Kamalasagar CM Dr Manik Saha : ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। রাজন্য স্মৃতি বিজড়িত দুটি ঐতিহাসিক ধর্মীয় পীঠস্থান—কমলাসাগরের মা কসবেশ্বরী মন্দির ও খয়েরপুরের চতুর্দশ দেবতা বাড়ি—এখন পেতে চলেছে আধুনিক রূপ।
শুক্রবার, সিপাহীজলা জেলার কমলাসাগরে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা আনুষ্ঠানিকভাবে এই দুই ধর্মীয় পর্যটন প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, জেলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিধায়িকা অন্তরা সরকার দেব এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন বিধায়ক রতন চক্রবর্তী।
এই দুটি প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩২.৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (ADB) আর্থিক সহায়তায় কসবেশ্বরী মন্দির এলাকায় ১৮.৭৮ কোটি টাকায় গড়ে তোলা হবে পর্যটন পরিকাঠামো এবং চতুর্দশ দেবতা বাড়িতে ১৩.৬৩ কোটি টাকার ব্যয়ে তৈরি হবে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র।
পর্যটনমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরীর বলেন ,
“এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে শুধু ধর্মীয় স্থানগুলিকেই নয়, রাজ্যের পর্যটন শিল্পকেও নতুন করে গড়ে তোলা হবে।”
নতুন এই পরিকাঠামোর মধ্যে থাকবে উন্নত যাত্রী সুবিধা, পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা, এবং পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য নানা আধুনিক উপাদান। রাজ্যের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে এই উদ্যোগকে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসেবেই দেখছেন পর্যবেক্ষকরা।
ত্রিপুরা একটি সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির রাজ্য, যেখানে ধর্মীয় আস্থা ও ঐতিহাসিক স্মৃতিচিহ্নগুলি যুগের পর যুগ ধরে রাজ্যের সমাজ ও মননে গভীর প্রভাব বিস্তার করে এসেছে। এই প্রেক্ষাপটে কসবেশ্বরী মন্দির ও চতুর্দশ দেবতা বাড়ির মতো পবিত্র স্থানগুলিকে কেন্দ্র করে আধুনিক পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। রাজ্য সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের যৌথ উদ্যোগে এই দুই প্রকল্প শুধুই ধর্মীয় পরিক্রমাকে উৎসাহিত করবে না, বরং স্থানীয় অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং সামাজিক পরিচিতির পুনর্গঠনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
তবে শুধু শিলান্যাস নয়—এই প্রকল্পগুলির সময়মতো, সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাই হবে আসল চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, উন্নয়নের নামে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বা স্থানীয় জনগণের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে, তা নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। প্রকল্পে ব্যয়ের পরিমাণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ তার গুণগত মান ও দীর্ঘমেয়াদি টেকসই প্রভাব।
একদিকে যেমন এই উদ্যোগ ত্রিপুরার ঐতিহ্যকে বিশ্বদরবারে তুলে ধরার এক অনন্য সুযোগ এনে দিচ্ছে, তেমনি সরকারের প্রতি জনগণের প্রত্যাশাও বাড়িয়ে তুলেছে। এই প্রকল্পগুলি যদি সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে ত্রিপুরা খুব সহজেই পূর্ব ভারতের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পর্যটন গন্তব্যে রূপ নিতে পারে।
অতএব, এই উদ্যোগ শুধু এক রাজ্য সরকারের প্রকল্প নয়—এ এক সাংস্কৃতিক রেনেসাঁর সম্ভাবনা, যা আগামী প্রজন্মের জন্য ত্রিপুরার ঐতিহ্যকে জীবন্ত করে তুলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই মহৎ দৃষ্টিভঙ্গি কতটা বাস্তবায়িত হয় মাঠে-ময়দানে।