Lotus Farming : ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম থাকলে যে কোনো সাফল্য অর্জন সম্ভব—তা আবারও প্রমাণ করে দেখালেন দক্ষিণ ত্রিপুরার বেতাগা বাসুদেব দাস পাড়ার যুবক রূপঙ্কর দেবনাথ। সরকারি কৃষি দপ্তরের কোনো সহায়তা ছাড়াই পদ্মফুল চাষ করে তিনি শুধু নিজেকে আর্থিকভাবে সাবলম্বী করেছেন তা নয়, বরং গোটা অঞ্চলের জন্য হয়ে উঠেছেন অনুপ্রেরণার এক প্রতীক।
চাকরির আশায় বসে না থেকে ব্যতিক্রমী কিছু করার উদ্দেশ্যে রূপঙ্কর মনোনিবেশ করেন পদ্মচাষে। কলকাতায় বি.এড পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে গিয়ে প্রথমবারের মতো পদ্মচাষের পদ্ধতি প্রত্যক্ষ করেন তিনি। সেখান থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে ফিরে এসে ইউটিউবের সাহায্যে পদ্মচাষ সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস অর্জন করেন এবং নিজ খরচে ২ কানি জমিতে চাষ শুরু করেন।
রূপঙ্কর বিভিন্ন রাজ্য থেকে—যেমন হায়দ্রাবাদ, কলকাতা, কেরালা সহ পাঁচটি রাজ্য থেকে—মোট ১০টি ভিন্ন জাতের পদ্মফুলের বীজ সংগ্রহ করে নিজস্ব জমিতে সফলভাবে চাষ শুরু করেন। ফলস্বরূপ, মনসা পূজা ও দুর্গাপূজার সময়ে তাঁর চাষ করা পদ্মফুল প্রায় ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। সাধারণ সময়েও উদয়পুর মাতারবাড়িতে পদ্মফুল প্রতি ১০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হয়, যা পূজার সময় বেড়ে দাঁড়ায় ফুল প্রতি ৫০ টাকায়।
অবশ্য এই সাফল্যের পেছনে নেই সরকারি কৃষি দপ্তরের কোনো ভূমিকা। বগাফা কৃষি দপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক রাজীব সেন ও দক্ষিণ জেলার কৃষি আধিকারিক সুমিত কুমার সাহা পর্যন্ত জানেন না বেতাগায় এমন উদ্যোগ চলছে। অভিযোগ উঠেছে, কৃষকদের উন্নয়নের চাইতে ব্যক্তিগত লাভের দিকেই বেশি মনোযোগী এই দপ্তরের কিছু কর্মকর্তা। কৃষি উপকরণ সরবরাহ, স্কিমের অর্থ বণ্টন এবং অন্যান্য বিষয়ে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে।
এই পরিস্থিতিতে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থেকেও শুধুমাত্র নিজের প্রচেষ্টা এবং সাহসিকতা দিয়ে রূপঙ্কর যা করে দেখিয়েছেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তিনি বলেন, “যদি সরকারি সহায়তা পেতাম, তাহলে পদ্মফুলের চাষ আরও বড় পরিসরে করা যেত।”
রাজ্যের বেকার যুবকদের উদ্দেশে রূপঙ্করের পরামর্শ, “চাকরির পেছনে না ছুটে নতুন কিছু করার উদ্যোগ নিলেই সম্ভব সফলতা অর্জন ও স্বনির্ভরতা।”
সবশেষে, তিনি রাজ্যের কৃষিমন্ত্রীর কাছে এই পদ্মফুল চাষে সরকারি সহায়তার আবেদন জানান।