kailasahar Elephant News : ত্রিপুরার কৈলাসহরের সোনাপুর এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর চোরাচালান কাণ্ড ফাঁস হয়েছে। গোপন সূত্রের খবরের ভিত্তিতে পুলিশ ও বনদপ্তরের যৌথ অভিযানে একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে তিনটি বিরল হাতির দাঁত। বাজারমূল্যে যেগুলোর মূল্য কোটি টাকারও বেশি বলে অনুমান।
ত্রিপুরার উত্তর জেলার গৌরনগর ব্লকের অন্তর্গত খাওরা বিল গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাপুর এলাকার একটি নিরীহ বসতি হঠাৎ করেই রাজ্যের বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং চোরাচালান বিরোধী প্রচারের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। গোপন সূত্রে পাওয়া খবরের ভিত্তিতে সম্প্রতি কৈলাসহরের মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জয়ন্ত কর্মকারের নেতৃত্বে একটি পুলিশ দল সোনাপুরের বাসিন্দা মায়ুব আলীর বাড়িতে হানা দেয়।
প্রাথমিকভাবে পুলিশের সন্দেহ ছিল, বাড়িটিতে নিষিদ্ধ মাদকদ্রব্য মজুত আছে। কিন্তু আলমারির গোপন চেম্বার খুলতেই তিনটি বিশালাকৃতির হাতির দাঁত উদ্ধার হয়, যার আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য কোটি টাকার বেশি হতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে সঙ্গে সঙ্গেই বনদপ্তরকে খবর দেওয়া হয় এবং রেঞ্জ অফিসার শুভঙ্কর বিশ্বাসের নেতৃত্বে বনদপ্তরের একটি দল এসে দাঁতগুলি উদ্ধার করে রেঞ্জ অফিসে নিয়ে যায়।
হাতির দাঁতের চোরাচালান বিশ্বব্যাপী এক মারাত্মক অপরাধ চক্র।
হাতির দাঁত চোরাচালান শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বের জন্য একটি বড় ধরনের বন্যপ্রাণী অপরাধ। এই দাঁতগুলি মূলত ‘আইভরি’ নামে পরিচিত এবং একে মূল্যবান অলংকার, ভাস্কর্য বা বিভিন্ন বিলাসবহুল সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আফ্রিকা এবং এশিয়ার অনেক দেশেই হাতি হত্যার হার বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ এই দাঁতের জন্যই।
ভারতীয় বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন ১৯৭২ অনুযায়ী, হাতির দাঁতের সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিক্রি সম্পূর্ণ বেআইনি। আইন অমান্য করলে অভিযুক্তের সর্বোচ্চ ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা হতে পারে।
পলাতক অভিযুক্ত এবং তদন্তের অগ্রগতি
বাড়ির মালিক মায়ুব আলী অভিযানের আগেই পলায়ন করে এবং এখনো পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। রেঞ্জ অফিসার শুভঙ্কর বিশ্বাস জানান, “ঘটনাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর।
প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি এটি বৃহৎ চোরাচালান চক্রের একটি অংশ। মায়ুব আলী চক্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হতে পারে।
এই ঘটনাটি আবারও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, কিভাবে বন্যপ্রাণীর ওপর লোভের খাঁড়া নেমে আসছে। হাতির দাঁত চোরাচালানের বিরুদ্ধে শুধু আইন নয়, দরকার আমাদের সকলের সচেতনতা ও প্রতিরোধ। বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা রাজ্যগুলিতে এই ধরনের অপরাধ ক্রমবর্ধমান হওয়ায় এই তদন্তের ফলাফল আগামী দিনে বড় সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলতে পারে।