Gopal Chandra Roy : ত্রিপুরার নয় বনমালীপুরের বিধায়ক গোপাল রায় ৭৯তম স্বাধীনতা দিবসে আশ্রম চৌমুনি গান্ধী মূর্তিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে বলেন, “ভারতের স্বাধীনতা কেবল কংগ্রেসের নেতৃত্বেই এসেছে, বিজেপির এর কোনও অংশীদারি নেই।” তাঁর এই বক্তব্য নতুন করে স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক জাগিয়েছে।
ইতিহাসবিদদের দাবি, হিন্দু মহাসভা ও আরএসএস ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেয়নি, বরং অনেক ক্ষেত্রেই এর বিরোধিতা করেছে। ১৯১৯ সালের জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের পর যখন দেশ জুড়ে ক্ষোভ, তখন পাঞ্জাব হিন্দু সভা সত্যাগ্রহের নিন্দা করে ব্রিটিশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
১৯২৫ সালে প্রতিষ্ঠিত আরএসএস স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ও মূলত মুসলিমবিরোধী প্রচারে মন দেয়, কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই এড়িয়ে চলে। প্রতিষ্ঠাতা কেশবরাও হেডগেওয়ার ১৯৩০ সালের আইন অমান্য আন্দোলনে অংশ না নেওয়ার নির্দেশ দেন সংঘের সদস্যদের।
হিন্দু মহাসভার নেতা বিনায়ক দামোদর সাভারকর প্রথম জীবনে ব্রিটিশবিরোধী থাকলেও পরবর্তীতে ব্রিটিশ সরকারকে সমর্থন করেন। ১৯৪২-এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় তিনি সদস্যদের প্রশাসনিক পদে থেকে কাজ চালিয়ে যেতে বলেন। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীও ওই আন্দোলনের সমালোচনা করেন এবং যুদ্ধকালে ব্রিটিশদের সঙ্গে সহযোগিতার পক্ষে মত দেন।
গোপন ব্রিটিশ নথিতে উল্লেখ আছে, ১৯৪২ সালের আন্দোলনে আরএসএস কোনও অংশ নেয়নি, বরং আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ীও সেই সময় পুলিশকে মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পান বলে অভিযোগ রয়েছে।
ঐতিহাসিকদের মতে, দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবর্তক সাভারকরই দেশভাগের ধারণা মুসলিম লিগের আগে সামনে আনেন। স্বাধীনতার শেষ পর্বে হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লিগ বাংলায় ও সিন্ধে যৌথ সরকারও চালায়।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪০ সালে প্রকাশ্যে হিন্দু মহাসভার এই ভূমিকার তীব্র নিন্দা করে জনগণকে তাদের বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গোপাল রায়ের বক্তব্য সেই পুরনো ইতিহাসই সামনে এনে বিজেপির বর্তমান জাতীয়তাবাদী ভাবমূর্তিকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে।