Tripura Smart Meter : ত্রিপুরা রাজ্যের শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত জনগণের জীবনে নতুন এক দুর্ভোগের নাম হয়ে উঠেছে স্মার্ট মিটার। রাজ্য জুড়ে এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকেই একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ছে বিদ্যুৎ বিভাগে— সন্দেহজনক বিল, অতিরিক্ত খরচ, অনলাইন জটিলতা ও প্রবীণ নাগরিকদের ভোগান্তি। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার উদয়পুর বিভাগীয় কমিটির উদ্যোগে পার্থ কর্মকারের নেতৃত্বে সিপিআই (এম-এল) একটি গুরুত্বপূর্ণ ডেপুটেশন জমা দেয় উদয়পুর বিদ্যুৎ দপ্তরের ডিজিএম-এর কাছে।
ডেপুটেশনের পর পার্থ কর্মকার জানান, স্মার্ট মিটার এখন সাধারণ মানুষের কাছে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, “যেভাবে অতিরিক্ত বিল আসছে, তা সাধারণ মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারগুলোর পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব নয়।” তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এই মিটার বাধ্যতামূলক করা যাবে না। স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিল তৈরি হচ্ছে তা বহু ক্ষেত্রেই ভুল ও অবাস্তব পরিমাণের বিল তৈরি করছে বলে অভিযোগ।
স্মার্ট মিটার ব্যবহারের জন্য যে ডিজিটাল দক্ষতা দরকার, তা সকলের মধ্যে নেই। প্রবীণ নাগরিক ও যাঁরা স্মার্টফোন বা অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না, তাঁরা পড়ছেন বিপাকে। অনলাইন প্রতারণার আশঙ্কাও বাড়ছে। পার্থ কর্মকার বলেন, “এটা একরকম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা— সব শ্রেণির মানুষের প্রযুক্তিগত সক্ষমতা সমান নয়।”
উল্লেখযোগ্যভাবে পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্র সরকার স্মার্ট মিটার প্রকল্প স্থগিত রেখেছে। সেই উদাহরণ টেনে পার্থ কর্মকার জানান, “যেখানে অন্যান্য রাজ্য বাস্তবতা বুঝে পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেখানে ত্রিপুরা সরকার কেন এত জোর করে এই প্রকল্প চাপিয়ে দিচ্ছে?” তিনি আরও জানান, স্মার্ট মিটার প্রকল্প অবিলম্বে প্রত্যাহার না হলে রাজ্যজুড়ে বৃহত্তর গণআন্দোলন সংগঠিত হবে।
ডেপুটেশনে মোট ১২টি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
স্মার্ট মিটার বাধ্যতামূলক না করা
গ্যাসের দামের অযৌক্তিক বৃদ্ধি প্রত্যাহার
প্রবীণ নাগরিকদের জন্য বিকল্প পদ্ধতির ব্যবস্থা
এই দাবিগুলোর বাস্তবায়ন না হলে সিপিআই (এম-এল) বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ত্রিপুরার স্মার্ট মিটার প্রকল্প এখন এক গুরুত্বপূর্ণ জনস্বার্থের ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। প্রযুক্তির নামে জনজীবনে যে অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে, তা অবিলম্বে সরকারকে বিবেচনা করতে হবে। না হলে সাধারণ মানুষের স্বার্থে গণআন্দোলনের ঢেউ সামলাতে প্রস্তুত থাকতে হবে সরকারকে।