খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Wednesday, 10 September 2025 - 10:24 PM
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ - ১০:২৪ অপরাহ্ণ

Jitendra Choudhury Reaction : বাংলা ভাষা অবমাননার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জীতেন্দ্র চৌধুরীর বিজেপিকে অভিযুক্ত করলেন ‘বিভাজনের রাজনীতি’র জন্য

Jitendra Choudhury Reaction
1 minute read

Jitendra Choudhury Reaction : বাংলা ভাষা—যে ভাষায় ভারতবর্ষের জাতীয় সঙ্গীত রচিত হয়েছে, যে ভাষায় রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বিবেকানন্দ, জগদীশচন্দ্র বসুর মতো মনীষীরা তাঁদের চিন্তা প্রকাশ করেছেন—আজ সেই ভাষা ভারতের একাংশে অবমাননার শিকার। ভাষা কেবল যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একেকটি জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচয়ের স্তম্ভ। আর সেই আত্মপরিচয়ের উপর যখন আঘাত আসে, তখন তা গোটা জাতির আত্মমর্যাদাকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়।

সাম্প্রতিক সময়ের একাধিক ঘটনা প্রমাণ করে দিচ্ছে, ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দি ভাষাকে একমাত্র ‘জাতীয় ভাষা’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় আঞ্চলিক ভাষাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হচ্ছে বাংলা।

দিল্লি পুলিশের সাম্প্রতিক একটি বিবৃতি ঘিরে শুরু হয়েছে দেশজুড়ে বিতর্ক। পুলিশ এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করে, তারা “বাংলাদেশি ভাষায় কথা বলা” কয়েকজন সন্দেহভাজন বিদেশিকে গ্রেফতার করেছে। এই ভাষাগত উপস্থাপনাকে বাংলা ভাষার চরম অবমাননা বলে অভিহিত করেছেন বিরোধী দলনেতা জীতেন্দ্র চৌধুরী।

চৌধুরী বলেন, “পৃথিবীতে ‘বাংলাদেশি ভাষা’ বলে কিছু নেই। ভাষার নাম বাংলা। এটাই সেই ভাষা, যেটিতে আমাদের জাতীয় সংগীত রচিত হয়েছে। বাংলা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক কথ্য ভারতীয় ভাষা। এই ভাষাকে অবজ্ঞা করা মানেই আমাদের সংবিধানকেও অবজ্ঞা করা।”

তিনি অভিযোগ করেন, হিন্দি বাদে অন্য কোনও ভারতীয় ভাষার প্রতি সম্মান দেখাতে নারাজ বিজেপি। “বিজেপি এবং তাদের আদর্শিক সংগঠন আরএসএস বিভাজনের রাজনীতি করছে। তারা একটি তথাকথিত হিন্দু রাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে এগোচ্ছে, যেখানে শুধুমাত্র হিন্দি ভাষাভাষীরাই প্রাধান্য পাবে,” বলেন চৌধুরী।

তিনি আরও জানান, উত্তর-পূর্ব ভারত তথা ত্রিপুরার বহু মানুষ বিভিন্ন রাজ্যে গিয়ে ভাষাগত বৈষম্যের শিকার হন। “ত্রিপুরার নাগরিকরা বাংলায় কথা বললেও তাঁদের উচ্চারণে পূর্ব পাকিস্তানি টান রয়েছে। অনেক সময় তাদের ‘বিদেশি’ ভেবে প্রশ্ন তোলা হয়।”

চৌধুরীর দাবি, ভাষা ও জাতিসত্তার ভিত্তিতে বিদ্বেষ ছড়িয়ে দেশকে এক নতুন রূপে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। “এটি শুধু বাংলা নয়, ভারতের ভাষাগত বৈচিত্র্যের ওপর আঘাত।

তবে, উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলো, বিশেষত ত্রিপুরা, যেখানে বহু বাঙালি বসবাস করেন, সেখানে বহু শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ অন্যান্য রাজ্যে গিয়ে অবজ্ঞার শিকার হন। তাঁদের বাংলা উচ্চারণ, তাঁদের পরিচিতি, এমনকি তাঁদের গায়ের রং এবং নাম নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। ‘বাহাদুর’, ‘নেপালি’, ‘বিদেশি’—এইসব তকমা বসানো হয় তাঁদের কপালে।

এটি নিছক কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা নয়। এটি বৃহত্তর এক রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রতিফলন, যেখানে ‘এক জাতি, এক ভাষা, এক ধর্ম’-এর মতো বিপজ্জনক ধারণা চুপিসারে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এই দর্শনে বাংলা ভাষা, তার সংস্কৃতি, ইতিহাস, এবং অবদানকে অস্বীকার করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

বাংলার উপর এই চাপ শুধু ভাষাগত নয়—এটি সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং মানসিক একধরনের আগ্রাসন। হিন্দিকে একমাত্র গ্রহণযোগ্য ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াসে বাংলাসহ অন্যান্য আঞ্চলিক ভাষার স্বকীয়তা বিপন্ন হয়ে পড়ছে।

এই বিষয়ে বলতে গেলে, আমরা ভুলে যেতে পারি না যে, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য প্রাণ দিয়ে লেখা হয়েছিল ইতিহাসে। আজ সেই ইতিহাসের পীঠভূমিতে দাঁড়িয়ে, বাংলাভাষীদের উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে এই অবমাননার প্রতিবাদ করা।

For All Latest Updates

ভিডিও