BJP campaign in Belonia
ভোট আর মাত্র কিছু দিন। দেশের সবচাইতে বড় গণতন্ত্রের উৎসব হতে চলেছে আবারো দীর্ঘ ৫ বছর পর। গোটা দেশে এখন ভোট প্রচারে ব্যস্ত প্রত্যেক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে ভোটারদের দৃষ্টি কাড়তে শাসক বিরোধী উভয়েই সচেষ্ট ভূমিকায়। আর তা করতে গিয়েই একে অপরের খুঁটিনাটি দোষ গুন তুলে ধরছেন জন সমক্ষে।
একদিকে শাসক বিজেপির ১০ বছরের কেন্দ্রীয় শাসনে দেশে কি কি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে সরব হচ্ছে বিরোধী ইন্ডিয়া জোট মঞ্চ। অপরদিকে দীর্ঘ কয়েক দশকের ও বেশি সময় যাবত কেন্দ্রে কংগ্রেস সরকার এর আমলে দেশ কোথায় দাঁড়িয়েছিল তা নিয়েও উল্টে প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে শাসক শিবির। আর এই পরিস্থিতি প্রায় দেশের সব কটি রাজ্যেই একই রকম। যার থেকে বিন্দু মাত্র ও ব্যাতিক্রম নয় ত্রিপুরা রাজ্য।
আসন সংখ্যা দুটি। দুটোতেই নিজেদের প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। অপরদিকে ইন্ডিয়া জোট মঞ্চের সমর্থনে সিপিআইএম ও কংগ্রেস এর ও দুজন প্রার্থী রয়েছেন। মনোনয়ন জমা করবার পর থেকেই প্রচারে ঝড় তুলছেন উভয় শিবির।
সেই সুত্রেই আজ শুক্রবার , বিলোনিয়া মহকুমার বিলোনিয়া মণ্ডল মহিলা মোর্চার উদ্যোগে পশ্চিম ত্রিপুরা আসনের লোকসভা প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেবের সমর্থনে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে অংশগ্রহণ করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মাণিক সাহা, প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব, মহিলা মোর্চার প্রেসিডেন্ট মিমি মজুমদার, প্রদেশ বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য সহ অন্যান্যরা। এদিন বিলোনিয়া স্থিত বিকেআই ময়দানে উক্ত জনসভার আয়োজন করা হয়। প্রার্থী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে এক নজর দেখতে ও তাদের বক্তব্য শুনতে দূর দুরান্ত থেকে হাজার হাজার অনুগামীরা এদিন জনসভায় যোগদান করেন। যার মধ্যে মহিলাদের সংখ্যা ছিল অগণিত। বিগত ৬ বছরে রাজ্যে বিজেপি সরকারের জনকল্যাণমুখী প্রকল্পের সুফল পেয়েছেন বলেই হয়তো আজকের দিন দাঁড়িয়ে বিজেপির জনসমাবেশে এতটা জনসমাগম চোখে পড়েছে। যা কিনা বিরোধী শিবির কে চিন্তার মুখে ফেলার জন্যে যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, এদিনের জনসভা থেকে নেতৃত্ব রা বিরোধীদের দিকে যেভাবে আঙ্গুল তুলে প্রশ্ন করেছেন তাতেও ত্রিপুরায় বিরোধী শিবিরের ভীত কিছুটা হলেও নড়বড়ে হয়ে যেতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।
