Bishalgarh Road News : সরকারের উন্নয়নমুখী উদ্যোগকে কুক্ষিগত করে ফেলছে এক শ্রেণির অসাধু ঠিকাদার ও প্রশাসনের গাফিলতি। বিশালগড় নিউ মার্কেট থেকে লক্ষ্মীবিল হয়ে নবশান্তিগঞ্জ বাজার পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের কাজ যেন দুর্নীতির এক জ্বলন্ত উদাহরণ। প্রায় চার কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও, কয়েকদিনের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এর নিম্নমান ও অনিয়মের ছবি।
সরকার দাবি করেছিল— বিশালগড় অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করতে এবার প্রকৃত অর্থে টেকসই রাস্তাঘাট তৈরি হবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, সরকারি বরাদ্দের অর্থ যেন গিলে নিচ্ছে একদল ঠিকাদার আর প্রশাসনিক উদাসীনতা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, অফিসটিলার ঠিকাদার জহর সুর চৌধুরী-র হাতে দেওয়া এই কাজ শুরু থেকেই প্রশ্নবিদ্ধ।
রাস্তা তৈরির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উঠে যাচ্ছে বিটুমিনের স্তর, কোথাও কোথাও দেখা দিচ্ছে বড় গর্ত। স্থানীয়দের কথায়, “২৪ ঘণ্টা টিকছে না রাস্তার আবরণ, তাহলে এত কোটি টাকা গেল কোথায়?” কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন, রাস্তা তৈরিতে বিটুমিনের পরিমাণ অত্যন্ত কম , এমনকি কিছু জায়গায় বিটুমিন ছাড়াই কাজ চলছে।
আরও বিস্ময়ের বিষয়, এই সবকিছুই হচ্ছে পূর্ত দপ্তরের কর্মীদের সামনেই । স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দপ্তরের জুনিয়ার ইঞ্জিনিয়ার পিযুষ মালাকার নিজে উপস্থিত থেকে এই নিম্নমানের কাজ ‘তদারক’ করছেন, কিন্তু কোনো আপত্তি তুলছেন না। বরং স্থানীয়রা বলছেন, ঠিকাদার ও কিছু কর্মকর্তার মধ্যে ‘বোঝাপড়া’ এমন পর্যায়ের যে, সরকারি টাকার অপচয় যেন নিত্যদিনের রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই অনিয়মের প্রতিবাদে এলাকাবাসী রাস্তা নির্মাণে বাধা দেয়। তাদের দাবি— “আমরা কর দিই, উন্নয়ন চাই। কিন্তু সরকারের টাকা দিয়ে যদি এমন জোড়াতালি দেওয়া রাস্তা বানানো হয়, তাহলে জনগণের স্বার্থ কোথায়?”
এর আগেও লকডাউন বাজার থেকে লক্ষ্মীবিল পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের কাজ নিয়েও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় স্থানীয় বিধায়কের হস্তক্ষেপে পুনরায় কাজ শুরু হলেও, কয়েক মাসের মধ্যে সেই রাস্তার অবস্থাও আগের মতোই বেহাল হয়ে যায়। এখন বিশালগড়-নবশান্তিগঞ্জ সড়কেও একই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি দেখতে পাচ্ছে মানুষ।
প্রশ্ন উঠছে— এত অভিযোগ, এত অনিয়ম চোখের সামনে ঘটলেও কেন প্রশাসন নীরব? স্থানীয়দের একাংশের মতে, সরকার চায় উন্নয়ন, কিন্তু মাঠপর্যায়ে যারা সেই উন্নয়ন বাস্তবায়ন করে, তাদের স্বচ্ছতার অভাবেই ‘উন্নয়ন’ আজ দুর্নীতির সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পূর্ত দপ্তরের কর্মকর্তাদের কেউই এই বিষয়ে সরাসরি মুখ খুলতে রাজি নন। কেউ কেউ ‘তদন্ত চলছে’ বলে দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন। অথচ বাস্তবতা হল, সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রকল্প মাঠে নামার পরও মান নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো নজরদারি নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, “দপ্তরের লোকজন কাজ শুরু হতেই আসে, ছবি তোলে, তারপর আর দেখা যায় না। ঠিকাদাররা তখন যা ইচ্ছে তাই করে।
এই চিত্র শুধু বিশালগড়ে নয়, রাজ্যের নানা জায়গায় একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিটি ধাপ যেন এখন রাজনীতির আশীর্বাদে দুর্নীতির মঞ্চে পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন একটাই— সরকারের সদিচ্ছা থাকলে কি এই দুর্নীতি সম্ভব? জনগণের টাকা যারা আত্মসাৎ করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকার কেন কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
“সরকার উন্নয়নের কথা বলে ভোট নেয়, কিন্তু সেই উন্নয়ন শেষ পর্যন্ত কাগজেই থেকে যায়। মাঠে নেমে কাজের মান দেখলে চোখ খুলে যাবে। সরকারি দফতরগুলোতে এখন কাজ নয়, কমিশনই মুখ্য।”
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারদের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। ফলে প্রশাসন থেকেও কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। সরকারি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা না থাকায় ‘ঘনিষ্ঠ ঠিকাদার’-রাই পাচ্ছে কাজের বরাত, আর তার ফল— রাস্তা, সেতু, ভবন, সবকিছুতেই নিম্নমানের কাজ ও সরকারি অর্থের অপচয়।
বিশালগড়ের এই রাস্তাজনগণের ঘামঝরা টাকায় নির্মিত প্রকল্পের প্রতিটি ইট এখন যেন প্রশ্ন তুলছে
“সরকার কার জন্য কাজ করছে— জনগণের জন্য, না কি ঠিকাদারদের পকেট ভরানোর জন্য?” সংস্কারের ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হলো— সরকার উন্নয়নের জন্য টাকা বরাদ্দ করে, কিন্তু সেই উন্নয়ন বাস্তবে টিকছে না প্রশাসনিক দুর্নীতির ভারে।



