Sachindra Lal Sinha : ত্রিপুরার প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মঙ্গলবার প্রদেশ কংগ্রেস ভবনে এক স্মরণসভা আয়োজন করা হয় ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সেবা দলের উদ্যোগে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি আশীষ কুমার সাহা সহ সংগঠনের অন্যান্য নেতৃত্ব।
শুরুতেই শচীন্দ্রলাল সিংহের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় শচীন্দ্রলাল সিংহের জীবনদর্শন, রাজনৈতিক অবদান এবং রাজ্যের প্রতি তাঁর অনবদ্য ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য রাখেন প্রদেশ নেতৃত্বরা।
আশীষ সাহা জানান, রাজ্যের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শচীন্দ্রলাল সিংহ জাতি–উপজাতি নির্বিশেষে সকলের কাছে ছিলেন অত্যন্ত প্রিয় মানুষ—‘সচিদা’ নামেই তিনি জনমানসে পরিচিত ছিলেন। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং কর্মসংস্থান—প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর উদ্যোগ ও দূরদর্শিতা আজও রাজ্যের উন্নয়ন-ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়।
সভাপতি আশীষ সাহা বর্তমান সময়ে সমাজে জাতিগত বিভাজন, ধর্মীয় উগ্রতা ও রাজনৈতিক স্বার্থসর্বস্বতার প্রসার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে, এই অশুভ প্রবণতার বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হলে শচীন্দ্রলাল সিংহের মানবিক মূল্যবোধ, ঐক্যের দর্শন এবং গণতান্ত্রিক চেতনা আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করা জরুরি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গেও শচীন্দ্রলাল সিংহের অনন্য ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। সাহা জানান, মুক্তিকামী শক্তির আন্দোলনে এবং সেদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় তৎকালীন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর সহায়তা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরণার্থী হিসেবে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের আশ্রয়, খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা প্রদানে শচীন্দ্রলাল সিংহ যে উদার মানসিকতা দেখিয়েছিলেন, তা আজও বাংলাদেশের মানুষ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
এ ছাড়াও সভায় উল্লেখ করা হয়, ১৯৫০ সালে তিনি প্রথম আদিবাসী প্রতিনিধিদের কলকাতায় পাঠিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে তাঁদের উন্নয়ন-সংক্রান্ত দাবি তুলে ধরার সুযোগ করে দেন।
ভূমি সমস্যা সমাধান, পুনর্বাসন এবং ক্ষমতায়ন—এসব ক্ষেত্রেও তাঁর কাজ আদিবাসী সমাজে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আজও তাঁরা ‘সচিন বাবু’-কে আপনজনের মতোই স্মরণ করেন।
স্মরণসভায় তাঁর আদর্শকে সামনে রেখে রাজ্যের ঐক্য রক্ষার সংকল্প ব্যক্ত করেন উপস্থিত নেতারা।
সচীন্দ্রলাল সিংহের মৃত্যুবার্ষিকীর এই স্মরণসভা শুধু এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানানোই নয়, বরং তাঁর জীবনের আদর্শ—ঐক্য, মানবিকতা এবং উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার—নতুন করে ধারণ করার একটি প্রেরণাদায়ক মুহূর্ত হয়ে রইল।



