হাতে পিস্তল মুখে রাম, শহর জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সন্ত্রাসীরা। শহর আগরতলা এখন সন্ত্রাসের আতুর ঘরে পরিণত হয়েছে। সুশাসন এর রাজ্যে পিস্তল নিয়ে রাত্রিবেলায় বাড়ি ঘরে হামলা চালাচ্ছে কিছু রাস্ত্রবাদী দলের লোক, এমনটাই এবার অভিযোগ উঠে আসছে। শহর আগরতলার বুকে পুলিশ স্টেশন থেকে ঢিল ছোরা দূরত্বে এবার কংগ্রেস নেতার বাড়িতে ঢুকে হামলা হুজ্জুতি , ভাংচুর এমনকি প্রাণ নাশের চেষ্টা চালায় কিছু দুষ্কৃতী। কিন্তু পুলিশ নির্বাক।
রবিবার রাত আনুমানিক সাড়ে দশটা বাজে। কংগ্রেস ভবন থেকে দলীয় কাজ কর্ম সেরে মসজিদ রোড স্থিত নিজ বাড়ি ফিরছিলেন কংগ্রেস এর যুব নেতা সাহাজান ইসলাম। তাঁর বাড়িতে প্রবেশ করা মাত্রই তাঁর পেছনে কিছু দুষ্কৃতী ধাওয়া করে তাঁর বাড়িতে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায়। ঐ সময় সাহাজান তাঁর মা, স্ত্রী ও ১ বছরের সন্তান ঘরে ছিল। তাদের নিয়ে একটি ঘরের দরজা বন্ধ করে কোনোক্রমে প্রাণ বাচায় গোটা পরিবার। কিন্তু দুষ্কৃতী দের আক্রমণ থামে না। উল্টে সাহাজান ইসলাম এর বাড়িতে সমস্ত কিছু ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে ছুটে যান কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ, আশিস কুমার সাহা সহ অন্যান্যরা। এদিকে ঘটনা স্থল থেকে পুলিশ নেতৃত্বদের নিরাপদে নিয়ে যেতে থাকলে পুলিশের উপরে ও হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। গোটা ঘটনার সাথে বিজেপি দলের যুব মরচার ছেলেরা জড়িত ছিল বলে সরাসরি অভিযোগ করেছেন সুদীপ রায় বর্মণ।
উল্লেখ্য, ঈদ এর দিনে রাজ্যের বিভিন্ন মহকুমায় সংখ্যালঘু দের উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয় , এমনটাই বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ উঠে আসে । সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক মাধ্যমে এসে তীব্র ভাষায় শাসক দল ও মুখ্যমন্ত্রী কে সরাসরি আক্রমণ শানায় সাহাজান ইসলাম। কিছু অমারজিত শব্দ ও প্রয়োগ করে সে। তাঁর এই ধরণের আচরণ কে আমরা কোনোভাবেই সমর্থন জানাচ্ছি না। কিন্তু রাতের আঁধারে বাড়ি ঘরে আক্রমণ, মহিলাদের উপর আক্রমণ – এই সমস্ত ঘটনার আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

যাই হোক, তাঁর এই অমার্জিত ভাষা প্রয়োগের পরিপ্রেক্ষিতেই এই ঘটনা ঘটে। ৯ বনমালিপুর এর মণ্ডল থেকে শুরু করে যুব মরচা সকলে মিলিত ভাবে তাঁর এই কর্মকাণ্ডের ধিক্কার জানিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে যে কোনো অপরাধের জন্যে রাজ্যে যেখানে আইন রয়েছে, পুলিশ প্রশাসন রয়েছে এবং শেষ অব্দি যখন তাদের কাছে গিয়েই মামলা দায়ের করেছেন তারা তবে এই ভাংচুর কেন ? এই অত্যাচার কেন ? বন্দুক হাতে নিয়ে তাঁর বাড়িতে আক্রমণ চালানো হয়েছে। সেই বন্দুকই বা কি করে এলো এই দুষ্কৃতীদের কাছে ?
এই গোটা ঘটনায় সাহাজান ইসলামের দোষ থাকলেও তাঁর চাইতে অনেক বেশি দোষী আক্রমণ কারীরা। আর এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এমনটাই প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী ও ।
রাজ্যে ধর্ম নিয়ে প্রতিহিংসা ক্রমশই বেড়ে চলেছে। এই গোটা ঘটনার সূত্রপাত ঈদ উজ জোহার ঘটে যাওয়া ঘটনাবলী কে ঘিরেই। বলা বাহুল্য , সেই ঘটনার সাথে জরিত গো রক্কক বাহিনী ও বজ্রং দলের বেশ কিছু অভিযুক্ত আজো বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেয় নি পুলিশ। এদিকে সেই ঘটনার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য পুলিশ কে কটাক্ষ করতেই সাহাজান এর বিরুদ্ধে মামলা ও হয়েছে। উল্টে তাঁর বাবা এবং বড় ভাই কে ও গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে পুলিশ। এই রাজ্যে পুলিশ প্রশাসন ও যে দলদাসে পরিণত হয়েছে সেই অভিযোগ কোনোভাবেই খণ্ডানো যায়না। এদিকে শহরের বুকে এতো বড় ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর এই সুশাসনের রাজ্যে আসলেই নিরাপত্তা হীনতা এবং আতঙ্কে ভুগছেন জনগণ। সুশাসনের এই চিত্র তীব্র নিন্দনীয় এবং ধিক্কার পাওয়ার যোগ্য বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে শিক্ষিত সমাজ এবং বুদ্ধিজীবীরা।