যে ইন্ডিয়া জোট মঞ্চ “গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার” এর নাম করে ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করে ক্ষমতায় আসতে চাইছেন তাদের উদ্দেশ্যে বিজেপি শিবিরের প্রশ্ন , “গণতন্ত্র বলতে কি বোঝায়? গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার বলতেই বা কি বোঝায়? যারা দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছর রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় ছিলেন , যাদের আমলে শত শত লোক খুন হয়েছে, নারীরা ধর্ষিত হয়েছে, সন্ত্রাসের শিকার হয়ে খালি হয়েছে বহু মায়ের কোল, তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না , বক্তব্য পদ্ম শিবিরের।
মুখ্যমন্ত্রী ডঃ মাণিক সাহার বক্তব্য
মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডঃ মাণিক সাহা এদিন কার জনসভায় উপস্থিত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এর নামে বিরোধী শিবিরের ভোট প্রার্থনার বিষয় কে কেন্দ্র করে রাজ্যের বাম জামানার ইতিহাস তুলে ধরেন। শুধু বাম জামানাই নয়, বাম কংগ্রেসের জোট আমলে রাজ্যে কত মানুষ অনায়াসে প্রাণ হারিয়েছেন সেই ইতিহাস ও টেনে তুলে আনেন তিনি। রাজ্যের সাধারণ ভোটারদের জাগ্রুক করার উদ্দেশ্যে বিগত বাম সরকার কে তুলোধোনা করতে পিছপা হননি মুখ্যমন্ত্রী।
বামেদের আইডিওলজি , শ্রমজীবীদের মাধ্যমে তাদের বিপ্লব করতে হবে রাজ্যে। শ্রমজীবীদের মাধ্যমে তারা সরকারে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ৩৫ বছরের রাজত্বে রাজ্যে কি ধরণের গণতন্ত্রের বাতাস হয়েছিল সেটা সকলের জানা আছে। সেটা গণতন্ত্র নয়, ভোগের বাতাস – এমনটা ও আখ্যা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
২০২৩ এর উপনির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন , বক্সনগরে এবং ধনপুরে যখন উপনির্বাচন হয় তখন উভয় কেন্দ্র থেকেই বিজেপি মনোনীত প্রার্থীরা জয়লাভ করেছেন। ব্যাপক ভোটের ব্যাবধানে তারা জিতেছেন। তিনি আরও বলেন, বক্সনগর বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি মনোনীত প্রার্থী বিল্লাল মিয়া জানেন পূর্বে বক্সনগরে কি ধরণের নির্বাচন হতো। বাম ঘাটি বলে পরিচিত বক্সনগর কেন্দ্রের সংখ্যালঘুদের বিপুল সমর্থনে ২০২৩ এর উপনির্বাচনে বিজেপি মনোনীত প্রার্থীর জয়লাভ ত্রিপুরার জন্যে ইতিহাস গড়ে দিয়েছে। মোদী সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছেছে বলেই সর্ব স্তরের মানুষ আজকের দিনে দাঁড়িয়ে সুষ্ঠু ভাবে ভোট প্রদান করছেন এবং পদ্ম চিহ্নে ভোট দিয়ে বিজেপি সরকার কে আরও শক্তিশালী করে তুলছেন। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ১৯শে এপ্রিল ত্রিপুরার পশ্চিম আসনে প্রার্থী বিপ্লব কুমার দেব কে ও বিপুল সংখ্যক ভোটে জয়যুক্ত করতে ভোটার রা এগিয়ে আসবেন বলেই প্রত্যাশা জাহির করলেন তিনি।
বিপ্লব কুমার দেব এর বক্তব্য
