NCERT New Syllabus Controversy : স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিদের ভূমিকা ক্রমশ ইতিহাসের পাতায় আড়ালে চলে যাচ্ছে এই অভিযোগ তুলে সংসদে সরব হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন এনসিইআরটির পাঠ্যবইয়ে বাংলার গৌরবময় বিপ্লবী ইতিহাস উপেক্ষিত থাকার বিষয়টি নিয়ে তিনি সংসদে লিখিত প্রশ্ন উত্থাপন করেন।
ঋতব্রতের অভিযোগ, এনসিইআরটির ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে অগ্নিযুগের বাঙালি বিপ্লবীদের অবদান আংশিকভাবে থাকলেও বহু গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন ও ব্যক্তিত্বকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছে। যদিও যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতির মতো কয়েকটি বিপ্লবী গোষ্ঠীর উল্লেখ রয়েছে, তবু নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের উদ্যোগে গড়ে ওঠা বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের নাম সেখানে নেই বললেই চলে।
এই সংগঠনের সদস্য শহিদ বিনয় বসু, বাদল গুপ্ত ও দীনেশ গুপ্তের আত্মবলিদানের কাহিনী পাঠ্যবইয়ে না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর প্রশ্ন, “বিনয়-বাদল-দীনেশের মতো বিপ্লবীদের গল্প ইতিহাস বইয়ে পড়ানো হবে না কেন? কেন বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্সের ইতিহাস ব্রাত্য থাকবে?
ঋতব্রত আরও দাবি করেন, প্রদ্যোত ভট্টাচার্য, প্রভাংশু শেখর পাল, সন্তোষ কুমার মিত্র, তারকেশ্বর সেন, ব্রজকিশোর চক্রবর্তী, রামকৃষ্ণ রায় ও মৃগেন্দ্রনাথ দত্তের মতো বহু বিপ্লবীর নামও পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়নি। তাঁর বক্তব্য, স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ করতে হলে সব অঞ্চলের এবং সব ধারার অবদানকেই সমানভাবে তুলে ধরা প্রয়োজন।
সংসদে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে আন্দামানের সেলুলার জেলের প্রসঙ্গও তোলেন ঋতব্রত। তাঁর দাবি, ওই কারাগারের প্রায় ৭০ শতাংশ বন্দিই ছিলেন বাঙালি। “তাঁরা কেউ অমরত্বের প্রত্যাশা করেননি, ইতিহাসে নাম লেখানোর জন্যও লড়েননি। তাঁরা দেশের সম্পদ, সাহসী বাঙালি—তাঁদের সম্মান প্রাপ্য,” বলেন তিনি।
এই প্রসঙ্গে বিনায়ক দামোদর সাভারকরের নাম উল্লেখ করে কটাক্ষ করেন তৃণমূল সাংসদ। তাঁর বক্তব্য, “যাঁরা ব্রিটিশদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেছিলেন, তাঁদের নাম ইতিহাসে রয়েছে। অথচ যাঁরা জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই বাঙালি বিপ্লবীদের নাম নেই—এটা দুর্ভাগ্যজনক।”
ঋতব্রতের সাফ দাবি, স্বাধীনতা আন্দোলনের বাঙালি বিপ্লবীদের অবদান এনসিইআরটির পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করতেই হবে। ইতিহাসের পাতায় তাঁদের প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস কেবল কয়েকজন পরিচিত নেতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। অসংখ্য বাঙালি বিপ্লবীর আত্মত্যাগ, সাহস ও দেশপ্রেম এই আন্দোলনকে শক্ত ভিত দিয়েছিল। এনসিইআরটির পাঠ্যবইয়ে সেই ইতিহাসের পূর্ণ প্রতিফলন না থাকা শুধু দুর্ভাগ্যজনক নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও এক ধরনের বঞ্চনা।
বিনয়-বাদল-দীনেশ থেকে বেঙ্গল ভলান্টিয়ার্স—এইসব নাম ও অধ্যায় ইতিহাসের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা জরুরি। কারণ সবার অবদানকে সম্মান না জানালে স্বাধীনতার ইতিহাস কখনও সম্পূর্ণ হতে পারে না।



