Teliamura Drugs News : ত্রিপুরায় নেশা কারবারের জাল দিন দিন ক্রমশ গভীর হচ্ছে। রাজ্যজুড়ে পুলিশের কঠোর নজরদারির মধ্যেও পাচারচক্রের সদস্যরা নতুন রুট, নতুন কৌশলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়াল তেলিয়ামুড়া ঈষা বাড়ি রেল স্টেশন এলাকায়। বৃহস্পতিবার সেখানে যৌথ অভিযানে পুলিশ ও সিক্রেট এজেন্সির সদস্যরা আটক করলেন এক তরুণী গৃহবধূকে, যার কাছ থেকে উদ্ধার হলো প্রায় ৭ লক্ষ টাকার ব্রাউন সুগার ।
সূত্র অনুযায়ী, সিলচর থেকে আগরতলা অভিমুখে যাত্রীবাহী ট্রেনে করে নিষিদ্ধ নেশা দ্রব্য নিয়ে ফিরছিলেন খয়েরপুরের ওই মহিলা। গোপন সূত্রে পাচারচক্রের গতিবিধির খবর পেয়ে তেলিয়ামুড়া ইস্কন দিশাবাড়ি রেল স্টেশনের প্রবেশমুখে বিশেষ অভিযান চালায় পুলিশ। সেখানেই সন্দেহভাজন হিসেবে তাকে আটক করা হয়। তল্লাশিতে তার কাছ থেকে চারটি সফটকেস উদ্ধার হয়, যার ভেতরেই লুকোনো ছিল ব্রাউন সুগার।
গ্রেফতারের পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন অভিযুক্ত। সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন—ভিডিও না করতে। দাবি করেন, এ ধরনের কাজ তিনি আগে কখনো করেননি। পরিবারের কেউ জানতে পারলে বিপদ হবে বলেও জানান। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। জানা গেছে, মহিলার বাপের বাড়ি সূর্যমণিনগর এলাকায়, আর শ্বশুরবাড়ি খয়েরপুরে।
তবে নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষের মতে, ব্যক্তিগত দাবি যতই থাকুক, এই ঘটনার পিছনে বড়সড় কোনো পাচারচক্রের হাত রয়েছে। সম্প্রতি ত্রিপুরায় নেশাজাতীয় দ্রব্য পাচারের হার উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে। মিয়ানমার সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থান, বিভিন্ন আন্তঃরাজ্য রুটের ব্যবহার এবং আর্থিক প্রতিশ্রুতির লোভ মানুষকে এমন ঝুঁকিপূর্ণ পথে টেনে আনছে। শুধু যুবকরাই নয়, এখন বহু নারীও পাচারকারীদের দলে যুক্ত হচ্ছে—যা পুলিশের কাছে নতুন চ্যালেঞ্জ।
অভিযুক্ত গৃহবধূ যে বড় কোনো চক্রের অংশ কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এই ঘটনায় আবারও পরিষ্কার—ত্রিপুরায় মাদকবিরোধী লড়াইয়ে আরও শক্তিশালী নজরদারি জরুরি হয়ে পড়েছে।
ত্রিপুরায় নেশা সংক্রান্ত অপরাধের বিস্তার এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটি ধীরে ধীরে একটি সংগঠিত, বিপজ্জনক নেটওয়ার্কে পরিণত হচ্ছে। খয়েরপুরের গৃহবধূর গ্রেফতার সেই বৃহত্তর সমস্যারই সাম্প্রতিক উদাহরণ। সমাজের সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে তরুণ-তরুণী ও গৃহবধূ—সবাই এখন পাচারচক্রের টার্গেটে পরিণত হচ্ছে, যা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, কেবল পুলিশি নজরদারি নয়, পুরো সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে নেশা বিরোধী অভিযানে। সচেতনতা, কঠোর আইন প্রয়োগ, আন্তঃরাজ্য অভিযান — সব মিলিয়েই ত্রিপুরাকে এই বিপজ্জনক নেশা দৌরাত্ম্য থেকে মুক্ত করতে পারে। এখনই উদ্যোগ না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আরও বড় বিপদের মুখে পড়ে যাবে।



