খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Tuesday, 9 September 2025 - 08:53 PM
মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ০৮:৫৩ অপরাহ্ণ

MLA Hostel News : মাঝরাতে এমএলএ হোস্টেলে মদমত্ত যুবকদের গালিগালাজে চাঞ্চল্য

MLA Hostel News
1 minute read

MLA Hostel News : আগরতলার নতুন এমএলএ হোস্টেলে সোমবার রাতের অন্ধকারে ঘটে গেল এক অভাবনীয় ঘটনা। নিরাপত্তার কড়াকড়ি বলেই পরিচিত এই হোস্টেলে হঠাৎ করেই ঢুকে পড়ে তিন যুবক। অভিযোগ, তারা ছিলেন নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। শুধু তাই নয়, মাতাল অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা এক বিধায়কের উদ্দেশ্যে অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুরু করে তারা। মুহূর্তের মধ্যে ঘটনাস্থল জুড়ে তৈরি হয় উত্তেজনা।

ঘটনার শিকার হন কাঞ্চনপুরের তিপ্রা মথা দলের বিধায়ক ফিলিপ কুমার রিয়াং। ঘটনাটি ঘটার পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, যেখানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের থাকার জন্য নির্দিষ্ট আবাসন এবং তার উপর দিন-রাত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকে, সেখানে কীভাবে বাইরের লোক ঢুকে এই ধরনের কাণ্ড ঘটাল? নিরাপত্তার এই চরম গাফিলতি নিয়েই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে অন্য বিধায়কদের মধ্যেও।

ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই বিধায়ক ফিলিপ কুমার রিয়াং নিজেই সংবাদমাধ্যমকে জানান—

“সকাল দশটার দিকে আমি আমার রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বলছিলাম। আচমকাই কিছু বাইরের লোক, যারা সম্পূর্ণ মাতাল ছিল, তারা এসে আমাকে হুমকি দিতে শুরু করে। আমি সঙ্গে সঙ্গে এসপি-কে খবর দিই। পরে আমাকে ছুটি দেওয়া হয়। আমি বিস্তারিতভাবে জানাই আসলে কী ঘটেছে।”

তিনি আরও বলেন—

“এটা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এখানে আমি একা থাকি না। এই হোস্টেলে আরও প্রায় চল্লিশজন বিধায়ক থাকেন। আজ যদি আমার সঙ্গে ঘটে থাকে, কাল অন্য কারও সঙ্গেও ঘটতে পারে। তাই এটাকে আমি গুরুতর নিরাপত্তা সমস্যা মনে করছি। আমার অনুরোধ মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মহাশয় যেন বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখেন। যদি এখনই ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।”

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, বিধায়ক রিয়াং তার রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেই সময় তিন যুবক হোস্টেলের ভেতরে প্রবেশ করে হঠাৎই তাঁকে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ভাষায় চিৎকার শুরু করে। প্রথমে সামান্য বাকবিতণ্ডা হলেও পর মুহূর্তেই তারা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। গালিগালাজের মাত্রা চরমে পৌঁছালে বিধায়কের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়।

কিন্তু সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো— হোস্টেলের মূল ফটকে যখন ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন থাকে, তখন কীভাবে ওই তিন যুবক ভেতরে প্রবেশ করল?

ঘটনার পরপরই এনসিসি থানায় খবর দেওয়া হয়। থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি পরিদর্শন করে এবং তদন্তের আশ্বাস দেয়। তবে এই ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

বিধায়ক ফিলিপ রিয়াং স্পষ্ট ভাষায় জানান—

“আমি কোনো প্রকার প্ররোচনা দিইনি। আমি শুধু পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলাম। হঠাৎ তারা পিছন থেকে এসে অশালীন ব্যবহার করে। তিন-চারজন ছিল, আর সবাই মাতাল। আচরণ এতটাই খারাপ ছিল যে, বুঝলাম এরা স্বাভাবিক অবস্থায় নেই।”

তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন—

“কে বা কারা তাদের ভেতরে ঢুকতে দিল? কোথা থেকে এল তারা? এত কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও কিভাবে এভাবে ঢুকে গেল? এটা বড় ধরনের নিরাপত্তা গাফিলতি।”

ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই এমএলএ হোস্টেলের অন্যান্য বিধায়কদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হয়। তারা মনে করছেন, যদি একজন বিধায়ক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন, তবে বাকিরা কতটা সুরক্ষিত?

ঘটনার পরই রাজনৈতিক মহলেও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলো ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলছে— সরকারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটাই ফাঁপা হয়ে গেছে কি? তারা দাবি করছে, সাধারণ মানুষ যখন প্রতিদিন অপরাধ, চুরি, ডাকাতি ও হুমকির শিকার হচ্ছেন, তখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও যদি এভাবে আক্রান্ত হন, তবে প্রশাসনের উপর আস্থা রাখা কঠিন।

অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে যে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং দোষীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।

বিধায়ক ফিলিপ কুমার রিয়াং স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন—

“আমি মনে করি মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ের উচিত বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে নজরে নেওয়া। আজ যদি এরকম ঘটনা ঘটে, কাল আরও ভয়ংকর কিছু ঘটতে পারে। তাই দেরি না করে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”

এটি প্রথম নয়। আগেও এমএলএ হোস্টেলের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কয়েক বছর আগে নিরাপত্তারক্ষীদের গাফিলতির কারণে ভেতরে অচেনা লোকজন ঢুকে পড়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এবারকার ঘটনা আবারও সেই দুর্বলতার দিকেই আঙুল তুলছে।

ঘটনাটি শুধু একজন বিধায়কের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহীনতার ইঙ্গিত নয়, বরং গোটা নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতি এক বড় ধরনের প্রশ্নচিহ্ন। সাধারণ মানুষ যখন প্রতিনিয়ত নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, তখন বিধায়কেরাও যদি একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হন, তবে সরকারের উচিত অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

ঘটনাটি এখন তদন্তাধীন। কিন্তু যতদিন না দোষীরা গ্রেফতার হচ্ছে এবং কঠোর শাস্তি পাচ্ছে, ততদিন এই আতঙ্ক কাটবে না।

For All Latest Updates

ভিডিও