৈরি , বাড়ির উঠোনে আলপনা দেওয়া ইত্যাদির রীতি চলে আসছে। সময়ের নৌকা বেয়ে যদিও আজকাল বহু মানুষ সেই সংস্কৃতি কে পেছনে ফেলে বহুদুর এগিয়ে চলেছেন নতুনত্বের টানে। কিন্তু লঙ্কা মুড়া বাসী আজো সেই সংস্কৃতি কে ধরে রেখেছেন। নিয়মিত পৌষ পার্বণে এই আলপনা একে চলেছেন প্রতিটি বাড়িতে। আর সেই চিত্র সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পরতেই সংস্কার ভারতীর সহযোগিতা ক্রমে গ্রামের প্রতিটি বাড়িকে আলপনায় মুড়ে দেবার প্রচেষ্টা শুরু হয়।
প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব কিছু সংস্কৃতি, কিছু শিল্প থাকে। সেই গুলিকে মাথায় রেখেই এই আলপনা গ্রামে ত্রিপুরার নিজস্বতা কে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন শিল্পীরা। এক্ষেত্রে ত্রিপুরার আর্ট কলেজের স্নাতকোত্তর ১০ জন ছাত্র ছাত্রী ও গ্রাম বাসিরা হাতে হাত লাগিয়ে এই গ্রাম কে সুন্দর আলপনায় অঙ্কিত করতে সহযোগিতা করেছেন।
প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তি তে এখানে পিঠে পুলি উৎসবের আয়োজন করা হয়। গোটা গ্রাম জুড়ে বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ ছুটে যান আলপনা গ্রামে। শুধু পৌষ পার্বণের মেলাতেই নয়, বছরের অন্যান্য সময় গুলিতে ও এখানে পর্যটকদের আনাগোনা চোখে পড়ে।
স্থানীয়দের মতে এই জায়গাটি কে রাজ্য সরকার যদি আরও একটু উন্নত করার পরিকল্পনা করেন তবে আগামী দিনে এখানকার বাসিন্দাদের ভালো রোজগারের উৎস তৈরি হতে পারে।
তবে ত্রিপুরার মানচিত্রে বর্তমানে পর্যটন স্থল গুলির মধ্যে একটি বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে এই আলপনা গ্রাম। তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ত্রিপুরার আদব সংস্কার সংস্কৃতি কে নানা রঙ্গের অঙ্কন এর মধ্যে দিয়ে প্রকাশ করার অঙ্কন শিল্পীদের চেষ্টা স্বার্থক বললেও ভুল হবে না।

Leave A Reply