খবরে প্রতিবাদ

খবরে প্রতিবাদ

Saturday, 11 October 2025 - 06:42 PM
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫ - ০৬:৪২ অপরাহ্ণ

Bisramganj Bus Incident : চলন্ত বাসে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে অগ্নিগর্ভ বিশ্রামগঞ্জ

Bisramganj Bus Incident
1 minute read

Bisramganj Bus Incident : ত্রিপুরার বিশ্রামগঞ্জ এলাকায় এক চলন্ত যাত্রীবাহী বাসে জনজাতি সম্প্রদায়ের এক তরুণীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ ঘিরে মঙ্গলবার রাতভর ছড়িয়ে পড়ে চরম উত্তেজনা। অভিযোগের ভিত্তিতে বাস থামানোর পর স্থানীয় জনতা এবং তরুণীর পরিবারের সদস্যদের তীব্র প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে শেষমেশ বাসে ব্যাপক ভাঙচুর, যাত্রীদের মারধর ও জনপদের মধ্যে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

জানা গেছে, জনজাতি সম্প্রদায়ের এক তরুণী—জেসিকা দেববর্মা, গুয়াহাটি থেকে আগরতলা হয়ে বাসে বিশ্রামগঞ্জের উদ্দেশ্যে যাত্রা করছিলেন। অভিযোগ, বাস চলাকালীন এক পুরুষ সহযাত্রী তাঁর সঙ্গে অশোভন আচরণ করে। তরুণী বাসের কন্টাক্টর কিংবা অন্য কোনো যাত্রীকে কিছু না জানিয়ে মোবাইলে সরাসরি তাঁর ভাইকে বিষয়টি জানান।

বাসটি যখন বিশ্রামগঞ্জ বাজারে পৌঁছায়, তখনও বাসে থাকা যাত্রীরা বা বাস স্টাফরা ঘটনার কিছু আঁচ পাননি। তরুণী যথারীতি নেমে যান এবং তাঁর লাগেজ নামিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর ঠিক পরেই পরিস্থিতি চরম রূপ নেয়।

বাস থামার পরপরই বিশ্রামগঞ্জ বাজার এলাকায় জমায়েত হতে থাকে একদল উগ্র যুবক, যাদের অধিকাংশই জনজাতি সম্প্রদায়ের। তারা প্রথমেই বাস কন্টাক্টর ও চালকের ওপর আক্রমণ চালায়। এরপর দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

বাসে ঢুকে প্রায় ২০–২৫ জন যুবক নির্বিচারে যাত্রীদের উপর হামলা চালায়—কে শিশু, কে মহিলা, কে বৃদ্ধ—তার কোনও বাছবিচার ছিল না। বাসে থাকা সাধারণ নিরীহ যাত্রীদের দফায় দফায় মারধর করা হয়।
বাসের জানালা, সিট, দরজা—সব কিছু ভাঙচুর করা হয়। আতঙ্কে অনেক যাত্রী চিৎকার করে ওঠেন, কেউ কেউ বাসের ভেতরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পুলিশি ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন: কোথায় ছিল প্রশাসন?
বাসে হামলার খবর পেয়ে বিশ্রামগঞ্জ থানার ওসি অজিত দেববর্মা সহ স্থানীয় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও তারা প্রথমদিকে কার্যত দর্শকের ভূমিকা পালন করে—এমনটাই অভিযোগ করেছেন বাস যাত্রী ও স্থানীয়রা।

তাদের অভিযোগ, পুলিশ যুবকদের হাতে যাত্রীদের মারধর হতে দেখেও হস্তক্ষেপ করেনি। বরং পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠলে বিশালগড়, মধুপুর ও টাকারজলা থানা থেকে অতিরিক্ত বাহিনী এবং টিএসআর জওয়ানদের পাঠানো হয়। শেষমেশ টিএসআর লাঠিচার্জ করে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে।

ঘটনার পরবর্তী পরিণতি: তদন্ত, চিকিৎসা ও আতঙ্কের ছায়া
আহত যাত্রীদের বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেই জানা গেছে। আক্রান্ত তরুণীকেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

