Durga Prasanna Deb murder mystery
শহর থেকে কিঞ্চিৎ দূরত্বে গুলি চালিয়ে খুন করা হল এক বনেদী ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কে। শুধু তাই নয়, বিজেপির একজন একনিষ্ঠ কর্মী বলেও রয়েছে তার পরিচয়। আগরতলা সহ গোটা ত্রিপুরা রাজ্যের সুখ্যাত বনেদী ক্লাব ভারত রত্ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক দুর্গা প্রসন্ন দেব এর হত্যাকাণ্ডে চাঞ্চল্য ছরিয়েছে গোটা শহর তথা রাজ্য জুড়ে। কি কারণে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড?
দুর্গা প্রসন্ন দেব ঊষা বাজার এর স্থানীয় বাসিন্দা। সদ্য ঊষা বাজার স্থিত ভারত রত্ন সংঘের সাধারণ সম্পাদকের দায়ভার পেয়েছিলেন তিনি। চলতি বছরের দুর্গা পুজোর দায়িত্ব এবার ন্যস্ত ছিল নয়া সম্পাদকের হাতেই। কিন্তু দায়িত্ব পাওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই দুষ্কৃতি কারীদের হাতে নৃশংস ভাবে খুন হলেন দুর্গা প্রসন্ন।
৩০শে এপ্রিল রাত আনুমানিক ১০ টা নাগাদ আগরতলা শালবাগান এলাকায় গুলী চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাঁকে। গুলীর শব্দ পেয়েই স্থানীয়রা তথা আশপাশের লোকজন তাঁকে তড়িঘড়ি নিয়ে যান আইএলএস হাসপাতালে। কিন্তু ঘটনা স্থলেই মারা যায় দুর্গা প্রসন্ন। তাঁর পরিবারের লোকজন সহ, স্থানীয়রা এবং নরসিংগড় থানার পুলিশ ও সাংবাদিক দের ভিড় জমে যায় হাসপাতাল চত্বরে।
পরিবারে স্ত্রী এক পুত্র সন্তান কে রেখে গেছে দুর্গা প্রসন্ন। এদিন মর্মাহত অবস্থায় তাদের সকলেরই দেখা মিলল হাসপাতাল চত্বরে। অবশেষে ঘটনার খোলসা করতে গিয়ে নিহত দুর্গা প্রসন্নের স্ত্রী ৫ জনের নাম ধাম সহ অভিযোগ জানিয়েছেন। উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে তাঁকে খুন করা হয়েছে। যে পাঁচ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হল- রাজু বর্মণ , বিমান দাস, রাকেশ বর্মণ, দেবদাস ও দেবব্রত।
ঘটনার দিন তথা মঙ্গলবার সন্ধ্যে নাগাদ উনার স্ত্রী ছেলে কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যান । এমন সময় দুর্গা প্রসন্ন ফোন করে জানায় যে বিমান দাস গাড়ি করে তাঁকে নিয়ে যেতে এসেছে। তাদের সাথেই যাচ্ছেন তিনি। এর কিছুক্ষণ বাদেই তাঁর মৃত্যুর খবর আসে। রাজু বর্মণ ও বিমান দাস এর সাথে দুর্গা প্রসন্নের সম্পর্ক ঠিক ভালো চলছিল না। অতঃপর তাঁকে ডেকে নিয়ে গিয়ে শালবাগান এলাকায় গুলী করে হত্যা করা হয়েছে। সাথে আরও তিন জন রয়েছে বলেও অভিযোগ স্ত্রীর।
ক্লাবের সম্পাদক হবার পর থেকেই অভিযুক্তদের সাথে দুর্গা প্রসন্নের বিবাদ শুরু হয়। তারা দুর্গা প্রসন্নের সম্পাদক হওয়া নিয়ে খুশি ছিলেন না বলেও দাবী নিহতের স্ত্রীর। এর আগেও ঝগড়া বিবাদ হয়েছিল একাধিক বার। নরসিংগড় থানাবাবুদের কাছে বিচার চাইলেও রাজু বর্মণের অর্থের প্রভাবে থানাবাবুরা চুপ সেধে যান । তবে এই ঘটনায় নিশ্চিত ভাবে এই ৫ জন জড়িত রয়েছে বলেও দাবী নিহতের স্ত্রীর।
উল্লেখ্য, দুর্গা প্রসন্ন দেব বিজেপি দলের একজন একনিষ্ঠ কর্মী ও ছিলেন। দিন রাত পার্টির কাজ নিয়েই মত্ত থাকতে দেখা যেত তাঁকে। দলের প্রদেশ সভাপতি সহ তাবড় তাবড় নেতৃত্বদের সাথে তাঁর উঠা বসা ও ছিল। সরকারি ভাবে যে জল ছত্র প্রোগ্রামের আয়োজন চলছে রাজ্য জুড়ে তাঁর অঙ্গ হিসেবে গতকাল ভারত রত্ন সঙ্ঘেও আয়োজন করা হয় দুর্গা প্রসন্নের উদ্যোগেই। সেখানে প্রাক্তন বিধায়ক ডঃ দিলিপ দাস ও নিমন্ত্রিত ছিলেন।
রাতে দুর্গা প্রসন্নের খুনের খবর পেয়েই তিনি ছুটে যান হাসপাতালে। সেখানে গিয়ে গোটা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবী জানান তিনি। রাতারাতি সদর এসডিপিও ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার তদন্ত শুরু করে দিয়েছেন।
এদিকে ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে ভারত রত্ন সংঘের প্রাক্তন সভাপতি প্রদ্যুৎ ধর চৌধুরী কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে থানায় ডাকা হয়েছে। দুর্গা প্রসন্নের মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্যে গতকাল রাতে জিবি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহ পরিবারে হাতে তুলে দেওয়া হয় বুধবার। শহরের বুকে এধরণের এক মারাত্মক হত্যাকাণ্ডে হতভম্ভ হয়ে পড়েছেন সকলেই।