Prasenjit Sarkar Blue Dart : উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগর মহকুমায় এক ডেলিভারি কর্মীর রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। মৃত ডেলিভারি কর্মীর নাম প্রসেনজিৎ সরকার (আনুমানিক বয়স ২৫)। তিনি ধর্মনগর থানাধীন কামেশ্বর ওয়ার্ড নং–৩ এলাকার বাসিন্দা এবং পিতা নেপাল সরকার। প্রসেনজিৎ ধর্মনগর রাজবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ব্লোডার্ট কুরিয়ার সংস্থায় ডেলিভারি বয় হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালবেলা কৈলাসহর ইকার্ড অফিসের সামনে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ডেলিভারি কর্মীরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। প্রথমে তাঁরা মৃত প্রসেনজিৎ সরকারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন এবং তাঁর আত্মার চিরশান্তি কামনায় এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর ডেলিভারি কর্মীরা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
ডেলিভারি কর্মীদের অভিযোগ, ডেলিভারি সংক্রান্ত একটি বিবাদকে কেন্দ্র করেই রহস্যজনকভাবে প্রসেনজিৎ সরকারের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের দাবি, প্রশাসন যদি দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে কঠোরতম শাস্তির ব্যবস্থা না করে, তবে আগামী দিনে কৈলাসহর জুড়ে ডেলিভারি পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি তাঁরা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় কৈলাসহরে সকল ডেলিভারি কর্মী ও এলাকাবাসীকে নিয়ে একটি মৌন মিছিলের আয়োজন করা হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সন্ধ্যা আনুমানিক ছয়টা নাগাদ ধর্মনগরের ব্লোডার্ট কুরিয়ার অফিসে ডেলিভারি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, দক্ষিণ হুরুয়া এলাকার বাসিন্দা সুস্মিতা ভট্টাচার্য, সঙ্গীতা ভট্টাচার্য (পিতা—হরিপদ ভট্টাচার্য), পিউ ধর, মেঘদিপ ভট্টাচার্য ও সৌরভ ভট্টাচার্য কুরিয়ার অফিসে প্রবেশ করে প্রসেনজিৎ সরকারের সঙ্গে তীব্র বচসায় জড়িয়ে পড়েন।
পরিস্থিতি দ্রুত হাতাহাতিতে রূপ নেয় বলে অভিযোগ। অভিযুক্তরা প্রসেনজিৎ সরকারকে বেধড়ক মারধর করেন এবং সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করার হুমকি দেন। পরিবারের অভিযোগ, ঘটনার পর ওই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যার ফলে প্রসেনজিৎ গভীর মানসিক চাপে ভেঙে পড়েন।
ঘটনার পরদিন রবিবার ভোরে এলাকাবাসীরা প্রসেনজিৎ সরকারের বাড়ির পাশের একটি জঙ্গলে গাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর নিথর দেহ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। এই ঘটনায় পরিবার শোকস্তব্ধ, আর এলাকাজুড়ে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
এখন দেখার বিষয়, পুলিশ প্রশাসন কবে দ্রুত তদন্ত সম্পন্ন করে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে এবং এই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটন করে।
অভিযোগ অনুযায়ী অপমান, মারধর ও ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ফলে এক তরুণ কর্মী চরম মানসিক চাপে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন—এমন ঘটনা সমাজ ও প্রশাসনের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এখন সময় নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার। ন্যায়বিচার না হলে ক্ষোভ আরও বাড়বে এবং তার প্রভাব পড়তে পারে জনজীবনে। প্রসেনজিৎ সরকারের মৃত্যু যেন শুধু একটি সংখ্যায় সীমাবদ্ধ না থেকে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপের পথ খুলে দেয়—এটাই সকলের প্রত্যাশা।



