Dharmanagar News : শুক্রবার দুপুরে ধর্মনগর শহরের পদ্মপুর মহাদেববাড়ি এলাকায় আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানে তীব্র উত্তেজনা ছড়ায়। ধর্মনগর পুর পরিষদের উদ্যোগে, বিপুল পুলিশ বাহিনী ও মহিলা পুলিশের উপস্থিতিতে সরকারি বা খাস জমিতে নির্মিত ছ’টি পরিবারের বসতঘর ভেঙে ফেলা হয়। অভিযানে ডোজার ব্যবহার করা হয়, যা এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।
উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলির অভিযোগ, তাঁরা প্রায় এক যুগ ধরে ওই জমিতে বসবাস করে আসছেন। তাঁদের অনেকের বাড়িতে বৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল বলেও দাবি করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের বক্তব্য, সম্প্রতি তাঁরা উত্তর জেলার জেলা শাসকের সঙ্গে দেখা করলে মৌখিকভাবে আশ্বাস দেওয়া হয় যে আপাতত তাঁদের বাড়ি ভাঙা হবে না। কিন্তু সেই আশ্বাসের পরও কোনও লিখিত নোটিশ বা পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই এদিন উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ধর্মনগর মহকুমা শাসকের দপ্তরের দুই ডেপুটি কালেক্টর—জিনিয়াস দেববর্মা ও প্রশান্ত ভট্টাচার্য। তবে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাব দিতে তাঁরা অনিচ্ছা প্রকাশ করেন, যা প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে আরও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে।
উচ্ছেদ চলাকালীন এলাকার চিত্র ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। চোখের সামনে ভেঙে পড়ে বহু মানুষের একমাত্র আশ্রয়। কান্নায় ভেঙে পড়েন মহিলা ও শিশুরা। ছ’মাসের অন্তঃসত্ত্বা মহিলা, কোলে তিন দিনের নবজাতক—এমন অসহায় দৃশ্য উপস্থিত সকলকে স্তব্ধ করে দেয়।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় ভবিষ্যতে একটি ১০০ শয্যার মহিলা হোস্টেল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এলাকায় স্থাপিত একটি শিলান্যাস ফলকেও সেই তথ্য উল্লেখ আছে। তবে প্রশ্ন উঠছে—দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী পরিবারগুলির পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই কেন এমন উচ্ছেদ অভিযান?
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের মানবিকতা, স্বচ্ছতা এবং পুনর্বাসন নীতি নিয়ে জোর চর্চা শুরু হয়েছে ধর্মনগর জুড়ে।
এই ঘটনা প্রশাসনিক সংবেদনশীলতা ও মানবিক দায়িত্ব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী পরিবারগুলির পুনর্বাসন বা বিকল্প আশ্রয়ের ব্যবস্থা না করেই এমন পদক্ষেপ সামাজিক ন্যায়বিচারের ধারণাকেই চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। উন্নয়নের প্রয়োজনে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা যেন সাধারণ মানুষের জীবিকা ও মর্যাদার বিনিময়ে না হয়—এই প্রত্যাশাই এখন ধর্মনগরের সর্বস্তরের মানুষের।



