খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Thursday, 13 November 2025 - 07:39 PM
বৃহস্পতিবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৫ - ০৭:৩৯ অপরাহ্ণ

Sekerkote DYFI News : বিজেপির বেকার বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে নবারুন দেবের ঐক্যের আহ্বান

Sekerkote DYFI News
1 minute read

Sekerkote DYFI News : বর্তমান বিজেপি জোট সরকারের বেকার বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন ওয়াইএফআই (YFI)-এর রাজ্য সম্পাদক নবারুন দেব। বৃহস্পতিবার সেকেরকোট পূর্ব পাড়ায় আয়োজিত সংগঠনের ১০ম সেকেরকোট অঞ্চল সম্মেলনে তিনি বলেন, “বেকারদের প্রতি এই সরকারের উদাসীনতা দেশকে গভীর সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ যুব সমাজের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। কাজের অভাবে বহু তরুণ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন, কেউ কেউ আবার নেশার জালে আটকে পড়ছেন। এই পরিস্থিতি মোটেই স্বাভাবিক নয়; এর পরিবর্তন আনতে হলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।”

সম্মেলন উপলক্ষে গোটা অঞ্চল সাজানো হয়েছিল পতাকা, ফ্লেক্স, ফেস্টুনে। সকাল থেকেই এলাকায় উৎসবের আবহ। কর্মীদের উপস্থিতি এবং জনসাধারণের আগ্রহে সম্মেলনটি প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। সংগঠনের তরফে জানানো হয়, অঞ্চল ভিত্তিক সংগঠনের কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করতে প্রশাসনিকভাবে অঞ্চলকে বিভক্ত করা হয়েছে। ফলে দুটি নতুন অঞ্চল কমিটি গঠিত হয়— সেকেরকোট অঞ্চল কমিটির সম্পাদক নির্বাচিত হন তাপস দাস এবং সভাপতি টিটন দাস। অন্যদিকে ফুলতলি–পান্ডবপুর অঞ্চল কমিটির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সফিকুল ইসলাম ও সম্পাদক হিসেবে কার্তিক দাস।

নবারুন দেব তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আজ বিজেপি সরকার এমন এক ব্যবস্থা চালু করেছে, যেখানে বেকারদের প্রতি সহানুভূতি তো দূরের কথা, তাদের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করা হচ্ছে। চাকরির বাজার সংকুচিত, শিক্ষিত যুবকেরা হতাশ। এর ফলেই সমাজে নেশা ও অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে। এই অবস্থা যদি বদলাতে হয়, তবে যুব সমাজকে সংগঠিত হতে হবে।”

তিনি ইতিহাসের উদাহরণ টেনে বলেন, “১৯১৭ সালে লেনিনের নেতৃত্বে সোভিয়েত বিপ্লব প্রমাণ করেছিল— রাষ্ট্র চাইলে কীভাবে প্রতিটি নাগরিকের জীবনযাত্রার দায়িত্ব নিতে পারে। জন্ম থেকে কর্মসংস্থান, শিক্ষা থেকে খাদ্য— সব ক্ষেত্রেই সোভিয়েত সমাজতন্ত্র এক নতুন দিশা দেখিয়েছিল। শিশুর জন্মের পর রাষ্ট্র তার দায়িত্ব নিত, কেউ বেকার থাকলে সরকার তার কাজের ব্যবস্থা করত। এই সমাজব্যবস্থা দেখিয়েছিল, সমাজতন্ত্র কীভাবে মানুষের জীবনে বাস্তব পরিবর্তন আনতে পারে।”

নবারুন দেব আরও বলেন, “আমাদের দেশে আজ সরকার ৯০ শতাংশ গরিব ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থে কোনো নীতি নিচ্ছে না। ধনীদের পক্ষে নীতি নেওয়া হচ্ছে, গরিবদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। শিক্ষা ও চিকিৎসা আজ টাকার হাতে বন্দি। টাকা থাকলে ডাক্তারি পড়বে, না থাকলে মেধা থাকলেও সুযোগ পাবে না— এটা সমাজতন্ত্র নয়, এটা অন্যায়। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছি, কারণ আমাদের দাবি খুব স্পষ্ট— দেশে প্রতিটি যুবকের হাতে কাজ চাই, প্রতিটি পরিবারের মুখে ভাত চাই।”

তিনি বলেন, “সমস্যার সমাধান আকাশ থেকে নামবে না, ভগবান এসে করে দেবেন না। আমাদেরই করতে হবে। সোভিয়েত ইউনিয়নের ইতিহাসে দেখা গেছে— যখন হিটলার মস্কোর দুয়ারে এসে দাঁড়িয়েছিল, তখন স্তালিন আহ্বান করেছিলেন পিতৃভূমি রক্ষার। দুই কোটি মানুষ নিজের জীবন দিয়ে মাতৃভূমি বাঁচিয়েছিলেন। সেই চেতনা, সেই সংগ্রামের নাম সমাজতন্ত্র। আমরা চাই, সেই চেতনা থেকেই ভারতবর্ষের যুব সমাজ আবার মাথা তুলে দাঁড়াক।”

নবারুন দেবের বক্তব্যে একদিকে যেমন ছিল ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত, অন্যদিকে ছিল বর্তমান সমাজ-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির তীব্র বিশ্লেষণ। তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন— “কেউ গাছতলায় থাকবে আর কেউ পাঁচতলায়, তা হতে পারে না। শিক্ষা, কাজ, চিকিৎসা— সবকিছুতে সমান অধিকার চাই। আমাদের সংগ্রাম এই সাম্যবাদের জন্য, এই সমাজতন্ত্রের জন্য।”

এদিনের এই সম্মেলন শুধু রাজনৈতিক ভাষণ নয়, বরং ছিল এক নতুন প্রজন্মের মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ভাবধারাকে পুনরুজ্জীবিত করার ডাক। ওয়াইএফআই-এর এই উদ্যোগে এলাকায় নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, এবং সংগঠনের নেতৃত্ব আশা করছেন, এই ঐক্যবদ্ধ যুবশক্তিই আগামী দিনে বেকারত্ব ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনের ভিত্তি গড়ে তুলবে।

For All Latest Updates

ভিডিও