Kamalasagar News : বিশালগড় থানার অন্তর্গত দক্ষিণ চম্পামুড়া ফের কেঁপে উঠল চুরির ঘটনার জেরে। রবিবার গভীর রাতে একাধিক জায়গায় হানা দিয়ে চোরের দল দাপট দেখায়। এলাকার প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নবোদয় সংঘ ক্লাবের কালী মন্দিরে চুরি ঘটনার খবর রীতিমতো ক্ষোভ ছড়িয়েছে গ্রামবাসীর মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দিরকে ঘিরে স্থানীয় মানুষদের ধর্মীয় ও সামাজিক আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। সেই মন্দিরের প্রণামী বাক্স ভেঙে নগদ অর্থ নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ফলে মন্দির কমিটি থেকে সাধারণ মানুষ, সকলেই একপ্রকার হতবাক।
চুরির ঘটনা এখানেই শেষ নয়। মন্দির থেকে মাত্র কয়েক পা দূরে কমলাসাগর বিজেপি মন্ডলের ৫০ নম্বর বুথ সভাপতি পবন দাসের বাড়িতে হানা দেয় দুষ্কৃতীরা। তার হিরো হোন্ডা হাঙ্ক মোটরবাইক (নম্বর TR01H6511) চুরি করে রাতের অন্ধকারে চম্পট দেয়। পরপর দুই ঘটনার জেরে পুরো গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। খবর পৌঁছতেই বিশালগড় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই ধরনের চুরির মূলে রয়েছে নেশার অভ্যাস। শহর থেকে গ্রাম—সব জায়গায় একাংশ যুবক মাদকের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ছে। নেশার টাকা জোগাড় করতেই তারা প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাই এবং অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। দক্ষিণ চম্পামুড়ার ক্ষেত্রেও একই ছবি উঠে আসছে। তবে গ্রামবাসীর মতে, এ শুধু কয়েকজন যুবকের দোষ নয়। এর সঙ্গে সরাসরি জড়িয়ে রয়েছেন কিছু নামধারী রাজনৈতিক নেতা। অভিযোগ উঠেছে, শাসক দলের ছত্রছায়ায় থেকে তারা নেশাজাত দ্রব্য ছড়াচ্ছেন গ্রামে গ্রামে। ফলে নতুন প্রজন্ম ক্রমশ অন্ধকার পথে ঢুকে পড়ছে।
এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এসব নেতাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে উল্টে আক্রান্ত হতে পারেন তারা। তাই ভয় আর হতাশার মধ্যেই দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ, প্রশাসন চোরের লাগাম টানতে ব্যর্থ হচ্ছে। শিক্ষালয় থেকে আদালত, মন্দির থেকে মসজিদ—কোনও জায়গাই রেহাই পাচ্ছে না। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও হানা দিচ্ছে চোরের দল।
বিশালগড় থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তারা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছে এবং দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করতে তল্লাশি চলছে। তবে মানুষ মনে করছে, শুধুমাত্র চোর ধরা নয়—এর পেছনে যে বড় মাদক ও অসামাজিক চক্র কাজ করছে, সেটাকেও ভাঙা জরুরি। না হলে চুরির ঘটনা থামবে না।
স্থানীয়দের স্পষ্ট বক্তব্য, প্রশাসন যদি দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ না নেয়, তবে খুব শিগগির জনরোষের মুখে পড়তে হতে পারে কর্তৃপক্ষকেই। দক্ষিণ চম্পামুড়ার মানুষ এখন একটাই প্রশ্ন তুলছে—মন্দির থেকে রাজনৈতিক নেতার বাড়ি, সর্বত্র চোরের এই দাপট কবে থামবে?
দক্ষিণ চম্পামুড়ার সাম্প্রতিক চুরি ঘটনাগুলি শুধু একটি এলাকার নিরাপত্তাহীনতার ছবি নয়, বরং সমাজজীবনের গভীরে গজিয়ে ওঠা নেশা ও অসামাজিক চক্রের বিপজ্জনক ইঙ্গিত। মন্দির থেকে বাড়ি, প্রণামী বাক্স থেকে মোটরবাইক—কোনও কিছুর উপরই যেন আর ভরসা রাখা যাচ্ছে না। প্রশাসনের দায়িত্ব শুধু অপরাধীদের ধরার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং নেশার বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে যুবসমাজকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনা।
গ্রামবাসীর আস্থা ফেরাতে পুলিশ ও প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। তা না হলে ভয়, ক্ষোভ আর হতাশার এই পরিবেশ জনরোষে পরিণত হবে—এমনটাই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।