Tripura Khowai News : খোয়াই জেলার পশ্চিম সোনাতলা পঞ্চায়েতের মহাদেবটিলা বাজার সংলগ্ন একটি পাড়ায় বুধবার রাতে মর্মান্তিক একটি ঘটনা সামনে এসেছে। নিজের ঘর থেকেই আট বছরের এক নাবালিকা কন্যার রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। মৃত শিশুটির নাম আঁখি দেবনাথ (৮)। অভিযোগ, শিশুটির বাবা আশীষ দেবনাথ (৪০) ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলা কেটে তাকে খুন করেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বুধবার রাত আনুমানিক ন’টা নাগাদ পেশায় টমটম চালক বিনন্দ দেবনাথ বাড়িতে ফিরে এসে অন্যান্য দিনের মতোই নিজের নাতনি আঁখিকে ডাকতে থাকেন। একাধিকবার ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করেন। তখনই মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন নাতনিকে। তৎক্ষণাৎ প্রতিবেশীদের খবর দেওয়া হয় এবং পুলিশে জানানো হয়।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, শিশুটির শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরিবারের সদস্য ও স্থানীয়দের অভিযোগ, আঁখির বাবা আশীষ দেবনাথই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। ঘটনার পরেই অভিযুক্ত আশীষ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় বলে জানা যায়।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আশীষ দেবনাথ গত চার-পাঁচ বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। তার উন্মত্ত আচরণের কারণে স্ত্রীও সম্প্রতি আট বছরের মেয়েকে রেখে অন্যত্র চলে যান বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। ঘটনার সময় ঘরে শিশুটির ঠাকুমিও উপস্থিত ছিলেন, যিনি মানসিকভাবে অসুস্থ বলেও জানা গেছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পর আশীষ দেবনাথ বাড়ির পাশে একটি খড়ের ঘরের মধ্যে লুকিয়ে ছিল। পুলিশ তাকে দেখতে পেয়ে ধাওয়া করলে সে পালানোর চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ তাকে ধরে থানায় নিয়ে যায়।
এই নৃশংস ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে খোয়াই থানার পুলিশ। অভিযুক্তের মানসিক অবস্থার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে, পাশাপাশি ক্ষোভ ও আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে।
এই মর্মান্তিক ঘটনা সমাজের সামনে এক গভীর ও বেদনাদায়ক বাস্তবতাকে তুলে ধরেছে। পারিবারিক অস্থিরতা, মানসিক অসুস্থতা এবং সামাজিক অবহেলার ফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে, আট বছরের এক নিষ্পাপ শিশুর মৃত্যু তারই জ্বলন্ত উদাহরণ
সময়মতো মানসিক রোগীদের চিকিৎসা ও তদারকি না হলে এমন ট্র্যাজেডি যে কোনো পরিবারে নেমে আসতে পারে। এই ঘটনার নিরপেক্ষ ও কঠোর তদন্তের মাধ্যমে দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পাশাপাশি ভবিষ্যতে এমন ঘটনা রোধে প্রশাসন ও সমাজকে আরও সচেতন ও মানবিক ভূমিকা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।



