Unakoti Jal Jeevan Mission : কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম স্বপ্নের প্রকল্প ‘জল জীবন মিশন’ এবং ‘অটল জলধারা’—এই দুই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল দেশের প্রতিটি ঘরে নিরাপদ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। ত্রিপুরার ঊনকোটি জেলার পাহাড়ি এলাকায় এই প্রকল্পগুলোর সুফল আজও অধরা। সরকারি নথিতে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নের কথা উঠে এলেও বাস্তবে প্রায় ৭০টি পরিবারের তিন শতাধিক মানুষ এখনও নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত।
ঊনকোটি এডিসি ভিলেজের ২ নম্বর ওয়ার্ডের শিববাড়ি ও বড় শিববাড়ি এলাকায় গেলে চোখে পড়ে পাহাড়বাসীর নিত্যদিনের জল সংগ্রামের করুণ ছবি। নিয়মিত জল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি থাকলেও বাস্তবে জল আসে অনিয়মিতভাবে, তাও প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। অনেক সময় একটানা কয়েক দিন জল সরবরাহ বন্ধ থাকে। ফলে পাহাড়ি এলাকার মানুষ, বিশেষ করে শিশু ও মহিলাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খাড়া পাহাড় বেয়ে নিচে নামতে হয় জল সংগ্রহের জন্য।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বাধ্য হয়ে তারা প্রায় শুকিয়ে যাওয়া ছড়া কিংবা অস্বাস্থ্যকর প্রাকৃতিক জলাধার থেকেই জল তুলছেন। এতে একদিকে যেমন দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে জলবাহিত রোগের আশঙ্কা। পাহাড়ি এলাকায় নিরাপদ পানীয় জলের অভাব শিশুদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে মনে করছেন সমাজকর্মীরা।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো নুনছড়া এলাকায় কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে নির্মিত এই প্ল্যান্ট উদ্বোধনের কয়েক মাসের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ওই প্ল্যান্ট থেকে একদিনের জন্যও তাদের এলাকায় জল পৌঁছায়নি। বর্তমানে প্ল্যান্টটি কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে পাহাড়বাসীর প্রশ্ন—জল জীবন মিশনের নামে বরাদ্দ হওয়া বিপুল অর্থ কি শুধুই কাগজে-কলমে উন্নয়ন দেখানোর জন্য ব্যয় হয়েছে? নাকি প্রকল্প বাস্তবায়নে চরম গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন পাহাড়ের মানুষ? পাহাড়বাসীর দাবি, অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে নিয়মিত ও নিরাপদ পানীয় জল সরবরাহ নিশ্চিত করা হোক। কারণ জল শুধু উন্নয়ন নয়, এটি পাহাড়ের মানুষের মৌলিক অধিকার।
কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে জল জীবন মিশন ও অটল জলধারা প্রকল্পের ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে ঊনকোটি জেলার পাহাড়ি এলাকায় এক ফোঁটাও নিয়মিত পানীয় জল পৌঁছায়নি, যা সরকারের চরম ব্যর্থতা, দায়িত্বহীনতা এবং জনগণের মৌলিক অধিকারের প্রতি অবহেলার স্পষ্ট প্রমাণ।
তবে এই ঘটনা প্রশাসনিক ব্যর্থতার জ্বলন্ত উদাহরণ। সরকারের স্বপ্নের প্রকল্পের নাম থাকলেও বাস্তবে পাহাড়বাসীর জীবনে তার কোনো প্রতিফলন নেই। নিরাপদ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হয়ে মানুষ প্রতিদিন যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে, তা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেও গভীরভাবে উদ্বেগজনক।
অবিলম্বে বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা, স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার মাধ্যমে প্রকল্পগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন না হলে এই সংকট আরও ভয়াবহ আকার নেবে। পাহাড়ের মানুষের জীবন ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় এখনই সরকারের সক্রিয় ও দায়বদ্ধ পদক্ষেপ একান্ত প্রয়োজন।



