Jitendra Choudhury GMP : ত্রিপুরায় রাজনীতি আবারও উত্তপ্ত। রাজ্যে একদল রাজতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে, অন্যদিকে আরেক দল ধর্ম, জাতপাত ও সম্প্রদায়ের নামে বিভাজন তৈরি করতে ব্যস্ত—এমনই অভিযোগ তুললেন বিরোধী দলনেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। বুধবার গণমুক্তি পরিষদের গণ্ডাছড়া মহকুমা কমিটির নবম ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধনে তিনি সরাসরি বিজেপি–আইপিএফটি–তিপ্রা মথা জোট সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দেন।
গণ্ডাছড়া টাউন হলে আয়োজিত এ সম্মেলনে সকাল থেকেই কর্মী–সমর্থকদের উপচে পড়া ভিড়। শহীদ বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হওয়া সম্মেলনেই বিরোধী দলনেতা সতর্কবাণী শোনান, “মানুষ শান্তি চায়। আর শান্তি ফেরাতে হলে বিভেদ সৃষ্টিকারীদের মনোবাসনা পূরণ হতে দেওয়া যাবে না।”
সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে জিতেন্দ্র চৌধুরী দাবি করেন, এই তিন দলের স্লোগান, ভাষা বা পতাকা আলাদা হতে পারে, কিন্তু জনগণের স্বার্থে তাদের অবস্থান এক। তাঁর বক্তব্য, “তিপ্রা মথা রাজতন্ত্র ফেরানোর চেষ্টা করছে, আর বিজেপি ধর্ম এবং ট্রাইবেল–নন-ট্রাইবেলের নামে বিভাজন তৈরি করছে। লক্ষ্য—ক্ষমতায় টিকে থাকা।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, গত সাড়ে সাত বছরে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবেশকে কলুষিত করে রেখেছে এই জোট সরকার। আঞ্চলিক পরিচয় নিয়ে খেলতে খেলতে তিপ্রা মথা এডিসি-কে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
সম্মেলনে তাঁর ভাষণে জিতেন্দ্র চৌধুরী গণমুক্তি পরিষদের ঐতিহ্যের কথাও স্মরণ করান। রাজতন্ত্রের পতনের পর, ১৯৪৮ সালে গণমুক্তি পরিষদের যাত্রা শুরু—যা ত্রিপুরার গণতান্ত্রিক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি জানান, সংগঠনটি শুধু আন্দোলন বা দাবি-দাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং রাজ্যের পশ্চাৎপদ সমাজকে শিক্ষিত ও সংগঠিত করে গণতন্ত্রকে সুসংহত করাই ছিল এর উদ্দেশ্য।
জিতেন্দ্র চৌধুরীর অভিযোগ, তৃণমূল স্তরে যদিও বিজেপি ও তিপ্রা মথার মধ্যে বিবাদ–সংঘর্ষ দেখা যায়, কিন্তু ওপরতলায় তাদের অঘোষিত সমঝোতাই সক্রিয়। “গরিব মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নিয়ে কিভাবে দুই পক্ষই নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করছে—সেটাই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ,” বলেন তিনি।
গণ্ডাছড়ায় সিপিআইএম অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনাও তিনি তুলে ধরেন। তাঁর দাবি, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমিয়ে রেখে রাজনৈতিক পরিবেশকে ভয় ও দমনের ঘেরাটোপে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
সম্মেলনে তিনি জানান, সামনে স্বশাসিত জেলা পরিষদ (এডিসি) নির্বাচন। এই নির্বাচনকে তিনি “অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” বলে উল্লেখ করেন। তাঁর বক্তব্য, তিপ্রা মথা ট্রাইবেল উন্নয়নের নামে প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে জনজাতি সমাজকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে।
এডিসি নির্বাচনে গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই গড়ে তোলার দিকেই সম্মেলনে মূল আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।