তবে এখনো পর্যন্ত শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম, পরিচয় বা কোনো প্রমাণ মেলেনি। বাসের কন্টাক্টর এবং অন্যান্য যাত্রীরাও স্পষ্ট করে বলতে পারেননি, ঠিক কে এমন অশালীন আচরণ করেছে।এই নিয়ে আরও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। অনেকের মতে, ঘটনাটি হয়তো পূর্বপরিকল্পিত কোনও ষড়যন্ত্রের অংশ। আবার কেউ বলছেন, মিথ্যা অভিযোগের আড়ালে একটি সাম্প্রদায়িক সংঘাত জিইয়ে তোলার চক্রান্তও হতে পারে।

এই ঘটনায় বিশ্রামগঞ্জে নতুন করে জনজাতি বনাম বাঙালি উত্তেজনার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ঘটনার রেশ পড়ে বাঙালি অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায়। বাস যাত্রীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বাঙালি হওয়ার কারণেই তারা হামলার লক্ষ্যবস্তু হয়েছেন।
সামাজিক মাধ্যমে ঘটনার একতরফা প্রচার চালিয়ে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগও উঠেছে কিছু উগ্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে।

ঘটনার পর দ্রুত বিশ্রামগঞ্জে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী। আইজি (আইন–শৃঙ্খলা) ও সিপাহীজলার এসপি নিজে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ও তদন্তের নির্দেশ দেন। পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং শান্তি বজায় রাখার জন্য কড়া নজরদারি চলছে।নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও সামাজিক স্থিতি আজ প্রশ্নের মুখে।
এই ঘটনায় একদিকে যেমন উঠেছে নারী নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন, তেমনি আরেকদিকে উঠে এসেছে জনতার হাতে আইন তুলে নেওয়ার বিপজ্জনক প্রবণতা।

বাস যাত্রী ও সচেতন নাগরিকদের কণ্ঠে একটাই দাবি—আইন হাতে না তুলে প্রশাসনকে যথাযথ কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনের উচিত নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা।
বিশ্রামগঞ্জের এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—একটি অভিযোগের ভিত্তিতে কত দ্রুত ভেঙে পড়তে পারে সামাজিক ভারসাম্য, এবং কতটা প্রয়োজন দ্রুত বিচার ও নিরপেক্ষ প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের।

যদি ও মধ্যে রাতের দিকে বিশ্রামগঞ্জ এলাকায় জারি করা হয়েছে ১৬৩ ধারা।
বিশ্রামগঞ্জে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শুধু একটি শ্লীলতাহানির অভিযোগে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক দেউলিয়াপনার নগ্ন প্রমাণ। যেখানে একজন তরুণীর নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ, সেখানে রাজ্যের তথাকথিত ‘সুশাসন’ দাবি করা সরকার কার্যত নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ।

সরকারের মদতে জনজাতি ও বাঙালি জনগণের মধ্যে সুপরিকল্পিতভাবে বিভাজন তৈরি করার অপচেষ্টা দীর্ঘদিন ধরেই লক্ষ করা যাচ্ছে। আর এই ঘটনার পর, একশ্রেণির রাজনৈতিক গোষ্ঠী ও স্বার্থান্বেষীরা সুযোগ বুঝে পুরো ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক রূপ দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে।
প্রশাসন যেভাবে প্রথমে নিষ্ক্রিয় থেকেছে এবং পরে পুলিশ বাহিনী ‘দেখে ও শুনেও না শোনার’ ভান করেছে, তা প্রমাণ করে—এখানে আইনের শাসনের বদলে চলছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অনৈতিক ক্ষমতা প্রয়োগ।

এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত না হলে, ভবিষ্যতে এই ধরনের অভিযোগকে ব্যবহার করে আরও বড় রাজনৈতিক মেরুকরণ ঘটানো হতে পারে। এবং সেক্ষেত্রে ভুক্তভোগী হবে সাধারণ মানুষ—তরুণী, যাত্রী, পরিবার এবং সামগ্রিক সমাজ।
জনগণ আজ একটাই প্রশ্ন করছে—‘ রাজনৈতিক দলের ছায়া কী অপরাধীদের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়াবে? নাকি সত্যিই কেউ এই রাষ্ট্রে বিচার পাবে?’যে প্রশ্নের জবাব এখনও অন্ধকারেই রয়ে গেছে।

For All Latest Updates

ভিডিও