Debraj Debbarma died in Bus accident
সরকারি চাকরীর স্বপ্ন আজ দুস্বপ্নে পরিণত । পরীক্ষা দিতে যাবার পথেই দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল এক যুবকের । আহত আরও প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী। স্ক্রিনে যার ছবি দেখছেন তাঁর নাম দেবরাজ দেব্বরমা। বাড়ি ত্রিপুরার ধলাই জেলার কমলপুরে। ত্রিপুরা কো-অপারেটিভ ব্যাংক এর পরীক্ষা দিতে যাবার পথেই তাঁর জীবনাবসান।
ত্রিপুরা রাজ্যের শিক্ষিত বেকার যুতবকদের কাছে আজকের দিনটি চির স্মরণীয় হয়ে থাকার মতো। কেননা আজকের দিনেই সরকারি চাকরী প্রাপ্তির প্রত্যাশা নিয়ে বহিরাজ্যে পরীক্ষা দিতে যাবার পথেই প্রাণ গেল এক বেকার যুবকের। তাঁর সাথে আহত আরও প্রায় ৩০ জন। উল্লেখ্য ত্রিপুরা কো- অপারেটিভ ব্যাংক এর ১৫৬ টি শূন্য পদ পূরণের জন্যে একটি নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা নেওয়া হবে । ৫ই মে হতে যাচ্ছিলো ত্রিপুরা কো – অপারেটিভ ব্যাংক এর সেই নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা। ১৫৬ টি পোস্টে নিয়োগ সংক্রান্ত পরীক্ষা দিতে ত্রিপুরার রাজ্যের প্রায় ১৯০০০ যুবক যুবতীর আবেদন পত্র জমা পড়েছিল। ২৫শে এপ্রিল যখন পরীক্ষার্থীরা তাদের এডমিট কার্ড আনতে যান তখন দেখা যায় অনেকের পরীক্ষার সিট পড়েছে আসামের গৌহাটি, ডিব্রুগর , সিলচর ইত্যাদি জায়গায়। ত্রিপুরা রাজ্য সরকারের আওতাধীন একটি ব্যাংক এর পরীক্ষা দিতে পরীক্ষার্থীদের বহিঃ রাজ্যে কেন যেতে হবে সেই নিয়ে বরাবরই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কে প্রশ্ন করা হলে তারা বলেন যে ত্রিপুরায় ১৯০০০ পরীক্ষার্থীর জন্যে পরীক্ষা গ্রহনের ব্যবস্থা তারা করতে পারেননি।
এই নিয়ে গত সোমবার যুব কংগ্রেস এর পক্ষ থেকে বিক্ষোভ করা হয়। মঙ্গল্বার বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকেও এক ডেপুটেশান দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে বলা হয় বেকার পরীক্ষার্থীদের যাওয়া আসা থাকা খাওয়া বাবদ ব্যপক খর্চা রয়েছে বলে তাদের অন্তত যাতায়াতের খর্চা টুকু যেন ব্যাংক এর পক্ষ থেকে বহন করা হয়। সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন।
আগামী ৫ই মে পরীক্ষা দেবার উদ্দেশ্যে ত্রিপুরা থেকে রউনা হয়েছিল পরীক্ষার্থীরা। ১লা মে বুধবার রাত আনুমানিক ১১.৩০ মিনিট নাগাদ আসামের ডিমা হাসাও তথা ডিটকছরা হাফলং সড়ক পথে সেই পরীক্ষার্থীদের নিয়েই দুর্ঘটনায় পরে আসামের সীমা ট্রেভেলস এর একটি যাত্রীবাহী বাস যার নম্বর AS01NC0243 । প্রচণ্ড বৃষ্টি হবার কারণে সড়ক পথে নিয়ন্ত্রন হাড়িয়ে রোডের ডিভাইডার ভেঙ্গে গিয়ে প্রায় খাদে পরে যায় বাসটি। ২রা মে ভোর বেলা ঘটনার চিত্র প্রকাশ্যে আসে।
দুর্ঘটনায় ত্রিপুরার ধলাই জেলার কমলপুর মহকুমার দেবরায দেব্বরমা নামে এক পরীক্ষার্থী নিহত হয়েছে। বাকি প্রায় ৩০ জন পরীক্ষার্থী কে আহত অবস্থায় পাঠানো হয়েছে সিলচর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।
নিহত যুবক দেবরাজ দেব্বরমা ৪ মাস আগে বিয়ে করেছে। দীর্ঘদিন যাবত একটি সরকারি চাকরীর জন্যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো সে। অতঃপর এই ব্যাংক এর চাকরীর নোটিশ পেয়েই সেও আবেদন জমা করে। কিন্তু তাঁর পরীক্ষার সিট পরে আসামে। আর সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বপ্ন নিয়েই পৃথিবী ছারে এই পরীক্ষার্থী।
ঘটনা ছড়িয়ে পরতেই নিহত দেবরাজ এর পরিবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে। অন্যদিকে কো- অপারেটিভ ব্যাংক ও রাজ্য সরকারের তুমুল সমালোচনা করে বিক্ষোভে শামিল হয়েছে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন dyfi-tyf।
যেখানে দেশ জুড়ে ডিজিটাল ইন্ডিয়া , ডিজিটাল ত্রিপুরার শ্লোগান দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী সকলেই সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অনলাইনেই কেন পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হল না সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এখন বিভিন্ন ছাত্র যুব সংগঠন গুলী। বহিঃ রাজ্যে পরীক্ষা নেওয়ার পেছনে ব্যপক দুর্নীতি রয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয়েছে।
আগে থেকেই বহিঃ রাজ্যে পরীক্ষা নেওয়ার বিষয় নিয়ে তুমুল বিতর্কের মুখে পড়েছিল ব্যাংক। রাজ্যের বেশ কিছু ছাত্র যুব সংগঠনের দাবী ছিল যাতে রাজ্যেই তাদের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। যদি সেইদাবি মানা হতো তাহলে আজ হয়তো দেবরাজ এর মতো একজন ছাত্রের প্রাণ যেত না। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার সম্পূর্ণ দায়ভার ব্যাংক কিংবা রাজ্য সরকার গ্রহন করবেন কি ?
পাশাপাশি এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে পরীক্ষা স্থগিত রাখার জন্যেও বিভিন্ন মহল থেকে দাবী উঠেছে। স্বাভাবিক এবং মানবিক অর্থেই রাজ্যের প্রায় ৩০ জন পরীক্ষার্থীর এই অবস্থার পর পরীক্ষা বহাল থাকাটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। তবে ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা হতে চললেও কো-অপারেটিভ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে এখনো কোনো বক্তব্য সামনে আসেনি।