Tinku Roy Press Meet : নতুন শ্রম কোড কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার আগরতলায় মুখোমুখি হল দুই ভিন্ন সুর—একদিকে শ্রমিকদের তীব্র আপত্তি, অন্যদিকে সরকারের আশাবাদী ব্যাখ্যা। শহরের রাস্তায় সিটুর বিক্ষোভ মিছিল যখন নতুন আইন বাতিলের দাবিতে সরব অন্যদিকে বিজেপি কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে শ্রমমন্ত্রী টিঙ্কু রায় জানান নতুন শ্রম কোড শ্রমিকদেরই উপকারে আসবে।
ত্রিপুরা সিটু রাজ্য কমিটির উদ্যোগে এদিন রাজধানীর বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করে ওরিয়েন্ট চৌমুহনীতে সমবেত হয় শ্রমিকদের বিশাল মিছিল। সিটু নেতা মানিক দে অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্রের ২০১৯–২০ সালে পাশ করা চারটি শ্রম কোড পূর্বতন ২৯টি শ্রম আইনকে সংকুচিত করেছে, যার ফলে শ্রমিকদের বহু মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হবে।
তার দাবি—মজুরি, সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মস্থলের স্থায়িত্ব, ইউনিয়ন গঠন ও ধর্মঘটের অধিকার সংকুচিত হয়ে মালিক পক্ষের হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা চলে যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, বিপুল বিরোধিতার কারণে এতদিন কেন্দ্র শ্রম কোড কার্যকর করতে পারেনি। কিন্তু সম্প্রতি ২১ নভেম্বরের খসড়া বিজ্ঞপ্তির পর দেশজুড়ে নতুন করে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে।
মানিক দে বলেন, “এটা অস্তিত্বের লড়াই। কোড বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন থামবে না।” তাঁর দাবি, নতুন ব্যবস্থায় শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হবে, বাজারে ক্রয়ক্ষমতা কমবে এবং শিল্প–কৃষি উভয় ক্ষেত্রেই মন্দা বাড়বে। সিটু ইতোমধ্যে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন ও কৃষক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, এবং প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
অন্যদিকে শ্রমমন্ত্রী টিঙ্কু রায় সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, নতুন শ্রম কোড কার্যকর হলে মজুরি, বোনাস ও অন্যান্য সুবিধার উপর নজরদারি আরও স্বচ্ছ হবে। বহু রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম থাকায় শ্রমিকরা এতদিন সমান সুবিধা পাননি—অভিন্ন কোড চালু হলে সারা দেশে একক ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, শ্রমিকদের তথ্যভুক্ত করতে একটি জাতীয় পোর্টাল তৈরি হচ্ছে যেখানে শ্রমিক ও নিয়োগকর্তা—উভয়ের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। এর ফলে নজরদারি ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া শক্তিশালী হবে এবং ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান সহজ হবে।
চা শ্রমিকদের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী জানান, ২০১৮ সালে দৈনিক মজুরি ছিল ₹১০৪, যা বর্তমান সরকার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বহু পরিবারকে জমির পাট্টা এবং প্রায়োরিটি রেশন কার্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, “যে কাজ স্বাধীনতার পর ৫০–৬০ বছর হয়নি, তা কয়েক বছরের মধ্যেই করা সম্ভব হয়েছে।”
বামপন্থী সংগঠনের প্রতিবাদকে তিনি রাজনৈতিক বলে উল্লেখ করেন। তার মতে, অতীতেও এ ধরনের সংগঠন প্রযুক্তিগত বা প্রশাসনিক সংস্কারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
একদিকে সিটুর অভিযোগ—নতুন শ্রম কোড শ্রমিকদের অধিকার সংকুচিত করবে; অন্যদিকে সরকারের বক্তব্য—এই কোডের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকরা প্রথমবারের মতো সঠিক সুবিধা পাবে।
নতুন শ্রম আইন কার্যকর হওয়ার আগে থেকেই রাজ্যে যে উত্তাপ তৈরি হয়েছে, তা ইঙ্গিত দিচ্ছে—আগামী দিনেও এ নিয়ে বিতর্ক ও আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।



