Birsa Munda : ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস ও আদিবাসী কংগ্রেসের উদ্যোগে শ্রদ্ধা ও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হলো জনজাতি আন্দোলনের মহান নেতা ধরতি আবা বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মজয়ন্তী। মঙ্গলবার রাজধানীর কংগ্রেস ভবনে তার প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর অনুষ্ঠিত হয় এক আলোচনা সভা, যেখানে বিরসা মুন্ডার সংগ্রামী জীবন, আদিবাসী সমাজের প্রতি তার অবদান এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে তার আদর্শের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে আশীষ সাহা বলেন, “ধরতি আবা বিরসা মুন্ডার ১৫০তম জন্মজয়ন্তী শুধু একটি স্মরণ-অনুষ্ঠান নয়, এটি আদিবাসীদের অধিকাররক্ষা ও অস্তিত্ব সংগ্রামের ইতিহাসকে নতুন করে উপলব্ধি করার দিন।” তিনি জানান, এই উপলক্ষে সারা রাজ্যে কংগ্রেসের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিশ্রামগঞ্জে আদিবাসী ছেলে-মেয়েদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খোয়াইয়ে মুন্ডা জনজাতির সঙ্গে আলোচনা সভার আয়োজন তারই অংশ।
বিরসা মুন্ডা সম্পর্কে বলতে গিয়ে আশীষ সাহা মনে করিয়ে দেন, ব্রিটিশ শাসনের দমননীতির বিরুদ্ধে যে ঐতিহাসিক উলগুলান বা আদিবাসী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল, তারই নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিরসা মুন্ডা। ব্রিটিশরা যখন আদিবাসীদের ভূমি, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় চর্চা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল, তখন বিরসা মুন্ডা অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন। এই সংগ্রাম আজও আদিবাসী সমাজের কাছে প্রেরণা হয়ে রয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতির প্রসঙ্গ টেনে আশীষ সাহা অভিযোগ করেন, দেশের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার আদিবাসীদের জল–জঙ্গল–জমির অধিকার হরণে সচেষ্ট। কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থে আদিবাসী এলাকার জমি হস্তান্তর, বন এবং খনিজ সম্পদের লুটতরাজের সুযোগ সৃষ্টি, ভাষা ও সংস্কৃতির উপর হস্তক্ষেপ—এ সবকিছুকে তিনি “নতুন যুগের জঙ্গলরাজ” বলে অভিহিত করেন। তার অভিযোগ, সংবিধানে সংরক্ষিত আদিবাসী অধিকার পরিবর্তনের পরিকল্পনাও চলছে, যা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য বিপজ্জনক।
তিনি আরও বলেন, “রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আদিবাসী, দলিত এবং বঞ্চিত মানুষেরা অধিকার রক্ষার আন্দোলনে নেমেছেন। ত্রিপুরার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রতি আমাদের আহ্বান—বিরসা মুন্ডার আদর্শকে ধারণ করে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলুন।”
বিরসা মুন্ডার জন্মদিবসে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠান শুধু শ্রদ্ধা জানানোই নয়; বরং বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে আদিবাসী অধিকার রক্ষার প্রেক্ষাপটে কংগ্রেসের অবস্থান স্পষ্টভাবে তুলে ধরার একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ হয়ে ওঠে। আশীষ সাহার কথায়—“আজকের দিনে বিরসা মুন্ডার শিক্ষা আরও প্রাসঙ্গিক। অধিকার, পরিচয় ও সংস্কৃতি রক্ষার সংগ্রাম থামানো যাবে না।”
অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত নেতারা প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন যে আদিবাসীদের সমস্যা, বঞ্চনা ও সাংস্কৃতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে কংগ্রেস আগামীতেও সংগ্রাম চালিয়ে যাবে।



