Tripura leads in political crime
আগামীকাল দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে লোকসভা নির্বাচন। প্রথম পর্যায়ের ভোট গ্রহন হতে চলেছে পশ্চিম ত্রিপুরা সহ দেশের আরও ১০১ টি আসনে । সর্বমোট ১০২ টি আসনে প্রথম চরনের ভোট গ্রহন। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে ভোটারদের মধ্যে এবং ভোট প্রার্থীদের মধ্যে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেহেতু এই নির্বাচন গোটা দেশের সাথে আমাদের রাজ্যের ও ভবিষ্যৎ নির্মাণে গ্রুত্বপুরন ভূমিকা পালন করবে সেক্ষেত্রে আগামীকাল রাজ্যের পশ্চিম আসনের ভোটাররা ঠিক কোন দল এর প্রার্থী কে বেছে নেবেন সেটা অবশ্যই ভাবনা চিন্তা করার বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে।
তার আগে বিগত ১০ বছরে দেশের সাথে রাজ্যের পরিবেশ পরিস্থিতি কতটা পরিবর্তন হয়েছে সেটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিছু তথ্য নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তর পূর্বাঞ্চলের ক্ষুদ্র রাজ্য ত্রিপুরার শান্তি সম্প্রীতির আবহ নিয়ে কিছু আলোচনা তুলে ধরা হল ।
• কিছুদিন আগে একটা সার্ভে তে দেশে সর্বাধিক মাদক সেবনকারী রাজ্য গুলির নামের তালিকা প্রকাশ পেয়েছে। আর তাতে প্রথম স্থানে ছত্তিসগড় এবং ঠিক তার পরের স্থানে পাওয়া গেছে ত্রিপুরার নাম।
• দ্বিতিয়ত সন্ত্রাসের দিক থেকে উত্তর পূর্ব ভারতে শীর্ষ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরার নাম।
• এছাড়া ত্রিপুরায় অপরাধমূলক তথ্য ঘাঁটলে দেখা যায় বিগত ৬ বছরে ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের আওতাধীন অপরাধের সংখ্যা বহুলাংশে বেড়েছে।
এটা আমদের কথা নয়। ত্রিপুরা পুলিশের নিজস্ব ওয়েব পোর্টালে এই তথ্য দেওয়া আছে।
তথ্য অনুযায়ী,
২০১৮ এর নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে সবচাইতে বেশি পরিমানে বেড়েছে রাজনৈতিক সন্ত্রাস।
• পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১৬৫০ থেকে ১৬৬১ অব্দি মোট আইপিসি মামলা ধার্য হলেও ২০১৯ এ এই মামলার সংখ্যা এক লাফে বেড়ে গিয়ে হয় ২০৭৬ টি।
• সিপাহিজলা জেলায় সেই তুলনায় খানিকটা ব্যতিক্রম রয়েছে। ২০১৪ তে সর্বাধিক মামলা ধার্য হয়, এর পর ২০১৮ তে সরকার পরিবর্তন কালে ৫৭৭ টি আইপিসি মামলা হয়। পরবর্তী সময় টা কিছুটা কমে ৪৮৪ এর কোঠায় এসে থেমে যায়।
• দক্ষিন ত্রিপুরা জেলায় ২০১৯ এ সর্বাধিক মামলা নথিভুক্ত হয়েছে যার সংখ্যা ১০৭৭ টি।
• জিআরপি থানায় নন আইপিসি ভুক্ত মামলার সংখ্যা ২০২৩ এ সর্বাধিক ছিল।
এছাড়া ও বাকি ৫ টি জেলা এবং ত্রিপুরার সার্বিক অপরাধের চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় রাজ্যে ২০১৯ সালের দিকে অপরাধের মাত্রা সর্বাধিক ।
এছাড়া রাজ্যের আনাচে কানাচে খুব সহজেই সরকারি লাইসেন্স নিয়ে অবাধে খুলছে মদের দোকান। এমনকি শহরতলি তে বড় বড় রেস্তোরাঁ এবং থ্রি স্টার হোটেল গুলো তে রয়েছে মাদক সেবনের জন্যে সুব্যাবস্থা। তার পাশাপাশি , ত্রিপুরা রাজ্য ড্রাগস সেবন এবং পাচারের জন্যে গোটা উত্তর পুরবাঞ্চন সহ পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে ও দারুন সুনাম কুড়চ্ছে। আর এই সব তথ্য বেড়িয়ে আসছে বিগত বছর পাঁচেক এর মধ্যেই।
২০১৮ তে বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন বিপ্লব কুমার দেব। ২০২২ এ উপর মহলের নির্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছারেন তিনি। কেন মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছাড়তে হল, সেই জল্পনা আজো কায়েম রয়েছে। অনুগামীদের মন্তব্য, উনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন রাজ্যের জন্যে। কিন্তু হিসেব মেলালে দেখা যায় ২০১৮ এর পর বিপ্লব কুমার দেব এর শাসনে ত্রিপুরায় অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডের সংখ্যা মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার প্রভাবেই দিল্লী থেকে এই পদত্যাগের নির্দেশ এয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।
এবার লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিম আসন থেকে সাংসদ প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব। ৪ বছর মুখ্যমন্ত্রী থাকা কালীন ত্রিপুরার যে উন্নয়ন তিনি করেছেন , সচেতন ভোটার রা সেই ভাবনা মাথায় রেখেই যদি ভোট দেন তবে উনার জয়ের মাত্রা কতটা স্থিতিশিল হবে সে নিয়ে সন্দেহ থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ ত্রিপুরার ইতিহাসে প্রথম এমন ঘটনা। যা একদিকে বিরোধী শিবির কে দারুন মাইলেজ পাইয়ে দিয়েছিল। তবে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে হাড্ডাহাড্ডি দুই পক্ষের লড়াইয়ে ভোটার গন বিপ্লব কুমার দেব কে বেছে নেবেন নাকি নিখুঁত সরল সাবলীল বিরোধী প্রার্থী আশিস কুমার সাহা কে ভোট দেবেন সেটাই দেখার বিষয়।