Melaghar PMGAY News : মেলাঘর পৌরসভার ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। অভিযোগ, বরাদ্দ পাওয়ার পর ঘর নির্মাণ সম্পন্ন বা অর্ধসমাপ্ত থাকা সত্ত্বেও এখনো এক টাকাও পাননি বহু সুবিধাভোগী পরিবার। ফলে ঋণ, সুদ এবং আর্থিক চাপে পড়ে অনেকেই দিশেহারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার অভাব শুরু হয়েছে পৌরসভা স্তরে। সরকার গরিব মানুষের জন্য আবাস যোজনার মাধ্যমে লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ করলেও সেই টাকা পৌরসভায় এসে আটকে যাচ্ছে। সুবিধাভোগীদের দাবি—আমলা থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব পর্যন্ত কেউ কেউ যেন অর্থ আত্মসাতের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন।
আরমানের মাধ্যমে বরাদ্দ পাওয়া এই দুই ওয়ার্ডের ঘরগুলির জন্য পৌরসভা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, ধাপে ধাপে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হবে। সেই প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করেই অনেকেই বাইক বিক্রি করেছেন, কেউ উচ্চ সুদে ঋণ নিয়েছেন, কেউ আবার জমি বিক্রি করে ঘর নির্মাণে হাত লাগিয়েছেন। পৌরসভার পক্ষ থেকে একাধিকবার ঘরের ছবি ও নথিপত্র সংগ্রহ করা হলেও আজও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা জমা পড়েনি।
ফলে অর্ধনির্মিত বহু ঘর আজ পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ঘরগুলির ভেতর জন্মেছে বড় বড় গাছ, জমেছে নোংরা আবর্জনা। ব্যাঙ্কে গিয়ে খোঁজ নিলে সুবিধাভোগীরা জানেন—টাকা আসেনি। অথচ পৌরসভার দাবি—“টাকা ঢুকে গেছে, ব্যাঙ্কে দেখুন।” এই পরস্পরবিরোধী তথ্য মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করেছে।
সম্প্রতি পৌরসভার বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। আবাস যোজনা নিয়ে নতুন করে অভিযোগ উঠতেই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের বক্তব্য—
“আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ। ধারদেনা করে ঘর তৈরি করেছি। এখন যদি সরকার অনুমোদিত টাকাটুকুও না পাই, তাহলে ঋণ শোধ করব কীভাবে?”তাদের একমাত্র দাবি—অবিলম্বে আবাস যোজনার সমস্ত টাকা ব্যাঙ্কের মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে ট্রান্সফার করা হোক, যাতে আর্থিক সংকট থেকে মুক্তি পায় দরিদ্র পরিবারগুলো।
সরকার প্রকল্প ঘোষণা করতে যতটা তৎপর, সেই প্রকল্পের অর্থ যথাসময়ে এবং স্বচ্ছভাবে বিতরণে ততটাই গাফিলতি দেখা যায়। ফলে বরাদ্দকৃত অর্থ বাস্তবে সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছাতে দেরি হয়, আর মধ্যস্ততাকারী স্তরে দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার সুযোগ তৈরি হয়। এই প্রশাসনিক দুর্বলতা সরকারের প্রকৃত সদিচ্ছাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।
মেলাঘর পৌরসভার আবাস যোজনা প্রকল্প নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে, তা শুধু কয়েকটি পরিবারের সমস্যাই নয়—এটি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নের সামগ্রিক পদ্ধতি নিয়ে বড় প্রশ্ন তোলে।
সরকারের উদ্দেশ্য ছিল নিম্নআয়ের মানুষের মাথার উপর নিরাপদ ছাদ নিশ্চিত করা, কিন্তু মাঠপর্যায়ের অব্যবস্থাপনা ও দায়িত্বহীনতার কারণে সেই স্বপ্ন আজ অনেকের কাছে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। স্বচ্ছ তদন্ত, দ্রুত আর্থিক সাহায্য বিতরণ এবং কঠোর নজরদারি ছাড়া এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়।
এখন সময় এসেছে প্রকল্পের প্রকৃত উপকারভোগীদের পাশে দাঁড়ানোর—কারণ উন্নয়নের আসল মানে কাগজে নয়, মানুষের জীবনে প্রতিফলিত হওয়া।