অপরদিকে বিজেপি মনোনীত প্রার্থী তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব , যাকে আবার মুক্তির কাণ্ডারি বলেও আখ্যায়িত করা হয় তিনি ও উনার বক্তব্যে বিরোধীদের কড়া দাওয়াই দিলেন। বিপ্লব দেব দাবী করেছেন যে দীর্ঘ ২৫ বছর কমিউনিস্টরা ত্রিপুরা তে যা বলেছে ঠিক তার উল্টো করেছে। একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যারা এক সময় দক্ষিন ত্রিপুরায় ১৪ জন কে খুন করেছেন তারাই এখন হাতে হাত মিলিয়ে ১৪ই অক্টোবর নাটক করে শহীদ মিনার বানিয়ে শহীদ দিবস পালন করে বেরাচ্ছেন। বিপ্লব দেব এদিন বামেদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা শ্রীদাম পাল সহ আরও ১৩ জন কে দক্ষিন ত্রিপুরায় খুন করেছে সেই কংগ্রেসিদের কে শহীদ মিনারের সামনে নিয়ে গিয়ে মাথা মুণ্ডন করে মাফ চাইতে বলা হোক , দক্ষিন ত্রিপুরা বাসীর কাছে মাফ চাইতে বলা হোক। “ আগে ত্রিপুরার মানুষের কাছে মাফ চাও, তারপর ভোট চাও “, বললেন বিপ্লব।
উপ নির্বাচনে রাম নগর বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী রতন দাস এর প্রসঙ্গ টেনে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গিমায় বলেন, রতন দাস উনার এক বক্তব্যে জানিয়েছেন উনার বাবা কংগ্রেস করতেন, তবে উনি সিপিআইএম এর সমর্থক। এই কথার প্রসঙ্গে বিপ্লবের উক্তি, “এতো দিনে উনার মনে পড়েছে উনার বাবা কংগ্রেস করতেন?” এছাড়া ও বেশ কিছু আক্রমণাত্মক ভাষায় এক প্রকার কটাক্ষ করতে শোনা গেল বিপ্লব কুমার দেব কে।
এর কিছুদিন আগেই ঝর্ণা দাস বৈদ্য কে উল্লেখ করে এক জনসভায় উনার স্বামী শ্রীদাম দাস এর হত্যাকাণ্ডের কথা মনে করিয়ে দেন বিপ্লব দেব। শ্রীদাম দাসের হত্যাকারী হিসেবে কংগ্রেস এর দিকে ইশারা করে ঝর্ণা দাস বৈদ্য কে পদ্ম চিহ্নে ভোট দেবার আহ্বান জানান তিনি। এদিন আবারো বাম – কংগ্রেস আমলে ঘটে যাওয়া হত্যা কাণ্ডের ইতিহাস টেনে বিরোধী শিবির কে তুলোধোনা করলেন তিনি। দক্ষিন ত্রিপুরায় তৎকালে প্রায় ৫৯ টি খুন হয়েছে, সেই খুন কাণ্ডের সাথে যারা জড়িত সেই খুনিদের মাফ করবে না ত্রিপুরার মানুষ।
বিরোধী শিবিরের নেতৃত্বদের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন রাজ্যের মানুষ তাদের ক্ষমা করবেন না। তাই ভোট প্রার্থনা করে কোনো লাভ নেই। এই রাজ্যের মানুষ আসন্ন নির্বাচনে পদ্ম চিহ্নে ভোট দিয়ে পুনরায় কেন্দ্রে মোদী সরকার কে প্রতিষ্ঠিত করবে বলে দৃঢ় প্রত্যয় করেন বিপ্লব কুমার দেব।
এদিনের জনসভায় জন জোয়ার দেখতে পেয়ে সার্বিক অর্থে বিলোনিয়ায় বিজেপি সরকারের গ্রহন যোগ্যতা ঠিক কতটা তা মোটামোটি হলেও আন্দাজ কড়া যাচ্ছে। তবে সার্বিক ফলাফল জানা যাবে ভোটের পরেই।
বলাবাহুল্য, বিজেপি নেতৃত্ব রা ও কোমর বেঁধে নেমে পড়েছেন ময়দানে। বিরোধীদের সমস্ত যুক্তি কে ব্যর্থ করে দিতে শক্তহাতে প্রমাণ গুছিয়ে রেখেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী শিবির নিজেদের এজেন্ডা পুনঃ স্তাপিত করতে পারবে কি না সেটাই দেখার বিষয়। এদিকে গণ দেবতাদের মধ্যে ভোট এর প্রাক্কালে রাজনীতি বিদদের বক্তৃতা গুলো বেশি প্রভাব বিস্তার করবে নাকি বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতার নিরিখে বিচার বিবেচনা করে ভোট প্রদান করবেন তারা সেটাও দেখার অপেক্ষায় গোটা রাজ্য তথা দেশের মানুষ।