Tripura Khowai News : ত্রিপুরার খোয়াই জেলার উত্তর মহারানিপুর গ্রামে সরকারি ছাত্রী নিবাস নির্মাণকাজ ঘিরে দেখা দিয়েছে চরম অস্থিরতা ও জনরোষ। অভিযোগ উঠেছে, শাসকদল বিজেপির এক নেতার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে নির্মাণকর্মীদের ওপর এবং দাবি করা হয়েছে চাঁদা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন কোনও দৃশ্যমান পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার সকাল থেকে রাস্তায় নামে স্থানীয় জনতা।
উত্তর মহারানিপুরের বলারাম কোবরা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় চত্বরে ত্রিপুরা সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় একটি ‘এসটি গার্লস হোস্টেল’ নির্মাণের কাজ চলছিল। ২১ জুন, দুপুর ২টার দিকে যখন ঠিকাদার বিক্রম দেববর্মার নেতৃত্বে নির্মাণকাজ শুরু হয়, ঠিক সেই সময় সীতেশ দেববর্মা ও প্রণজিত দেববর্মা ওরফে প্রনয় নামক দুই ব্যক্তি নির্মাণস্থলে এসে নির্মাণশ্রমিকদের ভয় দেখাতে শুরু করে।
অভিযোগ অনুযায়ী, তাঁদের হাতে ছিল রড ও ছুরি। তাঁরা শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “চাঁদা না দিলে এখানে আর একটাও ইট বসবে না।” এরপর শ্রমিকদের উপর চালানো হয় আক্রমণ, যাতে বেশ কয়েকজন গুরুতরভাবে আহত হন। ভয়ভীতি দেখিয়ে অভিযুক্তরা এলাকা ছাড়ার হুমকি দিয়েই সরে পড়ে।
প্রাপ্ত অভিযোগপত্রে প্রণজিত দেববর্মার রাজনৈতিক পরিচয় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে— তিনি খোয়াই জেলা বিজেপি জনজাতি মোর্চার সহ-সভাপতি। এই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অবস্থান থাকা সত্ত্বেও, কিংবা সেই কারণেই, ঘটনার পর দীর্ঘ ৯ দিন অতিবাহিত হলেও স্থানীয় প্রশাসন কোনও ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এই বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে প্রবল ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন,
একটা সরকারি কাজ বন্ধ করে দেওয়া হলো দিনের পর দিন, অথচ অভিযুক্তদের টিকিটও ছোঁয়া হলো না। এটা কি তাহলে রাজনৈতিক প্রভাব?”
ঘটনার প্রতিকার না পাওয়ায় সোমবার সকাল থেকেই উত্তরের মহারানিপুর গ্রামে শুরু হয় পথ অবরোধ। স্থানীয় জনগণ মহাসড়কে ব্যারিকেড তৈরি করে দাবি তোলে—
হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে
ছাত্রাবাস নির্মাণকাজ অবিলম্বে পুনরায় শুরু করতে হবে
হোস্টেল কার্যকর করতে নিরবিচারে কাজ চালিয়ে যেতে হবে
নির্মাণস্থলে স্থায়ী পুলিশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
অবরোধ চলাকালীন পরিস্থিতি যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সে কারণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন তেলিয়ামুড়া মহকুমার অতিরিক্ত মহকুমা শাসক (ADM) ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (SDPO) পান্নালাল সেন। তাঁর আশ্বাস ছিল,
“আক্রান্তদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে, নির্মাণ কাজ অবিলম্বে শুরু হবে, এবং অভিযুক্তদের বিষয়ে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রশাসনের আশ্বাসে আপাতত অবরোধ তুলে নেয় স্থানীয়রা। তবে তাঁদের কণ্ঠে ছিল হুঁশিয়ারি—
“এটা প্রথম পদক্ষেপ। যদি প্রশাসন আবার চুপ থাকে, তাহলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব আমরা।”
এই হোস্টেলটি মূলত আদিবাসী কন্যাশিক্ষার্থীদের জন্য নির্মিত হচ্ছে। কয়েকজন ছাত্রী ইতিমধ্যেই ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে, কিন্তু নির্মাণ সম্পূর্ণ না হওয়ায় এবং নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কাজ বন্ধ থাকায় হোস্টেলটি এখনও কার্যকরভাবে চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে এসব ছাত্রীদের শিক্ষা ও বাসস্থানের অধিকার আজ প্রশ্নের মুখে।
স্থানীয়দের পক্ষ থেকে অভিযোগের অনুলিপি ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, উপজাতি কল্যাণ মন্ত্রী, টিপ্রা আদিবাসী অটোনোমাস কাউন্সিল (TTADC)-এর মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবু এখনও পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
ন্যায়ের প্রত্যাশা বনাম রাজনৈতিক প্রভাব
ঘটনার পর থেকেই উত্তরের মহারানিপুরে ছড়িয়ে পড়েছে একটাই প্রশ্ন—
“আইনের শাসন কি রাজনৈতিক প্রভাবে মাথা নত করবে? নাকি নিরপেক্ষ প্রশাসন মানুষের বিশ্বাস পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে?”
এই প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু ততদিন, উত্তর মহারানিপুরের মানুষ রাস্তায়, এবং অপেক্ষায়— প্রকৃত ন্যায়ের।